Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মেলে না ডাক্তারের দেখা, আসেনি বিদ্যুৎও

কোথাও ডাক্তারের দেখা মেলে সপ্তাহে দু’দিন বা তিন দিন। কোথাও চিকিৎসা করে দেন নার্সরাই। ভেঙে পড়া দরজা-জানালা, জলের সমস্যাএ সব নিয়েই চলছে আসানসোলের নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আজ প্রথম পর্ব।চাকরি জীবনের শেষ দিনে অবসরের কাগজপত্র নিতে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী রেখারানি সাধু। যে কাগজ সে দিনই পাওয়ার কথা, তা মাসখানেকের মধ্যে পেয়ে যাওয়ার আশ্বাস পেয়ে ফিরলেন তিনি। কারণ, কাগজ যিনি দেবেন, সংশ্লিষ্ট সেই অফিসার যে মাসে এক বারই আসেন এলাকায়।

ডিহিকায় তৈরি হয়েও পড়ে থাকা ভবন। নিজস্ব চিত্র।

ডিহিকায় তৈরি হয়েও পড়ে থাকা ভবন। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০১:৪৯
Share: Save:

কোথাও ডাক্তারের দেখা মেলে সপ্তাহে দু’দিন বা তিন দিন। কোথাও চিকিৎসা করে দেন নার্সরাই। ভেঙে পড়া দরজা-জানালা, জলের সমস্যাএ সব নিয়েই চলছে আসানসোলের নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আজ প্রথম পর জীবনের শেষ দিনে অবসরের কাগজপত্র নিতে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী রেখারানি সাধু। যে কাগজ সে দিনই পাওয়ার কথা, তা মাসখানেকের মধ্যে পেয়ে যাওয়ার আশ্বাস পেয়ে ফিরলেন তিনি। কারণ, কাগজ যিনি দেবেন, সংশ্লিষ্ট সেই অফিসার যে মাসে এক বারই আসেন এলাকায়।

আসানসোল পুরসভা এলাকায় প্রায় সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই কর্মী সংখ্যার হাল এই রকম। স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে প্রায় চার দশক আগে যে সব কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল, এখন সেগুলির অধিকাংশেরই বেহাল পরিস্থিতি। তিন বছর আগে রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালটিকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল ফেরেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। সব দিন চিকিৎসক না মেলা, প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে পরিষেবায় বিঘ্ন-সহ নানা পরিকাঠামো গত সমস্যায় ভুগছে সেগুলি। আসানসোলের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক মনিকাঞ্চন সাহার অবশ্য আশ্বাস, পুর এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।

আসানসোল মহকুমায় রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ ছিল নেতাজি সুভাষ রাস্তায় ললিতমোহন হাসপাতাল। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের উদ্যোগে ওই হাসপাতাল শহরের এসবি গড়াই রোডে স্থানান্তরিত হয়। হাসপাতালের নাম বদলে রাখা হয় আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল। এরই মধ্যে আসানসোলের চারপাশে ডামরা এবং ডিহিকা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়া হয়। ডিহিকার অধীনে বিদ্যানন্দপুর, ধেনুয়া এবং ডামরার অধীনে মরিচকোটা ও দক্ষিণ ধাদকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হয়।

এর মধ্যে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট সরকার। বর্তমানে আসানসোল পুরসভার হিরাপুর থানার অর্ন্তগত ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে তখন গঠিত হয় বার্নপুর নোটিফায়েড এলাকা। ১৯৮৩ সালে পঞ্চায়েত গঠনের সময়ে ডামরা থেকে মরিচকোটা পর্যন্ত পঞ্চায়েতভুক্ত হয়। এই দু’টি স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ১৯৯৪ সালে আসানসোল পুরসভার সঙ্গে যোগ করে পুরনিগম গড়া হয়। এর পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির দায়িত্ব বর্তায় পুরনিগমের উপর। আসানসেলের প্রথম মেয়র বামাপদ মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা ক্ষমতায় আসার আগেই ডিহিকা এবং ডামরা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হয়েছিল। এই দুই কেন্দ্রের অধীনস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ধুঁকছিল। তাঁর দাবি, ডিহিকা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল ভবন ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। কোনও রকমে মেডিক্যাল অফিসার আবাসনে চলছিল এই কেন্দ্র। তাঁরা ক্ষমতায় আসার পরে আমূল পরিবর্তন হয়। তিনি আরও জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ভালই চলছিল। কিন্তু চিকিৎসকেরা একে একে ছেড়ে যাওয়ায় সব বেহাল হয়ে পড়ে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি কেন? বামাপদবাবুর দাবি, “চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করতেই হবে, এমন কোনও আইন নেই। তাই চিকিৎসকদের অনীহায় এমন পরিণতি হয়েছে।”

এখন কী পরিস্থিতি এই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের? খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ডামরা এখনও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। বাকি সব ক’টি কেন্দ্র আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হিসেবে চলছে। কিন্তু সেগুলির মধ্যে শুধু দক্ষিণ ধাদকার কেন্দ্রটিতে সপ্তাহে ছ’দিন চিকিৎসক মেলে। এ ছাড়া কোথাও তিন দিন, কোথাও আবার দু’দিন ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় বলে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ। একই অভিযোগ কর্মী, আধিকারিকদের ব্যাপারেও। ডিহিকার স্বাস্থ্যকর্মী রেখারানিদেবী গত ৩১ অক্টোবর অবসরের দিন সে সংক্রান্ত কাগজপত্র কেন পাননি, তা খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, সেখানকার ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্স্টিং অফিসার (ডিডিও) কালনা হাসপাতালে কর্মরত। মাসে এক বার তিনি আসানসোল সিএমওএইচ দফতরে আসেন। সেখানেই ডিহিকা কেন্দ্রের কাজকর্ম সারেন।

চার দশক আগে চালু হওয়া এই ডিহিকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিদ্যুৎহীন মূল ভবনটি কোনও দিনই হস্তান্তর হয়নি। ফলে, শুরু থেকেই তা চলছে মেডিক্যাল অফিসারের ঘরে। এখানে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ভরসা তিন জন কর্মী, এক জন নার্স ও এক জন সাফাইকর্মী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চিকিৎসকের দেখা মেলে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন। জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসকই ধেনুয়ায় দায়িত্ব সামলান। এলাকার বাসিন্দা দীপক সাধু, জ্যোৎস্না মাজিদের দাবি, “কোনও দিনই সময়ে ডাক্তারের দেখা মেলে না। দেরিতে আসা আর আগে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nilotpal roychowdhury asansol health centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE