Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ধর্ষিতার বাড়ি গিয়ে আক্রান্ত বিজেপি প্রার্থী

সন্দেশখালিতে ধর্ষিতা আদিবাসী কিশোরীকে দেখতে গিয়ে বুধবার আক্রান্ত হলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। ঝুপখালি গ্রামে কিশোরীর বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে এক দল যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি করে। তৃণমূলের লোকজনই তাঁর উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন শমীকবাবু।

দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৪:০৭
Share: Save:

সন্দেশখালিতে ধর্ষিতা আদিবাসী কিশোরীকে দেখতে গিয়ে বুধবার আক্রান্ত হলেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। ঝুপখালি গ্রামে কিশোরীর বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে এক দল যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি করে। তৃণমূলের লোকজনই তাঁর উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন শমীকবাবু।

আক্রান্ত হওয়ার পরে সাংবাদিকদের গাড়িতে চড়ে শমীকবাবু এলাকা ছাড়ার পরে বিজেপি কর্মী-সমর্থক এবং আদিবাসীদের একটি সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। তার আগে বোমা পড়ে এবং গুলিও চলে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। তবে, তাতে কেউ হতাহত হননি। সংঘর্ষে গুরুতর জখম হন ১৫ জন। শমীকবাবুর উপরে হামলা বা গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।

ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা করে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী বলেন, “জঙ্গলের রাজত্ব তৈরি হয়েছে রাজ্যে। ডাকাতি, লুঠপাট, মারধর এবং কিশোরীকে ধর্ষণের পরেও পুলিশ তৃণমূলকে আড়াল করতে চাইছে। ভোটের আগে এলাকার মানুষকে সন্ত্রস্ত করতে তৃণমূল গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে।” এ জন্য তিনি পুলিশ সুপার এবং নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন।

অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পরিকল্পনা করেই শমীকবাবুরা আরএসএস কর্মীদের নিয়ে গ্রামে যান গণ্ডগোল বাধিয়ে ফায়দা তুলতে। ওরা আমাদের কয়েক জনকে মারধর করায় মানুষ প্রতিবাদ করেছেন।” ধর্ষণের ঘটনাকে মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবুও।

ঝুপখালি গ্রামের ওই কিশোরীকে বসিরহাট হাসপাতালে থেকে পরে বারাসত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করা হবে।”

ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এ দিন সকালে ওই কিশোরীর বাড়ির সামনে জড়ো হন কয়েকশো আদিবাসী। তাঁদের একটি সংগঠন, ‘আদিবাসী জনকল্যাণ সমিতি’র রাজ্য সম্পাদক সুকুমার সর্দারের নেতৃত্বে এলাকায় মিছিলও হয়। পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন সুকুমারবাবু। এ সবের মধ্যেই বেশ কিছু বিজেপি কর্মী পতাকা নিয়ে সেখানে হাজির হন। গ্রামবাসীদের কয়েক জন ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। তার মধ্যেই সেখানে গিয়ে পৌঁছন শমীকবাবু। মেয়ের চিকিৎসার জন্য কিশোরীর বাবা-মা এ দিন বসিরহাট হাসপাতালে গিয়েছিলেন। শমীকবাবু কিশোরীর দাদু এবং কাকা-কাকিমার সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময়ে সুশান্ত রায় নামে এক গ্রামবাসী চেঁচাতে শুরু করেন, ‘গণধর্ষণ এবং ডাকাতি নিয়ে রাজনীতি সহ্য করা হবে না’।

এ কথা শোনামাত্র এক দল আদিবাসী সুশান্তবাবুকে ‘তৃণমূলের লোক’ বলে তাঁর উপরে চড়াও হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে প্রচুর তৃণমূূল কর্মী জড়ো হয়ে যান বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শমীকবাবু সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর দিকে ধেয়ে আসে এক দল লোক। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে কোনও রকমে সাংবাদিকদের গাড়িতে তিনি এলাকা ছাড়েন। আটকে পড়েন বেশ কিছু বিজেপি সমর্থক এবং সুকুমারবাবু। তৃণমূল কর্মীরা বোমা ও গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় মারামারি। কয়েকটি বাড়িতে লুঠপাট-ভাঙচুরও চলে। আহতদের কয়েক জনকে কলকাতার হাসপাতালে, বাকিদের বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিকেল ওই বাড়িতে যান বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিশ আলিও।

আদিবাসী নেতা সুকুমারবাবু বলেন, “তৃণমূলের ছেলেরা বোমা-গুলি ছুড়লে আদিবাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ওরা রড মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। টাকাও ছিনতাই করেছে। পুলিশের সামনেই এ সব ঘটে।”

ওই ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরেই পুলিশ তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওসমান মোল্লা নামে এক দাগী দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। বুধবার ধরা হয় আকবর মোল্লা এবং হরিপদ দাস নামে আরও দু’জনকে। এ দিনই ওসমানকে বসিরহাট এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ ওসমানকে নিয়ে টিআই (শনাক্তকরণ) প্যারেড এবং কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার আবেদন জানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nirmal basu sandeshkhali rape case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE