Advertisement
E-Paper

জয়পুরে সেতু তৈরির কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নিল জেলা পরিষদ

আট বছর ধরে গ্রামবাসীদের প্রতীক্ষাই সার হল। হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত জয়পুরের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের কুলিয়াঘাটে সেতু তৈরি থেকে হাত গুটিয়ে নিল জেলা পরিষদ। সেতু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা এবং পরিকাঠামো না থাকার জন্যই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা পরিষদ। পরিবর্তে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরকে প্রস্তাবিত সেতুটি তৈরির জন্য তাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০১:১২

আট বছর ধরে গ্রামবাসীদের প্রতীক্ষাই সার হল। হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত জয়পুরের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েতের কুলিয়াঘাটে সেতু তৈরি থেকে হাত গুটিয়ে নিল জেলা পরিষদ।

সেতু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা এবং পরিকাঠামো না থাকার জন্যই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে জেলা পরিষদ। পরিবর্তে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরকে প্রস্তাবিত সেতুটি তৈরির জন্য তাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।

জয়পুরের ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত জেলার ‘দ্বীপ’ এলাকা বলে পরিচিত। মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ নদীঘেরা এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকা জেলার বাকি স্থলভাগের থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানকার বাসিন্দাদের শহরে আসতে ভরসা কুলিয়াঘাট এবং গায়েনতলা ঘাটের খেয়া। পরিবহণের এই সমস্যা অথর্ব করে দিয়েছে দ্বীপ এলাকার অনেক কিছু। বিশ্বব্যাঙ্কের একটি প্রকল্পে ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান টাকা পেলেও এখানে এখনও তৈরি হয়নি কংক্রিটের রাস্তা। কারণ, ইমারতি দ্রব্য আনার অসুবিধা। পরিবহণ সমস্যার কারণে ভাটোরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে চান না কোনও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে, স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। সমস্যার সমাধান করতেই কুলিয়ায় পাকা সেতু তৈরির পরিকল্পনা করা হয়।

২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সেতুর শিলান্যাস করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। বামফ্রন্ট পরিচালিত জেলা পরিষদের হাতেই সেই সময় সেতু তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা আশায় বুক বাঁধেন। এর পরে গঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে। রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। জেলা পরিষদ থেকেও বিদায় নিয়েছে বামফ্রন্ট। কিন্তু সেতুর কাজ আর শুরু হয়নি। সেতুটি তৈরি হলে সমস্যা অনেকটাই কাটত বলে বাসিন্দারা জানান। সেতু থেকে সরাসরি এই দ্বীপ এলাকার সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ সম্ভব হত। সহজে ঢুকতে পারত লরি, ট্রাক, গাড়ি। এলাকার চেহারাই বদলে যেত বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কেন হল না সেতুর কাজ?

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, সেতু তৈরির কথা ছিল গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ) প্রকল্পের টাকায়। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মাধ্যমে এই প্রকল্পে সেতু তৈরির পুরো টাকা ঋণ হিসাবে জেলা পরিষদকে দেওয়ার কথা ছিল নাবার্ড-এর। প্রথমে নাবার্ড ছ’কোটি টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু তাতে সেতুটি তৈরি করতে কোনও ঠিকাদার সংস্থা রাজি হয়নি। ফলে, সংশোধিত পরিকল্পনা করে জেলা পরিষদ। সেতু তৈরির খরচ বাড়িয়ে করা হয় ১৩ কোটি টাকায়। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে সংশোধিত পরিকল্পনাটি যায় নাবার্ড-এর কাছে। কিন্তু তারা দিতে রাজি হয় মাত্র ৯ কোটি টাকা। এই টাকাতেও কোনও ঠিকা সংস্থা কাজ করতে রাজি হয়নি। এর পরে জেলা পরিষদে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তারা সেতুটির জন্য নতুন করে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে। সেই রিপোর্টে দেখা যায়, সেতুটি তৈরি করতে খরচ হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকা। এর পরেই সেতুটি তৈরির ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জেলা পরিষদ সেতু তৈরির দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ায় কবে এই কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “ডিপিআর দেখার পরে এত বিপুল টাকা বা পরিকাঠামো কিছুই আমাদের নেই। ফলে, সময় নষ্ট না-করে এই সেতু তৈরির দায়িত্ব আমরা পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত কাজটি করার জন্য যথাবিহিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ওই দফতরকে অনুরোধ জানাব।” একই সঙ্গে বাম সরকারের আমলে সেতু তৈরির দায়িত্ব যে ভাবে জেলা পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তার সমালোচনা করে অজয়বাবু বলেন, “সেতুটি তৈরির কাজ জেলা পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়, এ কথা জেনেও রাজনৈতিক চমক দেখানোর জন্যই বামফ্রন্ট আমলে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”

বাম পরিচালিত জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সেতু তৈরির দায়িত্ব পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “আমরাও এই চেষ্টা করেছিলাম। নাবার্ড আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল টাকা দিয়ে দেবে। তাই আমরা আর এগোইনি।”

nurul absar joypur bridge kuliyaghat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy