Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তার অভাব, জল-আলোর সমস্যায় তিতিবিরক্ত নগেন্দ্রবাজার

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তথা রাজ্যের বৃহত্তম মাছের বাজার। অথচ প্রায় ৪০ বছরের পুরনো ডায়মন্ড হারবারের মাছের আড়ত নগেন্দ্রবাজারের পরিকাঠামো এতটাই বেহাল যে তা বলায় নয়। ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বহু পুরনো এই মাছের বাজারে শুধু পরিতাঠামো নয়, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত আড়তদারেরা। পরিকাঠামোর উন্নতি থেকে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন সকলের দ্বারস্থ হলেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ আড়তদারদের।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০২:১০
এ ভাবেই জমা হয় বাজারের নোংরা জল।—নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই জমা হয় বাজারের নোংরা জল।—নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তথা রাজ্যের বৃহত্তম মাছের বাজার। অথচ প্রায় ৪০ বছরের পুরনো ডায়মন্ড হারবারের মাছের আড়ত নগেন্দ্রবাজারের পরিকাঠামো এতটাই বেহাল যে তা বলায় নয়। ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বহু পুরনো এই মাছের বাজারে শুধু পরিতাঠামো নয়, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত আড়তদারেরা। পরিকাঠামোর উন্নতি থেকে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য পুর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন সকলের দ্বারস্থ হলেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ আড়তদারদের।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নগেন্দ্রবাজারে মাছের আড়ত প্রায় ৪০ বছরের পুরনো। তার আগে ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাট মোড়ে মাছের পাইকারি বাজার বসত। বর্তমানে বাজারের মালিকানা রয়েছে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার হাতে। বাজারে ভাড়াটে হিসাবে রয়েছেন আড়তদারেরা। মোট ৬০টি মাছের আড়ত রয়েছে। আড়তগুলিতে রায়দিঘি, বকখালি, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ আসে। মরসুমে অর্থাৎ জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া প্রায় চার হাজার ট্রলারের মাছ এই বাজারে বিক্রি হয়। দেশের অন্যান্য রাজা ছাড়াও এই মাছ কলকাতা বন্দর থেকে জাহাজে চিন, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং-সহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। মরসুমে প্রতিদিন বাজারে ৩০০ টনের মতো মাছ আসে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। বাজারে আড়তদার থেকে শ্রমিক প্রায় চার হাজার লোক মাছ ব্যবসায়ে যুক্ত। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড়তে লেনদেন চলে।

বহু পুরনো এবং বৃহত্তম মাছের বাজার হলেও অভাব রয়েছে রাস্তা, পানীয় জল, শৌচাগার, আলোর। এ সব পরিষেবার জন্য পুরসভার কাছে বার বার আবেদন জানিয়েও ফল না হওয়ায় বাজার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বছর তিনেক আগে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করেছে। একই ভাবে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলো, শৌচাগারের। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়।

আড়তদারদের অভিযোগ, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার চলায় এবং সেখানে প্রচুর লোকজনের আনাগোনা হওয়ায় বাজার লাগোয়া এলাকার আশপাশে বেড়েছে চোলাইয়ের ঠেক। ওই সব ঠেকে আনাগোনা রয়েছে দুষ্কৃতীদের। এ ছাড়া এলাকায় কয়েকটি হোটেলেও নানা আসামাজিক কাজকর্ম চলে। এমনকী ওই সব হোটেলে বসে দুষ্কৃতীরা বড় বড় আড়তদারের উপরে হামলার ছকও কষে বলে অভিযোগ। গত দুর্গাপুজোয় দশমীর দিন দুষ্কৃতীরা একটি আড়তে হামলা চালিয়ে তিন লক্ষ টাকা লুঠ করে। এর আগে এক আড়তদারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এ ধরনের সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে আড়তে মাছ নিয়ে আসা ট্রাক, ম্যাটাডরের পার্কিং সমস্যাও। কোনও নির্দিষ্ট পার্কিং এলাকা না থাকায় রাস্তার পাশে সার বেঁধে কিংবা যত্রতত্র ট্রাক-ম্যাটাডর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর ফলে প্রবল যানজটের কবলে পড়তে হয় যানচালক থেকে সাধারণ মানুষকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদারের বক্তব্য, “আড়তের চারপাশে খাবার দোকানেও দুষ্কৃতীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যেই আড়তদারের উপরে হামলা চালিয়ে টাকাকড়ি লুঠ করা হচ্ছে। আমরা সবর্দাই আতঙ্কে থাকি। তা ছাড়া ব্যবসার লোকসান হচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, এত বড় একটি ব্যবসাকেন্দ্রে নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন পুলিশ-প্রশাসনও।

মাছের বাজারের অন্যতম প্রধান সমস্যা বর্জ্য ও দূষিত জল নিকাশি। আড়তদারদের অভিযোগ, বহু পুরনো বাজার হলেও নগেন্দ্রবাজারে সুষ্ঠু পরিকাঠামো নেই। বাজারের নোংরা জল সরাসরি গিয়ে পড়ছে জাতীয় সড়কের পাশে সুলতানপুর নিকাশি খালে। খালটি বয়ে গিয়েছে রত্নেশ্বরপুর বাস মোড় থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বোলসিদ্ধি গ্রাম পর্যন্ত। ওই সব এলাকার লোকজনের অভিযোগ, মাছের বাজারের বর্জ্য ও নোংরা জল খালে পড়ায় দুর্গন্ধে তাঁরা অতিষ্ঠ। ছড়াচ্ছে দূষণও। সমস্ত বিষয়টি পুর কতৃর্পক্ষের নজরে আনা হলেও কোনও কাজ হয়নি।

ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্রবাজার আড়তদার সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ সরকার বলেন, “আমরা পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসনকে সমস্ত সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁদের দিক থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। এমনকী বাজারের নোংরা জল শোধন করে নদীতে ফেলার জন্য বলা হলেও পুর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়নি। অথচ রাজ্যের মধ্যে বৃহত্তম ওই মাছের বাজারের সঙ্গে প্রায় চার হাজার মানুষের রুটি-রুজির সম্পর্ক। কিন্তু পরিকাঠামোর উন্নতির দিকে কারও নজর নেই।”

উপ-পুরপ্রধান পান্নালাল হালদার বলেন, “ওই বাজারে জল সরবারহের, বাজারের আবর্জনা ও অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে পুরসভার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বাজারের নোংরা দূষিত জল শোধন করে নদীতে ফেলার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা ব্যয়বহুল। বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চলছে। বাজারের চারপাশে দুষ্কৃতী আনাগোনা বা আড়তদারদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার কথা পুলিশের।”

ওই বাজার এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। কয়েকজন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে হামলার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

dilip naskar nagendrabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy