Advertisement
E-Paper

বাজার থেকে উদ্বাস্তু কলোনি, গরমেও প্রচার মোর্তাজার

হাতে আর মাত্র দু’সপ্তাহ। প্রার্থীদের প্রচার-প্রস্তুতি তুঙ্গে। কিন্তু শত ব্যস্ততাতেও সপ্তাহ শেষের শুক্রবারটা গ্রামের গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য বাঁচিয়ে রাখছেন বারাসতের বামপ্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের মোতার্জা হোসেন। অবশ্য সময় বের করতে পারলে, তবেই। রবিবার সকালে গাড়ি আর ট্যাবলো নিয়ে মিছিল করে প্রচারে এসেছিলেন অশোকনগরে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০০
বাঁ দিকে, পিএল ক্যাম্পে সিপিএম মোর্তাজা হোসেন। ডান দিকে, গোলবাজারে সিপিএমের মিছিলে সিংহের সাজে বহুরূপী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বাঁ দিকে, পিএল ক্যাম্পে সিপিএম মোর্তাজা হোসেন। ডান দিকে, গোলবাজারে সিপিএমের মিছিলে সিংহের সাজে বহুরূপী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

হাতে আর মাত্র দু’সপ্তাহ। প্রার্থীদের প্রচার-প্রস্তুতি তুঙ্গে। কিন্তু শত ব্যস্ততাতেও সপ্তাহ শেষের শুক্রবারটা গ্রামের গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য বাঁচিয়ে রাখছেন বারাসতের বামপ্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের মোতার্জা হোসেন। অবশ্য সময় বের করতে পারলে, তবেই। রবিবার সকালে গাড়ি আর ট্যাবলো নিয়ে মিছিল করে প্রচারে এসেছিলেন অশোকনগরে। বিভিন্ন জায়গায় সাড়াও পেলেন ভাল।

পেশায় চিকিৎসক, বছর ঊনসত্তরের মোর্তাজা হোসেন মূলত দমদমের সুকান্তনগরের বাড়িতেই থাকেন। বড় এলাকায় প্রচারের জন্য প্রায় প্রতিদিনই সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে বেরিয়ে পড়ছেন। ভাত, উচ্ছে সিদ্ধ, আর আমডাল দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারছেন। সকাল সাড়ে সাতটায় স্থানীয় চৌরঙ্গী মোড় থেকে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে মিছিল শুরু হয়। একটি হুডখোলা গাড়িতে ছিলেন প্রার্থী। সঙ্গে ছিলেন অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর। আর ট্যাবলোয় সিংহ সেজে ছিল বহুরূপী। স্থানীয় ১/৩ মোড়, গণেশ ভাণ্ডার, ৮ নম্বর কালীবাড়ি মোড় হয়ে মিছিল শেষ হয় গোলবাজার এলাকায়। সারা পথই বাসিন্দাদের দেখে হাত নাড়ল সিংহ।

মাথায় সাদা টুপি, পরনে পাঞ্জাবি, পাজামা। গোলবাজারে মিছিল শেষ হওয়ার পরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বাজারে ঢোকেন প্রার্থী। দোকানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান। অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসেন প্রার্থীদের দেখতে। বিশেষ করে মেয়েদের কৌতুহল ছিল চোখে পড়ার মতো। ট্যাবলো নিয়ে মিছিলের পরে স্থানীয় শেরপুর কালীবাড়ি থেকে মহাপ্রভু কলোনি, সুভাষ পল্লি-সহ বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা করেন।

এর পরে সকাল ১০টা নাগাদ স্থানীয় পিএল ক্যাম্প এলাকায় গেলে স্থানীয় মহিলারা শঙ্খ বাজিয়ে, উলু দিয়ে, ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন মোর্তাজাকে। সামনেই একটি বাড়ির উঠোনে মাইক বাঁধা হয়েছিল। এলাকার মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আপ্লুত মোর্তাজা হোসেন সেখানে বলেন, “আপনারা যে ভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। মনে হচ্ছে, ঈশ্বর আমাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন।”

এ দিনের প্রচারে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করে মোর্তাজা হোসেন বলেন, “এই সরকার এখানকার কোনও সমস্যারই সমাধান করেনি। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছিলেন, তার সবটাই গুজব। দমদম থেকে বারাসত অবধি মেট্রো হয়নি। বারাসতে মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নার্সিং ট্রেনিং কলেজ কিছুই হয়নি। উল্টে অশোকনগরে আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে, ছোট ব্যবসায়ীরাও আর নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করছেন না।” তাঁর প্রচারসঙ্গী সত্যসেবীবাবুও কটাক্ষ করেন, “শাসকদলের মদতে দুষ্কৃতীরা এখানে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্ত বলেন, “এখানে সব দুষ্কৃতী সিপিএমের আশ্রয়ে থাকে। আমরা পুলিশকে কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছি। তাঁদের কাজে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। মানুষ এখানে শান্তিতে রয়েছেন।” তাঁর পাল্টা দাবি, “বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে যে সব শিল্প এলাকায় গড়ে উঠেছিল, তা বাম আমলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা তা বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।”

ভোট নিয়ে এত ব্যস্ততার মধ্যেও মোর্তাজা অবহেলা করছেন না তাঁর পেশাকে। বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা এলাকাতেও একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর। সেখানেই রোগী দেখছেন তিনি। সপ্তাহে এক দিন, শুক্রবার। জানালেন, সময় দিতে পারছেন কম। এক বেলা করে রোগী দেখছেন। বললেন, “চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখাটা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। গত শুক্রবারও একশো জনকে দেখেছি। জানি না, সামনের দুই শুক্রবার রোগী দেখতে পারব কি না।”

বস্তুত দীর্ঘদিন ধরেই এই ভাবে গরিব মানুষের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন রাজ্যের এই প্রাক্তন ত্রাণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মন্ত্রী। তার পরিবর্তে অবশ্য তাঁদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেন না তিনি। উল্টে ওষুধ কেনার টাকা না থাকলে, তিনিই তখন ভরসা হয়ে ওঠেন রোগীদের। নিজেই ওষুধ কিনে দেন তাঁদের। তবে যাঁরা পারেন, তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী, যেমন খুশি ভিজিট দেন ডাক্তারবাবুকে।

এলাকায় মোর্তাজা হোসেনের জনপ্রিয়তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এ দিনের প্রচারেও। তাঁকে কাছে পেয়ে পিএল ক্যাম্পের প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধা সন্ধ্যা পাল জানালেন, দেশ ভাগের পরে বাংলাদেশের বরিশাল থেকে এদেশে চলে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এখনও জমি-বাড়ির মালিকানা পাননি। ওই এলাকারই অন্য এক বৃদ্ধা বলেন, “ঘর ভেঙে গেলেও ঠিক করতে পারি না। ছাদ থেকে জল ঝরে। আমরা জল-জমি-বাড়ির মালিকানা চাই।” প্রচারসঙ্গী সত্যসেবীবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “উদ্বাস্তুদের জন্য এখানে প্রোডাকশন সেন্টার তৈরি হয়েছিল। মহিলারা সেখানে তাঁত বুনতেন। ঠিক মতো বেতন পেতেন না। বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে তাঁদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। কিছু পরিবারের জমি-বাড়ির মালিকানারও ব্যবস্থা করেছিল।” মোর্তাজা হোসেন বলেন, “ওঁরা দীর্ঘ দিন এখানে বাস করেও কেন জমি-বাড়ির মালিকানা পাননি, তা দেখব।”

simanta maitra ashoknagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy