Advertisement
E-Paper

সিপিএমকে ডুবিয়ে পাঁচ থেকে বারোয় বিজেপি

শতাংশের বিচারে লাফটা দ্বিগুণেরও বেশি। প্রার্থী-পদে ছিল না তেমন কোনও চমক। সংগঠনও তেমন জোরদার ছিল না। ভোটের দিন শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বহু বুথেই তারা এজেন্টও দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও গতবারের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এ বার আরামবাগ কেন্দ্রে বিজেপি ভোট বাড়িয়ে নিল প্রায় সাত শতাংশ।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০১:২১

শতাংশের বিচারে লাফটা দ্বিগুণেরও বেশি।

প্রার্থী-পদে ছিল না তেমন কোনও চমক। সংগঠনও তেমন জোরদার ছিল না। ভোটের দিন শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বহু বুথেই তারা এজেন্টও দিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও গতবারের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এ বার আরামবাগ কেন্দ্রে বিজেপি ভোট বাড়িয়ে নিল প্রায় সাত শতাংশ। ২০০৯ সালে তারা পেয়েছিল প্রায় পাঁচ শতাংশ (৪.৯৮) ভোট। এ বার প্রায় ১২ শতাংশ (১১.৭৯)। যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দলকেও।

আরামবাগ কেন্দ্রটি তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত। বিরোধীরা বরাবরই বিজেপিকে ‘বর্ণহিন্দুদের দল’ বলে কটাক্ষ করে থাকে। সেই দলও তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্রে যে ভাবে ভোট বাড়িয়েছে, তা কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে রাজনীতির কারবারিরা নিশ্চিত, সিপিএমের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছে বিজেপি। কিছু ভোট গিয়েছে কংগ্রেসের তরফেও।

সিপিএম এবং কংগ্রেস ঠারেঠোরে স্বীকার করেছে, তাদের কিছু ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। প্রাক্তন সাংসদ তথা এ বারের সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক বলেন, “নিশ্চিত ভাবেই আমাদের কিছু ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। তৃণমূলের সন্ত্রাসে যাঁরা আমাদের কাছে কোনও ভাবেই ফিরতে পারছিলেন না, তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।” একই ভাবে মহকুমা কংগ্রেস নেতা তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রভাত ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামগঞ্জে সিপিএমের মূল শক্তি ছিল তফসিলি সম্প্রদায়। কিন্তু নিরাপত্তার অভাববোধ করায় তারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। গোটা দেশেই যুব সম্প্রদায় বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। আমাদেরও কিছু ভোটার মনে হচ্ছে ওদের ভোট দিয়েছেন।”

পরিসংখ্যানও বলছে, গত বারের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এ বারে সিপিএমের ভোট কমেছে এই কেন্দ্রে। আগের বার সিপিএম পেয়েছিল ৫৪.১৮% ভোট। এ বার পেয়েছে ২৯.৯০%। এই পাঁচ বছরে ভোটারসংখ্যা বাড়ায় বেড়েছে প্রদত্ত ভোটও। গত বার ভোট পড়েছিল ১১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৩৭টি। এ বার পড়েছে ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯৭টি। এই বাড়তি ভোটেরই খানিকটাই বিজেপি-র বাক্সে ঢুকেছে বলে নিশ্চিত রাজনীতির কারবারিরা।

বিজেপির আরামবাগ জেলা সভাপতি (দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রে আরামবাগ একটি জেলা) অসিত কুণ্ডু অবশ্য সিপিএম বা কংগ্রেসের ভোট তাঁদের দিকে আসার কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “সুস্থ সংস্কৃতি চাইছেন এমন শিক্ষিত মানুষরাই আমাদের ভোট দিয়েছেন।” বিজেপি প্রার্থী মধুসূদন বাগ বলেন, “নির্বাচনের আগে অব্দি সে ভাবে কোনও জটিল হিসেব-নিকেশ আমাদের ছিল না। দেশ জুড়ে মোদী হাওয়া, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং তিন বছরের অপশাসন তো ছিলই, কংগ্রেস এবং সিপিএম জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ভোট অনেক বাড়বে বলে নিশ্চিত ছিলাম। অন্তত ২০ শতাংশ ভোট পাব ভেবেছিলাম। তা অবশ্য হয়নি। কিন্তু লড়াইয়ের মতো জমি তো পেলাম।”

২০০৯ সালের লোকসভা এবং তার পরে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে লড়েছিল কংগ্রেস। ফলে, তাদের নিজস্ব ভোট ঠিক কতটা ছিল তা নিয়ে নিশ্চিত নন মহকুমার কংগ্রেস নেতারা। এ বার কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ২.০৭% ভোট। অন্য দিকে, ৫৫.৭০% ভোট পেয়ে তৃণমূল এ বার বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে আরামবাগ কেন্দ্রটাই।

চতুর্মুখী লড়াইয়ে আরামবাগ কেন্দ্রে বিজেপি তৃতীয় স্থান পেয়েছে। তা সত্ত্বেও আগামী বছরের পুরভোট এবং তার পরের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকেই সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে তৃণমূল। কারণ, হিসেবে তৃণমূল নেতারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রে নিজেদের সরকার হওয়ায় আগামী ভোটগুলির প্রচারে সেই সুযোগ পুরোমাত্রায় ব্যবহার করবে বিজেপি। তাই আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “ভোট কাটাকাটির খেলায় বিজেপির কিছু সুবিধা হয়েছে। এ বার আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে।”

pijush nandy arambag cpm bjp lok sabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy