নির্বাচনের আগে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে বেআইনি অস্ত্র ঢোকা আটকাতে নজরদারি বাড়াচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি, জেলা জুড়ে তল্লাশি অভিযানেও জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিএসএফ এবং নদিয়া, হাওড়া ও হুগলির জেলা পুলিশের সঙ্গে বৈঠকও করা হয়েছে।
এমনিতেই বেআইনি অস্ত্রের রমরমা বাজার উত্তর ২৪ পরগনায়। সীমান্ত এলাকায় বছরভর বিভিন্ন দামে খুচরো ও পাইকারি দরে বিক্রি হয় ওয়ান শটার, নাইন এমএম পিস্তল বা শর্ট গান। নির্বাচনের সময়ে সেই সব আগ্নেয়াস্ত্রের বাজারদর চড়ে। ইতিমধ্যেই কামারহাটি, টিটাগড়, জগদ্দল, বীজপুরে বেআইনি অস্ত্র মজুত করা হয়েছে বলে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। জেলাশাসক তথা জেলার নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বনশল ইতিমধ্যেই পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বেআইনি অস্ত্র পাচারকারীদের উপর নজর রাখতে ও কড়া পদক্ষেপ করতে।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান সি সুধাকর বলেন, ‘‘বেআইনি অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। আশপাশের সব জেলার সঙ্গে বৈঠক করেছি। সন্দেহভাজন কোনও গাড়ি, বাইক বা ব্যক্তি দেখলে তল্লাশি করা হচ্ছে। আমরা এ বার খুব সতর্ক।’’
পুলিশের খতিয়ান অনুযায়ী, গত দেড় মাসে শুধু বনগাঁ মহকুমা থেকে আটক করা বেআইনি অস্ত্রের সংখ্যা ৩৫। ব্যারাকপুর থেকে আটক করা হয় ১৬টি এবং বারাসত থেকে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র। বসিরহাট থেকে গত দেড় মাসে মেলে ১৫টি বন্দুক এবং পাঁচটি ওয়ান-শটার। মিনাখাঁর দক্ষিণ বারগা গ্রামে অস্ত্র তৈরির করাখানারও খোঁজ পেয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ এবং নল আটক করা হয়। কিছু দিন আগে বাংলাদেশের যশোহরের দুষ্কৃতী রাজু মোল্লাকে গুলিভর্তি ওয়ান শটার-সহ হাতেনাতে ধরার পরে পুলিশের কাছে বেশ কিছু নতুন তথ্য এসেছে। যেমন, নির্বাচনের আগে বিএসএফের কড়াকড়ির জন্য বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছে কারবারিরা। নো-ম্যানস ল্যান্ডে চাষ-আবাদ করতে যাওয়া গ্রামবাসীদের পাঁচশো বা হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে তাঁদের হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে ব্যাগ বা টিফিন কৌটোর মতো দেখতে বাক্স। তার মধ্যেই পাচার হচ্ছে দেশি পিস্তল। সেই সব অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা আবার এ পারে এসে অপরাধ করে পালাচ্ছে। বনগাঁর ভাসানপোতা, ভিড়ে, পাইকপাড়া, কালিয়ানি এই সব এলাকায় খোঁজ করলে ২০-২২ হাজার টাকায় নাইন এমএম মিলবে। সেভেন এমএম পাওয়া যাবে ১৫-১৮ হাজার টাকায়। আর ওয়ান শটার মিলবে নগদ চার হাজার ফেললেই।
কিছু দিন আগে নদিয়ার হরিণঘাটা থেকে ধরা হয় শেখ রাজু নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বিরহীতে তার এক জামাইবাবুর বাড়ি থেকে মেলে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম। পুলিশের দাবি, জেরায় রাজু জানায়, বাংলাদেশ থেকে যে সব দুষ্কৃতী এ রাজ্যে অপরাধ করে ফের কাঁটাতার টপকে পালিয়ে যায়, তারা ওয়ান শটারই পছন্দ করে। দাম কম আর সহজলভ্য হওয়ায় ওয়ান-শটারের বাজারও ভাল। ভোটের মরসুমে এই সব আগ্নেয়াস্ত্রেই লাগাম টানতে চাইছে জেলা পুলিশ।