Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঘুম থেকে উঠে ছেলে দেখল, তিলখেতে বাবা-মায়ের দেহ

ফোনে মায়ের কথা বলা হয়ে গেলে পাশে শুয়ে থাকা ছোট ছেলে সন্তু আবদার করেছিল, মা কোলে নাও। খানিকটা ঝাঁঝিয়ে উঠে মা বলেন, আমি মরে গেলে কে তোকে কোলে নেবে? তারপর এ পাশ ও পাশ করতে করতে চোখ লেগে এসেছিল সন্তুর। সকালে উঠে সে দেখতে পায়, বাড়ি থেকে খানিক দূরে মায়ের মৃতদেহ পড়ে আছে। বাবার নিথর দেহও পড়ে তার পাশে। মঙ্গলবার সকালে এ ভাবেই এক ঝটকায় অনাথ হয়ে পড়ল সন্তু আর তার কয়েক বছরের বড় দাদা সুমন।

বাঁধ না মানা জল বড় ছেলে সুমনের।

বাঁধ না মানা জল বড় ছেলে সুমনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোপালনগর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

ফোনে মায়ের কথা বলা হয়ে গেলে পাশে শুয়ে থাকা ছোট ছেলে সন্তু আবদার করেছিল, মা কোলে নাও। খানিকটা ঝাঁঝিয়ে উঠে মা বলেন, আমি মরে গেলে কে তোকে কোলে নেবে? তারপর এ পাশ ও পাশ করতে করতে চোখ লেগে এসেছিল সন্তুর। সকালে উঠে সে দেখতে পায়, বাড়ি থেকে খানিক দূরে মায়ের মৃতদেহ পড়ে আছে। বাবার নিথর দেহও পড়ে তার পাশে। মঙ্গলবার সকালে এ ভাবেই এক ঝটকায় অনাথ হয়ে পড়ল সন্তু আর তার কয়েক বছরের বড় দাদা সুমন।

ঘটনাটি গোপালনগর থানার গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের স্বামীজি কলোনি এলাকার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সুবোধ (৩৬) ও সুভাষিণী চৌধুরী (৩০)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সুভাষিণীদেবীর বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে এই কাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। সুবোধবাবুর ভাই স্বপনের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তের জন্য। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। তবে দ্রুত খুনের কিনারা করা হবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবোধবাবু বাড়িতেই একটি মুদির দোকান চালাতেন। চাষবাসও করতেন। বড় ছেলে সুমন পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। ছোট সন্তু তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। সোমবার সুমন তার কাকা স্বপনের সঙ্গে নদিয়ার মদনপুরে বেড়াতে গিয়েছিল। সন্তু এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘রাত ৮টার সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তার আগে বাবার মোবাইলে মায়ের কাছে একটি ফোন এসেছিল। মাকে মেরে ফেলার কথা বলেছিল সে। কয়েক দিন আগে মায়ের ফোন বাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায়। তাই বাবার ফোনটি মায়ের কাছে ছিল।” মা ফোন রাখার পরে তার সঙ্গে বাকি কথোপকথনের কথা জানিয়েছে সে নিজেই। কাঁদতে কাঁদতে বলে, “মা কাল ও কথা বলল। আজ থেকে সত্যি আর কখনও কোলে নেবে না আমাকে।”

চৌধুরী দম্পতি।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাত ৯টা নাগাদ সুবোধবাবু দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। মঙ্গলবার ভোরে চাষিরা দেখতে পান, ওই দম্পতির দেহ বাড়ি থেকে আড়াইশো মিটার দূরে একটি তিল খেতে পড়ে রয়েছে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। দ্রুত পুলিশ এলেও মৃতদেহ তুলতে বাধা দেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা দাবি করেন, পুলিশ কুকুর আনতে হবে। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবিও ওঠে। ঘটনাস্থলে আসেন, ওসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এসডিপিও মীর সাহিদুল আলি, স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অণিমা মণ্ডল। বিশাল পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ছিল র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্সও। পরে অবশ্য সকলের মধ্যস্থতায় দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খেতের মধ্যে পাশাপাশি দু’টি দেহ পড়ে আছে। ধস্তাধস্তির চিহ্ন স্পষ্ট। সুভাষিণীদেবীর গলায় লুঙ্গির ফাঁস জড়ানো ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সুবোধবাবুর গলাতেও ফাঁসের চিহ্ন ছিল। সুবোধবাবুর পরনে কিছু ছিল না। গ্রামের লোক গামছা দিয়ে গা ঢাকেন। ঘটনাস্থলে কিছুটা ভাজা-ছোলা পড়েছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, দু’জনকেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পরিচিত কেউ বা কারা এই ঘটনায় জড়িত।

গোটা গ্রাম এ দিন ভিড় করেছিল সুবোধবাবুর বাড়িতে। বেড়া- টিনের বাড়ির উঠোনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আত্মীয়েরা। সুবোধবাবুর ভাই বলেন, “স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বৌদিকে মিশতে দেখা যেত। ফোনেও কথা হত। যা নিয়ে অশান্তি ছিল।” অণিমাদেবী বলেন, ‘‘এর আগেও ওই মহিলার বিবাহ বর্হিভুত সর্ম্পক নিয়ে সালিশি হয়েছিল।” কৃষ্ণপদ সরকার নাম এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘সুবোধের মতো ভাল ছেলে গ্রামে আর ছিল না। ওর কোনও শত্রু থাকতে পারে, ভাবতেই পারছি না।’’ পঞ্চায়েতের তরফে চৌধুরী দম্পতির দুই সন্তানের লেখাপড়া এবং অন্য দায়িত্ব নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন বিধায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suicide gopal nagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE