Advertisement
E-Paper

পুলিশের ব্যর্থতায় ছড়িয়ে পড়ল গণ্ডগোল

ফাঁড়ির ভিতরে বসে রয়েছেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। তাঁদের সামনেই ভিতরে ভাঙচুর চালাচ্ছে উন্মত্ত জনতা। পরে বাইরে গিয়ে পুলিশেরই তিনটি মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দিল তারা। কিন্তু এত কিছুর পরেও পুলিশকর্মীরা কিন্তু নীরবই রইলেন। এখানেই শেষ নয়। উন্মত্ত জনতা এর পরে লাঠি, রড নিয়ে রাস্তায় নামল। দিনের ব্যস্ত সময়ে অবরোধ হল দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০২:১১

ফাঁড়ির ভিতরে বসে রয়েছেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। তাঁদের সামনেই ভিতরে ভাঙচুর চালাচ্ছে উন্মত্ত জনতা। পরে বাইরে গিয়ে পুলিশেরই তিনটি মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দিল তারা। কিন্তু এত কিছুর পরেও পুলিশকর্মীরা কিন্তু নীরবই রইলেন। এখানেই শেষ নয়। উন্মত্ত জনতা এর পরে লাঠি, রড নিয়ে রাস্তায় নামল। দিনের ব্যস্ত সময়ে অবরোধ হল দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়।

নবান্ন থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা ব্যাতাইতলা এলাকা প্রায় রণক্ষেত্রের চেহারা নিলেও প্রথম দিকে পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকাই পালন করেছে বলে অভিযোগ। বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘটনার ভয়াবহতার আঁচ বুঝতে পেরে দফায় দফায় পৌঁছেছে অন্যান্য থানার পুলিশ, মহিলা পুলিশ ও র্যাফ। ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ততক্ষণে গণ্ডগোলের মাত্রা বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। মহিলারা পর্যন্ত লাঠি, রড নিয়ে তেড়ে গিয়েছেন পুলিশকে।

কিন্তু দুর্ঘটনার পরে প্রথম থেকেই কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত না?

পুলিশকর্তাদের একাংশের মতে নিছকই একটি দুর্ঘটনা যে এত বড় আকার ধারণ করতে পারে, তা আগাম বোঝা যায়নি। তাই ঘটনার পরে পুলিশ গেলেও তাঁরা দেহ উদ্ধার এবং ট্রেলার সরাতেই ব্যস্ত ছিলেন। আর সেই সময়েই জনতা এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজের সাফাই, “দেহ সরানো ও ক্রেন আনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়াতেই সমস্যাটা হয়। ওই সময়টাই কাজে লাগান বিক্ষোভকারীরা। ট্রেলারচালককে উদ্ধার করাটাও একটা জরুরি কাজ ছিল। না-হলে গণপিটুনিতে তিনি মারা যেতেন।”

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পরে দেহ উদ্ধার ও ট্রেলার সরাতে পাঠানো হয় ট্রাফিক-কর্মীদের। যাঁদের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা সামলানো সহজ নয়। শালিমার স্টেশন রোডে ঘটনাস্থলের ঢিল-ছোড়া দূরত্বেই পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে এক জন সাব ইনস্পেক্টর, দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর এবং তিন জন কনস্টেবলের থাকার কথা। কিন্তু এ দিন তাঁরা কেউই ছিলেন না। যদিও পুলিশকর্তারা দাবি করেছেন ওই কর্মীরা ডিউটিতে ছিলেন। কিন্তু কোথায় তাঁদের ডিউটি ছিল, তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলেননি ওই কর্তারা।

তা হলে যে পুলিশকর্মীদের সামনে ফাঁড়ি ভাঙচুর ও মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল, তাঁরা কারা?

পুলিশ সূত্রের খবর, আমতলা ট্রাফিক গার্ডের অফিসটিকে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বটানিক থানা করা হয়েছে। তাই আমতলা সাব ট্রাফিক গার্ডটি ব্যাতাইতলা ফাঁড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছে। এ দিন ঘটনার সময়ে ট্রাফিকের গ্রিন পুলিশ, কনস্টেবল ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনস্পেক্টর মিলিয়ে তিন জন ছিলেন। ঘটনার পরে প্রথমে তাঁরাই ওই বাড়িটির সামনে যান। কিন্তু উন্মত্ত জনতা তাঁদের তাড়া করে। এর পরে খবর যায় শিবপুর থানায়। সেখান থেকে আবার হাওড়া সিটি পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও অন্যান্য অফিসারদের খবর পাঠানো হয়। তার পরেই দ্বিতীয় হুগলি সেতু ট্রাফিক গার্ড থেকে অফিসারদের পাঠানো হয় দেহ উদ্ধারে। তাঁরাও বিক্ষোভের মুখে পড়েন। হয় বলে অভিযোগ।

কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে তিন কিমি দূরে শিবপুর থানা এবং দুই কিমি দূরে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বটানিক থানা থাকলেও সেখান থেকে পুলিশবাহিনী প্রথমেই আসেনি বলে অভিযোগ। ফাঁড়ি ভাঙচুর, মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে রাস্তা অবরোধ করার প্রায় এক ঘণ্টা পরে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বটানিক থানার পুলিশ আসে। আবার সাড়ে ১১টার পরে শিবপুর থানার পুলিশ আসে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকে।

এমনকী ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আসে কয়েকজন মহিলা পুলিশ। সাড়ে ১২টা নাগাদ অন্যান্য থানার পুলিশ ও র্যাফ পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। তবে সব কিছুতেই পুলিশকে চুপচাপ থাকতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চলে।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরূপ রায় বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশই ছিল যে, ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে হবে। পুলিশও তাই সংযত ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ থেকেই বিষয়টাতে নজর রেখেছেন। গণ্ডগোলের পিছনে উস্কানি ছিল।”

howrah city police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy