Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বধূর গায়ে গরম ফ্যান, গণপিটুনি শাশুড়ি-দেওরকে

তরুণী বধূটির গায়ে ভাতের গরম ফ্যান ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। বারো দিন কেটে গেলেও কাকপক্ষীতে টের পায়নি। চিকিৎসাও হয়নি। বরং তাঁর ঠাই হয়েছিল খাটের তলায়। সোমবার আম-জামে ঠাসা ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় কালিয়ানি গ্রামে দিদির বাড়িতে গিয়ে হাজির ভাই। দিদি কই? বাড়িতে নেই। কোথায় গেল? স্পষ্ট জবাব নেই। উল্টে বলা হয় তুমি বাপু ফলের ব্যাগটি এখানে রেখে এখন এসো দিকি!

দেগঙ্গায় বধূ নির্যাতনে অভিযুক্তদের মারধর।  —নিজস্ব চিত্র।

দেগঙ্গায় বধূ নির্যাতনে অভিযুক্তদের মারধর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০৩:৩১
Share: Save:

তরুণী বধূটির গায়ে ভাতের গরম ফ্যান ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। বারো দিন কেটে গেলেও কাকপক্ষীতে টের পায়নি। চিকিৎসাও হয়নি। বরং তাঁর ঠাই হয়েছিল খাটের তলায়। সোমবার আম-জামে ঠাসা ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় কালিয়ানি গ্রামে দিদির বাড়িতে গিয়ে হাজির ভাই। দিদি কই? বাড়িতে নেই। কোথায় গেল? স্পষ্ট জবাব নেই। উল্টে বলা হয় তুমি বাপু ফলের ব্যাগটি এখানে রেখে এখন এসো দিকি!

সন্দেহ হওয়ায় এক রকম জোর করেই দরজা ঠেলে দিদির ঘরে ঢুকে পড়ে ছেলেটি। ঢুকেই দেখে, ওই তো দিদি খাটের নীচে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে। দিদি বলে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা, নইলে আমি বাঁচব না। টুঁ শব্দটি না করে ভাই ফিরে যায়। ঘণ্টা কয়েক বাদে তিন গাড়ি বোঝাই আত্মীয়-পড়শি নিয়ে ফিরে আসে। বেধড়ক পেটানো হয় কয়েক জনকে। তছনছ করে দেওয়া হয় বাড়ি। দিদিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে তরুণীর শাশুড়ি ও দেওরকে। স্বামী ও শ্বশুর-সহ আরও পাঁচ জনের খোঁজ চলছে।

মাস চারেক আগে কালিয়ানির মহম্মদ সাইফুদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাশীপুর থানার সানপুকুর গ্রামের বছর আঠারোর তহমিনা বিবির। তহমিনার বাবা রফিকুল ইসলামের ছোটখাটো সব্জির ব্যবসা। তাঁর দাবি, “মেয়ের বিয়েতে অনেক কষ্ট করে লক্ষাধিক টাকা, সোনার গয়না-সহ নানা জিনিস দিয়েছিলাম। তাতেও ওদের লোভ মেটেনি।” তহমিনার মা মরিয়মের অভিযোগ, “আগে ওরা বলেছিল, জামাই ব্যবসা করে। পরে জানা যায়, একটা ওষুধের দোকানে কাজ করে। মেয়েকে দেখতে খারাপ বলে আরও টাকা চেয়ে মারধর করত ওরা।”

অবস্থা বুঝে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু জামাই সাইফুদ্দিন ওরফে খায়ের বারবার ফোন করে ক্ষমা চাওয়ায় কিছু দিন আগে তহমিনা শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন। কিন্তু পরিস্থিতি শুধরোয়নি। বরং অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। তহমিনার অভিযোগ, দিন বারো আগে মারধর করে তাঁর গায়ে গরম ফ্যান ঢেলে দেয় শাশুড়ি সাজিদা বিবি। সাঙ্ঘাতিক জখম হন তিনি। কিন্তু কেউই গা করেনি। কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তাঁকে ফেলে রাখা হয় খাটের তলায়। ভাগ্যক্রমে, এ দিন তহমিনার ভাই সাবির হোসেন সেখানে গিয়ে হাজির হয়। সে ফিরতেই বিপদ আঁচ করে বাড়ি থেকে পালায় সাইফুদ্দিন, তার বাবা আবুল কাদের এবং আরও কয়েক জন।

তাদের আশঙ্কা খুব ভুল ছিল না। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সানপুকুর থেকে লোকজন নিয়ে তহমিনার বাড়ির লোকজন এসে হাজির। তাঁদের কাছে সব শুনে খেপে ওঠেন সাইফুদ্দিনের পড়শিরাও। বাড়িতে ঢুকে শুরু হয় ভাঙচুর, মারধর। তহমিনার শাশুড়ি এবং দেওর কুতুবুদ্দিনকে মারতে-মারতে তোলা হয় গাড়িতে। দেগঙ্গা থানার কাছে টাকি রাস্তায় নামিয়ে ফের একপ্রস্ত পেটানো হয় দু’জনকে। পুলিশ এসেও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। থানার বারান্দায় উঠেও চলে মারধর। পরে দু’জনকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। ইতিমধ্যে তহমিনাকে নিয়ে কয়েক জন চলে যান স্থানীয় বিশ্বনাথপুর হাসপাতালে। পরে তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deganga md saifuddin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE