Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

তৃতীয় রাউন্ডেই সংশয় কাটল, হাসলেন কল্যাণ

প্রথম দু’রাউন্ডে দুশ্চিন্তা কাটেনি। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেতেই পরিচিত সাংবাদিকদের আঙুলে ‘ভি’-চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনের শেষে কয়েকশো বার আঙুলে একই মুদ্রা দেখাতে হল তাঁকে।

জেতার পর। ছবি: দীপঙ্কর দে।

জেতার পর। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

প্রথম দু’রাউন্ডে দুশ্চিন্তা কাটেনি। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেতেই পরিচিত সাংবাদিকদের আঙুলে ‘ভি’-চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনের শেষে কয়েকশো বার আঙুলে একই মুদ্রা দেখাতে হল তাঁকে।

নিজের ভাবমূর্তি এবং প্রবল তিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরে শ্রীরামপুর কেন্দ্রে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হলেন তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ। আগের বারের চেয়েও বাড়িয়ে নিলেন জয়ের ব্যবধান। ২০০৯-এ জিতেছিলেন এক লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটে। এ বারের ব্যবধান দেড় লক্ষেরও বেশি।

ভোটের অনেক আগে থেকেই দলের ভিতরে-বাইরে কথায় কথায় কল্যাণের মেজাজ হারানো নিয়ে ফিসফাস ছিল। দলীয় নেতৃত্বও কিছুটা দোলাচলে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত কল্যাণ জিততে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নে। সেই দোলাচল আরও বাড়িয়ে দেয় বিজেপি প্রার্থী হিসেবে সুরকার বাপ্পি লাহিড়ীকে প্রার্থী করায় এবং ভোটের মুখে বাপ্পির সমর্থনে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী শ্রীরামপুরে প্রচারে আসায়।

মুখে স্বীকার না করলেও তিনি যে চাপে ছিলেন ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা অস্বীকার করেননি কল্যাণ। এ দিন জয়ের পরে অবশ্য বলেন, “এটা হওয়ারই ছিল। মানুষ জানেন, গত বার আমি কেমন কাজ করেছি। দলনেত্রীর প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। তাঁর উন্নয়নের জোয়ারেই জিতলাম। অপপ্রচারের হার হল।”

দুপুর দু’টো থেকেই শ্রীরামপুর কলেজে গণনাকেন্দ্রের সামনের এলাকা তৃণমূল সমর্থকদের তাসা, ব্যাঞ্জোর আওয়াজে ছয়লাপ হয়ে যায়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কল্যাণের জয়ের আনন্দে নাচতে থাকেন। বিজয়-মিছিলের জন্য তৈরি হয়ে যায় হুডখোলা জিপ।

এর মধ্যে অবশ্য সারাদিনে দেখা মেলেনি বিজেপি-র তারকা প্রার্থীর। প্রায় এক মাসের প্রচার-পর্বে যাঁকে দেখতে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমিয়েছেন, যাঁর গাড়িতে উড়ে এসেছে ফুল, যাঁর জন্য বাড়ির বারান্দা বা ছাদেও মানুষ উঠে পড়েছিলেন ভোটের লড়াইয়ে তাঁকে থামতে হল ২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৫টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে (গতবার বিজেপি পেয়েছিল ৩৮ হাজার ভোট)।

এ জন্য তৃণমূূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগকেই হাতিয়ার করেছেন বাপ্পি। তিনি বলেন, “আমি বাংলার ছেলে। জিতে এখানকার মানুষের জন্য কিছু করব ভেবেছিলাম। এখানকার মানুষের প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। কিন্তু ভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য সেই সুযোগ হারালাম।”

ঠিক এই অভিযোগই তোলে তৃণমূলের অন্য দুই প্রতিপক্ষ সিপিএম এবং কংগ্রেস। গত বারের মতো এ বারও এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিপিএম। তবে, কমেছে ভোট। গত বার এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র মিলিয়ে সিপিএম পেয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ ভোট। এ বার প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায় পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৩৮টি ভোট। এ দিন গণনার শুরুতে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা ভেবেছিলেন তৃণমূল এবং বিজেপি-র ভোট কাটাকাটিতে তীর্থঙ্করের হয়তো শিকে ছিঁড়বে। কিন্তু বেলা যত গড়িয়েছে, ম্রিয়মাণ হয়েছে তাঁদের সেই আশা। তীর্থঙ্করের কথায়, “সন্ত্রাস করে ওরা (তৃণমূল) ভোটে জিতল। মানুষ আমাদের পাশেই রয়েছেন।”

মাত্র ৮৬ হাজার ৫৭টি ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে দৌড় শেষ করে কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নানও সন্ত্রাসের একই অভিযোগ তোলেন। দিনের শেষে যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে আইনজীবী প্রার্থী কল্যাণের প্রশ্ন, “সন্ত্রাস করে কি পর পর দু’বার জেতা যায়?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalyan bandopadhay goutam bandopadhay sreerampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE