Advertisement
E-Paper

বাবা অন্য রকম, বললেন বাপ্পা

রবিবাসরীয় সকালের জমজমাট বাজার। আলু-পটল বা মৌরলা মাছের দিকে অবশ্য কারও নজর নেই। কানে আসছে মাইকের আওয়াজ। অনেকটা কবিতার ঢঙে বাজছে ‘বাবা-মা আদর করে ডাকতেন বাপ্পি/সেই বাপ্পিদা এসেছে/ শ্রীরামপুরের মানুষ আনন্দে মেতেছে।’ আওয়াজটা যত সামনে এগোতে লাগল, চৈত্রের কাঠফাটা রোদ মাথায় নেওয়া জনতা ততই উদ্বেল।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০২
পুত্রবধূ ও সম্পর্কিত বোনকে নিয়ে প্রচারে বাপ্পি। ছবি: দীপঙ্কর দে।

পুত্রবধূ ও সম্পর্কিত বোনকে নিয়ে প্রচারে বাপ্পি। ছবি: দীপঙ্কর দে।

রবিবাসরীয় সকালের জমজমাট বাজার। আলু-পটল বা মৌরলা মাছের দিকে অবশ্য কারও নজর নেই। কানে আসছে মাইকের আওয়াজ। অনেকটা কবিতার ঢঙে বাজছে

বাবা-মা আদর করে ডাকতেন বাপ্পি

সেই বাপ্পিদা এসেছে

শ্রীরামপুরের মানুষ আনন্দে মেতেছে।

আওয়াজটা যত সামনে এগোতে লাগল, চৈত্রের কাঠফাটা রোদ মাথায় নেওয়া জনতা ততই উদ্বেল।

খানিক বাদেই তাঁদের চোখের সামনে হুডখোলা গাড়ি। তাতে লাল হলুদ বড় ছাতা লাগানো। চালকের পাশে সাদা ঢিলা আলখাল্লায় স্বয়ং বাপ্পিদা। হাসিমুখে হাত নেড়ে চলেছেন মানুষের দিকে তাকিয়ে। শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থী বাপ্পি লাহিড়ীর গাড়ি যত এগোতে লাগল, পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল ভিড়।

ঘড়ির কাঁটায় সকাল তখন ঠিক সাড়ে ১১টা। ডানকুনির রঘুনাথপুর বাজারে অল্প পরিসর টিএন মুখার্জি রোডে তখন শুধু সারি সারি মাথা। সামনে দড়ির ব্যারিকেড করে সবুজ-গেরুয়া টুপি পড়ে স্বেচ্ছাসেবকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু কে কার কথা শোনে? বছর চোদ্দোর দুই বোন রীতা আর টুম্পা মাইকের তালে কোমর দোলাচ্ছিল। স্থানীয় মণ্ডলপাড়ার ওই দুই বোন নাকি ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে, কখন বাপ্পিদা আসবেন। চৈত্রের ঠা ঠা রোদে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন তন্ময় মাঝিও। বললেন, “আমরা ছোটখাট ব্যবসা করি এখানে। তবে আজ কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। বাপ্পিদাকে একটি বার দেখার জন্য অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি।” হিন্দমোটর লাগোয়া মাখলা মোড়ের কাছে এসেই ভিড় প্রায় রাস্তা জুড়ে ফেলল। ভক্তদের অনুরোধ রাখতে বাপ্পিদা মাঝেমধ্যেই গেয়ে উঠছিলেন, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। ভিড়ের এক কোণে দাঁড়িয়েছিলেন গৃহবধূ অনিতা সিংহ। নিজেই আগ বাড়িয়ে বললেন, “সকাল ১০টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি মেয়েকে নিয়ে। এত ক্ষণে ভাগ্যের শিকে ছিড়ল।”

বাপ্পির সঙ্গে এ দিন এসেছিলেন ছেলে বাপ্পা, পুত্রবধূ তানিশা আর সম্পর্কিত বোন জয়িতা লাহিড়ী। দোতলার ছাদ, বারান্দায় দাঁড়ানো মানুষের দিকে তাঁরা হাত নাড়ছিলেন ক্রমাগত। ভিড় সামলাতে নাজেহাল বাপ্পির আপ্ত সহায়ক অমিত সান্যালের। রোড-শো এগোচ্ছিল শম্বুক গতিতে। এক সময়ে রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করলেন বাপ্পা। কথায় কথায় বলছিলেন, “জানেন তো, বাবা একেবারেই অন্য ধরনের মানুষ। রাজনীতির লোকেরা একে অন্যের সম্পর্কে কত কথাই না বলেন। বাবা কিন্তু এ সবে একদম নেই।” গাড়ি যখন উত্তরপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে, ছুটির দিনে পথে বেরনো মানুষ আর বাপির ভক্তকুলের সৌজন্যে তখন গাড়িঘোড়া রীতিমতো তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তরপাড়ার আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্তকে বেশ ঘাম ঝরাতে হল।

এ দিন নীলষষ্ঠী। পুজো দিতে রাস্তায় বেরনো মহিলারা ডালা নিয়েই চড়া রোদ উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বৃদ্ধা আরতী চক্রবর্তী জানান, বৌমা মিতালিকে নিয়ে পুজো দিতে বেরিয়েছেন। এত কাছ থেকে বাপ্পি লাহিড়ীকে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে পারেননি। এক সময় তো ভিড়ের চাপে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট নামানো যাচ্ছিল না।

এ দিন বাপ্পির রোড-শো শেষ হল উত্তরপাড়া গণভবনের সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে বিজেপির এই ওজনদার প্রার্থী বললেন, “আমি বিবেকানন্দের ভক্ত। শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ার মানুষের সেবা করতে চাই। মাদার টেরেজা যে ভাবে আর্তের সেবা করেছিলেন, সুযোগ পেলে তার এক শতাংশ করতে পারলেও নিজেকে ধন্য মনে করব।”

শ্রীরামপুরের অন্য প্রার্থীরাও এ দিন রোড-শোয়ের উপর নির্ভর করেছেন। সকালে রিষড়ার ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে রোড-শো করেন তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও জিটি রোড ধরে কখনও অলিগলিতে ঘুরে প্রচারে ঝড় তোলেন কল্যাণবাবু। সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায় সাত সকালেই প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। দিনভর রোড-শো করেছেন। শুরু করেছেন বেলুড় থেকে। সেখান থেকে ডোমজুড় হয়ে সলপে যান। শেষে ফের ডোমজুড়ে ফিরে কর্মিসভা করেন প্রার্থী। কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান এ দিন প্রচার করেছেন হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে।

bappi lahiri gautam bandyopadhyay uttarpara
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy