Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গণপিটুনি যুবককে

রিভলভার হাতে নিজের স্ত্রীকে হুমকি দিতে এসেছিল এক যুবক। তাতে অবশ্য গুলিই ছিল না। এ দিকে, স্ত্রী তখন স্বামীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন বাদুড়িয়ার এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে। রটে যায়, ওই নেতাকেই খুন করতে এসেছে বহিরাগত এক যুবক। নিমেষে বাড়ি ঘিরে ফেলে এলাকার লোকজন। ঘরের দরজা বন্ধ করে পুলিশকে খবর দেন গৃহকর্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০১:১৪
ধৃত বাবলুকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: নির্মল বসু।

ধৃত বাবলুকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: নির্মল বসু।

রিভলভার হাতে নিজের স্ত্রীকে হুমকি দিতে এসেছিল এক যুবক। তাতে অবশ্য গুলিই ছিল না। এ দিকে, স্ত্রী তখন স্বামীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন বাদুড়িয়ার এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে। রটে যায়, ওই নেতাকেই খুন করতে এসেছে বহিরাগত এক যুবক। নিমেষে বাড়ি ঘিরে ফেলে এলাকার লোকজন। ঘরের দরজা বন্ধ করে পুলিশকে খবর দেন গৃহকর্তা। কিন্তু পুলিশ এসেও সহজে উদ্ধার করতে পারেনি ওই যুবককে। তার উপরে চড়াও হয়ে বেধড়ক মারধর করে জনতা। কোনওক্রমে তাকে বাড়ি থেকে বের করে থানায় এনে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র। মঙ্গলবার ঘটনাস্থল বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাট।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের মেরুদণ্ডী উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বাবলু সর্দারের সঙ্গে বছর আটেক আগে বিয়ে হয়েছিল স্বরূপনগরের শাঁড়াপুল বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা রুবিয়া বিবির। তাঁদের একটি সাত বছরের কন্যাসন্তানও আছে। অভিযোগ, বাবলু পাচারের কাজে জড়িত। মাস দু’য়েক আগে নিজের স্ত্রীকেও মুম্বইয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রির চেষ্টা করেছিল সে। কোনও ক্রমে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন ওই তরুণী। ওঠেন বাপের বাড়িতে। ওই যুবক মেয়েকে নিয়ে মুম্বই থেকে ফিরে এসেছিল। এলাকায় ফিরে নিজের মেয়েকে কাছে পেতে চেয়েছিলেন রুবিয়া। কিন্তু মেয়েকে কাছ-ছাড়া করতে রাজি ছিল না বাবলু। স্বামীর কাছে এই নিয়ে কাকুতি-মিনতি করেও লাভ হয়নি। অভিযোগ, থানা-পুলিশে গেলে তাঁকে খুনের হুমকি দেয় বাবলু।

এই পরিস্থিতিতে মেয়েকে ফিরে পেতে বাদুড়িয়ার তৃণমূল নেতা সাহেব আলি সর্দারের দ্বারস্থ হন তিনি। সাহেব আবার রুবিয়ার নিকট আত্মীয়। মঙ্গলবার রুবিয়া দুপুরে গিয়েছিলেন ওই বাড়িতেই। সেই খবর পেয়ে এক সঙ্গীকে নিয়ে সাহেব আলির বাড়িতে হাজির হয় তাঁর স্বামী। সঙ্গীকে বাইরে দাঁড় করিয়ে বাবলু ঢুকে পড়ে ঘরে। তত ক্ষণে অবশ্য বিপদ আঁচ করে রুবিয়াকে পিছনের দরজা দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছেন সাহেবরা। বাবলু ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে সাহেবের দিকে রিভলভার তাক করে। সাহেবের স্ত্রী ফেরদৌসি দরজা বন্ধ করে দেন। ঘরে আটকে পড়ে বাবলু। তত ক্ষণে তার সঙ্গী মোটর বাইক নিয়ে পিঠটান দিয়েছে।

এই অবস্থায় রটে যায়, সাহেবকে খুন করতে বহিরাগত এক যুবক অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়েছে। বাইরে তখন কয়েকশো লোক জমে গিয়েছে। বাবলুকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে বলে শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামিচি। খবর পেয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই কাটিয়াহাট ফাঁড়ি থেকে হাজির হন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারলে তো হয়! উত্তেজিত জনতা দাবি করতে থাকে, যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। নেতার উপরে হামলার চেষ্টায় উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে এখনই। তাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, সাহেবের উপরে হামলা চালাতে আসেনি বাবলু। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

ইতিমধ্যে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাদুড়িয়া থানা থেকে বিশাল বাহিনী হাজির হয় ঘটনাস্থলে। পুলিশ ভিতরে ঢুকে বালুকে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি দিয়ে তাদের হাত থেকে বাবলুকে ছিনিয়ে নেয় জনতা। পুলিশের সামনেই শুরু হয় গণধোলাই। পরে পুলিশ কোনও মতে ওই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করে থানায় আনে। পরে গ্রেফতার করে তাকে পাঠানো হয় রুদ্রপুর হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, বাবলুর কাছে থেকে একটি রিভলভার উদ্ধার হলেও তাতে গুলি ছিল না।

বাবলুর বক্তব্য, “আমি সীমান্তে মাছের কারবার করি। স্ত্রীকে পাচার চেষ্টা করিনি। সাংসারিক গণ্ডগোলের জেরেই ও বাড়ি ছেড়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি আমার মেয়েকে ছাড়া বাঁচবো না।” তার দাবি, সাহেবকে বলা হয়েছিল, বিষয়টি মিটমাট করে দিতে। কিন্তু তা না করে ওরা থানায় গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার চেষ্টা করছিল বলে জানতে পারি। তাই মাথা গরম করে চলে এসেছিলাম।”

রুবিয়া অবশ্য বলেন, “বিয়ের পর থেকে নির্যাতন শুরু হয়েছিল। আমাকে বিক্রিরও চেষ্টা করেছিল ও। কোনও মতে পালিয়ে বাঁচি। মেয়েকে ওর কাছে রাখার সাহস পাই না। হয় তো ওরও ক্ষতি করে দিতে পারে।”

বাদুড়িয়া ব্লক তৃণমূল নেতা সাহেবের বক্তব্য, “সাংসারিক সমস্যা মেটাতে ওরা আমাকে বলেছিল। কিন্তু বাবলু এমন কাণ্ড করে বসবে ভাবিনি।”

baduria tmc leader attack bablu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy