এ ভাবেই রাস্তা জুড়ে বসে হকার। —নিজস্ব চিত্র।
মহকুমা সদরে কাকদ্বীপ এখনও অপেক্ষায় রয়েছে একটি বাস টার্মিনাসের। সেটি না থাকায় প্রতি দিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কাকদ্বীপ থেকে ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, পাথরপ্রতিমার মধ্যে যাতায়াতকারী অসংখ্য মানুষের। সমস্যায় পড়েন বাসচালকেরাও। ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে প্রস্তাবিত টার্মিনাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। এ বার ভোট মিটলে কাজ শুরু হবে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন। তবে কাজ কবে শুরু হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন এলাকার মানুষ।
কাকদ্বীপ চৌরঙ্গী মোড় থেকে এক দিকে নামখানা অন্য দিকে ডায়মন্ড হারবার। এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এই রাস্তার উপরে ফল বাজার, সব্জি বাজার বসে। সরু রাস্তার পাশে দু’হাত পসরা নিয়ে বসেন বহু হকার। গাড়ি নিয়ে যাতায়াত তো বটেই, পায়ে হেঁটেও এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা বেশ সমস্যার। রাস্তার উপরেই বাস বা অন্য যাত্রিবাহী গাড়ি দাঁড়ায়। যাত্রীরা ওঠানামা করেন। বাসের পার্কিংয়ের জায়গায় ছোট যানবাহনও দাঁড়ায়। নিরুপায় বাস চালকেরাও। ধর্মতলা থেকে পাথরপ্রতিমা যাতায়াত করে এসডি-১৯ রুটের বাস। জেলায় এটাই সবচেয়ে দীর্ঘতম রুট। তা ছাড়াও চলে পাথরপ্রতিমার বাস, নামখানার সরকারি বাস। গত ৫-৭ বছর ধরে অটোর দাপট বেড়েছে।
এসডি-১৯ এর বাস-শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আবুল বাশার বলেন, “আমাদেরও কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ধরেই বাস পার্কিং এর জায়গায় ডিলাক্স অটো, টাটা ম্যাজিকের মতো গাড়িগুলি আমাদের এখানে দাঁড়াতে দেয় না। রাস্তার উপরে কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই জ্যাম হয়ে য়ায়।” এমনকী, চা-টিফিন খাওয়ার সুযোগও খুব কম দিনই পান বাসচালক ও টিকিটদাতারা। অল্প জায়গায় নিত্য যানজটে ভোগেন নিত্যযাত্রীরা। গুরুতর অবস্থায় রোগী নিয়ে যাওয়ার সময়ও বিপদ বাধে এই রাস্তায়। বাস টার্মিনাসে বাস দাঁড়ানোর সুযোগ না থাকায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয় ফুটপাতের উপরে দাঁড়িয়েই। মহিলাদের ক্ষেত্রে শৌচাগারেরও সুব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি মহকুমা প্রশাসন। এই সমস্ত গাড়িগুলির অনুমোদন নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।
এই অবস্থার অবসান এখনও ঘটেনি কেন? কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুদ্ধদেব দাস বলেন, “আমরা কোর্টের উল্টো দিকে প্রায় এক একর মতো জমি পেয়েছি। প্রকল্পের ব্যয় কত হতে পারে, তার হিসেবও তৈরি। পরিবহণ পরিকাঠামো নিগম থেকে প্রায় ৯৮ লক্ষ টাকাও পাওয়া গিয়েছে। তা দিয়েই শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” তবে কাজ আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে এলাকার মানুষ। রূপচাঁদ ঘাট রোডের এক দোকানদার বললেন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক), বিকল্প বাস টার্মিনাস হবেই যদি তবে ঠিক ভোটের মুখেই কেন শিলান্যাস হল? এটা তো নেতারাও জানেন, ভোটের সময়ে কাজ হয় না।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুদ্ধদেববাবু জানিয়েছেন, এখনও টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এই সমস্যায় জেরবার যাত্রীরা। প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, টার্মিনাস কমপ্লেক্স তৈরি হলে হকারদের জন্য তৈরি যানজটের সমস্যাও মিটবে।
ডায়মন্ড হারবার থেকে পাথরপ্রতিম পেরিয়ে রাক্ষসখালিতে যাতায়াত করেন স্কুল শিক্ষিকা বিদিশা মণ্ডল। কাকদ্বীপ চৌমাথার বাসস্ট্যান্ড নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। বললেন, “আমাকে কাকদ্বীপে নেমে অন্য বাস ধরতে হয়। কিন্তু বাসগুলি রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে জ্যাম তৈরি করে। অফিস টাইমে ঝামেলায় পড়ি। একটা স্থায়ী বাস টার্মিনাস থাকলে এত ব্যস্ত জায়গায় সুবিধা হত।” পুরুষদের শৌচাগার থাকলেও মহিলাদের জন্য সে ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন কয়েক জন মহিলা নিত্যযাত্রী। বিয়েবাড়ির জন্য রুটের প্রচুর বাস তুলে নেওয়ায় বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ার মতো ঘটনাও এখানে আকছার ঘটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy