Advertisement
E-Paper

বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ

দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন পর্ব ছিল শান্তিপূর্ণ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০১:১৬

দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন পর্ব ছিল শান্তিপূর্ণ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।

তবে বুধবার সকাল থেকেই ওই লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ বুথে বিরোধীদের এজেন্টকে হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, বিজেপি-র পোলিং এজেন্টদের অনেকে আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটেরও অভিযোগ করেছেন। হাওড়া জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, পাঁচলা, বালি, উত্তর হাওড়া, দক্ষিণ হাওড়া, শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বুথ এজেন্টকে বসতে না দেওয়া ও রিগিংয়ের ঘটনা বেশি। বেশ কিছু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না করার অভিযোগও করেছেন বিরোধীরা। প্রশাসন জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী পর্যাপ্ত না থাকায় কিছু বুথে কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন ছিল। বালি ও উত্তর হাওড়ায় সকালে বিভিন্ন বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন চোখে পড়লেও রোদের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুথগুলি ফাঁকা হয়ে যায়। বেলা ৩টের পর অবশ্য কিছু বুথে ভোটদাতাদের ভিড় দেখা যায়।

লিলুয়ার সি রোডের বাপুজি বিদ্যামন্দিরে ভোট দিতে গিয়েছিলেন গীতা দেব ও তাঁর স্বামী মানিকচন্দ্র দেব। তাঁদের অভিযোগ, সি রোড বাজারের কাছে তাঁরা পৌঁছলে শাসক দলের একদল সমর্থক তাঁদের ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়। ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দেওয়া হয় তাঁদের। গীতাদেবীর অভিযোগ, “স্বামী প্রতিবাদ করায় ক্ষেপে দিয়ে ওই যুবকেরা মারধর করে।”

ওই একই জায়গায় বাজারের কাছে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোলে সিপিএমের এক এজেন্টকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় অনুপ রায় নামে ওই সিপিএম কর্মীকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই অভিযোগ ওঠে ভট্টনগরে। সেখানেও হরিরাম পান্ডে নামে এক সিপিএম কর্মীকে তৃণমূল মারধর করে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি তৃণমূলও এ দিন অভিযোগ করেছে, পুলিশ লিলুয়ায় সম্রাট সরকার নামে তাদের এক কর্মীকেই বেধড়ক পিটিয়েছে।

মারধর করে দলীয় এজেন্ট বের করে দেওয়া অভিযোগ করেছে কংগ্রেসও। শ্রী অরবিন্দ রোডে সালকিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ পান্ডে অভিযোগ করেন, “শাসক দলের কর্মীরা বিরোধী এজেন্টদের মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভোটারদের সাহায্য করার জন্য যে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে তাঁদের কর্মীদেরও তৃণমূল বের করে দিয়েছে।”

এ দিন সকালে একই ধরনের ঘটনা ঘটে পাঁচলা বিধানসভা কেন্দ্রের উত্তর বেলডুবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে। সিপিএম প্রার্থীর বুথ এজেন্ট শেখ হবিবুর রহমানের অভিযোগ, “রীতিমতো গলাধাক্কা দিয়ে বুথ থেকে বার করে দেওয়া আমাকে। নির্দল প্রার্থী এজেন্ট বলরাম সর্দারকেও মেরে বুথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।” বেলা আড়াইটে নাগাদ ওই বুথে গিয়ে দেখা যায়, তৃণমূল ও কংগ্রেসের এজেন্ট ছাড়া অন্য দলের এজেন্ট নেই। ওই বুথের অনেক ভোটারের অভিযোগ, তাঁদের ভোট অনেক আগেই শাসক দলের কর্মীরা দিয়ে দেন। ওই বুথের তৃণমূল প্রার্থীর এজেন্টরা অবশ্য দাবি করেন, বিরোধীদের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন।

এ দিন সন্ধ্যায় সিপিএম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্য অভিযোগ করে বলেন, “বালি, সাঁকরাইল পাঁচলা সহ মোট ৩৬টি বুথে শাসকদল ব্যাপক রিগিং করেছে। আমাদের এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। বসতে দেওয়া হয়নি। হামলা চালিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। যে কারণে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ওই বুথগুলিতে পুননির্বাচনের দাবি জানিয়েছি।”

এজেন্টদের মারধর ও রিগিং-এর অভিযোগ করেছে বিজেপিও। বিজেপি প্রার্থী জর্জ ফার্নান্ডেজ ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে সমগ্র বালি, উত্তর হাওড়ার একটি ও পাঁচলা বিধানসভা কেন্দ্রের দু’টি বুথে পুর্ননির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। জর্জ বলেন, “হাওড়ার বহু বুথে ভোট লুঠ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এ জন্য আমরা কয়েকটি বুথে পুনরায় ভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” বিরোধীরা এ কথা বললেও হাওড়া সদর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, হাওড়া ভোট হয়েছে শান্তিতে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে মানুষ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোনও গোলমাল হয়নি। বিরোধীরা যে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ করছে তা ভিত্তিহীন।”

উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রেও দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ। এ দিন বিকেলে আমতা ২ ব্লকের গাজিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলবাঁশ গ্রামে ভোটগ্রহণ চলাকালীন মারপিটে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল ও সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। দু’টি দলের মোট ৯ জনকে আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে আনা হয়। দু’টি দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ করেছে।

মোটের উপরে নির্বাচন এ দিন শান্তিপূর্ণ হলেও সিপিএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখল ও সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়েছে। সিপিএমের প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, “উদয়নারায়ণপুরে অধিকাংশ বুথে আমাদের পোলিং এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। অনেক বুথ দখল করে নেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ উড়িয়ে উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কর্মীর অভাবেই সিপিএম কিছু বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি। কিন্তু বুথ দখল বা সন্ত্রাস হয়নি।” কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্রের অভিযোগ, “শুধু আমতা এলাকাতেই ১৬টি বুথ দখল করে নিয়েছে তৃণমূল।” সব অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল (গ্রামীণ) সভাপতি পুলক রায় বলেন, “নির্বাচন হয়েছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। এ সব দেখে বিরোধীরা হতাশ হয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।”

howrah poll violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy