Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাঝপথে বন্ধ রাস্তা তৈরির কাজ, সমস্যায় বাসিন্দারা

বারো কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাটির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সাল নাগাদ। তারপর এক মাস কাটতে না কাটতেই রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা নির্মাণকারী ঠিকাদার নাকি নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করছে এমনই অভিযোগ তোলেন রাস্তা নির্মাণের দেখভালের জন্য তদারকি কমিটির সদস্য।

এখন যে অবস্থায়। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

এখন যে অবস্থায়। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০১:৩৬
Share: Save:

বারো কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাটির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৯ সাল নাগাদ। তারপর এক মাস কাটতে না কাটতেই রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা নির্মাণকারী ঠিকাদার নাকি নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করছে এমনই অভিযোগ তোলেন রাস্তা নির্মাণের দেখভালের জন্য তদারকি কমিটির সদস্য। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। ফলে এলাকার দশটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াতে সমস্যায় পড়েছেন। এমনই চিত্র হাওড়া উদয়নারায়ণপুর ব্লক অফিস থেকে ডিহিভুরসুট পর্যন্ত রাস্তার।

প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় পিচ-ঢালা পাকা রাস্তা তৈরির কাজ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সে সময়ে বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের অক্টোবরে। কিন্তু মাঝপথে কাজ থমকে যাওয়ায় এখন রাস্তার ভাঙাচোরা দশা। বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তাটির কিছু কিছু অংশে মাটি ফেলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে রাস্তার হাল ফেরেনি।

প্রতাপচক গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক প্রামাণিক বলেন, “রাস্তাটি পাকা না-হওয়ায় উঁচু-নিচু ইটের খোয়া ফেলা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। তা ছাড়া, সাইকেল, রিকশা, ইঞ্জিনভ্যান, মোটরবাইকও বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করছে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে, প্রসূতি মায়েদের দক্ষিণ রামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে প্রবল অসুবিধায় পড়তে হয়।” রাস্তাটি নির্মাণের ব্যাপারে বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

রাস্তাটির নির্মাণ তদারককারী হরালি উদয়নারায়ণপুর প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান স্বপন সেনগুপ্ত বলেন, “রাস্তাটির নির্মাণকার্য সঠিক হওয়ার দেখাশোনার জন্য পঞ্চায়েত সমিতি থেকে আমাকে ভার দেওয়া হয়। আমার নজরে আসে, নির্মাণের জন্য জিনিসপত্র ঠিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে না। যেমন, নিম্নমানের ইউক্যালিপ্টাস বল্গা এবং নিম্নমানের পিচের ড্রাম সিট দিয়ে পাইল করা হচ্ছিল। ছাল-সহ বল্গাগুলিতে সামান্য আলকাতরা লাগানো ছিল। প্রকল্পটি সম্পর্কে যে নির্দেশিকা বোর্ডে দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছিল না। এই সমস্ত কারণে আমি জেলা পরিষদ, জেলাশাসক, হাওড়া মুখ্য বাস্তুকার এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাই।” প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত হওয়ার পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্বপনবাবুর বক্তব্য, তিনি দায়িত্ব পালন করলেও গ্রামবাসীরা তা বোঝেননি। উল্টে তাঁকেই দোষারোপ করে।

এ দিকে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার তরফে সুফল হালদার বলেন, “বন্যায় যদি রাস্তার অংশ ভেঙে ধুয়ে যায় তো আমি কী করতে পারি? যতই ভাল করে কাজ করি না কেন, আমাদের কোনও নাম নেই। বিভিন্ন ভাবে আমাকে ঊর্ধ্বতন দফতর থেকে অপদস্ত করার জন্য আমি শেষে ওই কাজ বন্ধ করে সরে আসতে বাধ্য হই।”

রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য জেলা পরিষদকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হরালি উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান নীলিমা মাল। জেলা পরিষদ পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কল্যাণ ঘোষ বলেন, “রাস্তাটির কাজ ফের চালু করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি।” উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা জানান, রাস্তাটি নির্মাণ ব্যাপারে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা কাটিয়ে পুনরায় কাজ চালুর জন্য সব রকম চেষ্টা চলছে। ভোটের পরে কাজ চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে আশা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

udaynarayanpur roads
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE