Advertisement
E-Paper

সরস দেওয়াল-চিত্রে জমজমাট হাওড়া

একটি দেওয়ালের গায়ে লেখা রয়েছে ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ।’ তার ঠিক পাশের দেওয়ালে পাল্টা, “আর নয় চুপচাপ, কাস্তে-হাতুড়িতেই দেব ছাপ।” কোথাও স্লোগান, কোথাও আবার কার্টুন। ছড়া ও ছবিতে জমে উঠেছে গ্রামীণ হাওড়ার দেওয়াল যুদ্ধ।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৫
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেওয়ালে দেওয়ালে। হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছবিগুলি তুলেছেন রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেওয়ালে দেওয়ালে। হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছবিগুলি তুলেছেন রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

একটি দেওয়ালের গায়ে লেখা রয়েছে ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ।’ তার ঠিক পাশের দেওয়ালে পাল্টা, “আর নয় চুপচাপ, কাস্তে-হাতুড়িতেই দেব ছাপ।” কোথাও স্লোগান, কোথাও আবার কার্টুন। ছড়া ও ছবিতে জমে উঠেছে গ্রামীণ হাওড়ার দেওয়াল যুদ্ধ।

লোকসভা ভোটের প্রচারে এখন সরগরম গোটা জেলা। পাড়ায় পাড়ায় নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। ব্যালট যুদ্ধের আগে শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল যুদ্ধ। আমতা থেকে ডোমজুড়ের সদ্য চুনকাম করা বিভিন্ন দেওয়াল মুখর হয়ে উঠেছে স্লোগান ও মজার ছড়ায়। এ বার লোকসভা ভোটের দেওয়াল দখলে গ্রামীণ হাওড়ার প্রায় সব ব্লকেই অন্য রাজনৈতিক দলগুলির থেকে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের দেওয়ালগুলিতে যেমন রাজ্য সরকারের সাফল্যর খতিয়ান দেখা যাচ্ছে, তেমনই দেখা যাচ্ছে মজার মজার ছড়া। হাওড়া সদর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটি গ্রামের তৃণমূল কর্মীরা লিখেছেন,
কংগ্রেস হারিয়ে গিয়েছে
সিপিএমে অ্যালার্জি
বিজেপিকে হারাতে হবে
জিতবে প্রসূন ব্যানার্জি।

পাঁচলার একটি দেওয়ালে লেখা হয়েছে,
হাত-হাতুড়ি কাস্তে তারা
এ বার হবে বাংলা ছাড়া
ফুটবে নাকো পদ্মফুল
ভারত গড়বে তৃণমূল।

অন্য নির্বাচনের তুলনায় দেওয়াল লিখনে পিছিয়ে থাকলেও ছড়া লিখছে সিপিএম। রাজ্য সরকারকে ব্যঙ্গ করে বিভিন্ন দেওয়ালে লেখা হয়েছে,
শিল্প তাড়াব
বেকার বাড়াব
ওড়াব জয়ের ফানুস
আমার যাত্রাপালাটার নাম মা, মাটি আর মানুষ
।”
কোথাও লেখা হয়েছে,
টেট কেলেঙ্কারি, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সরকার
আর নেই দরকার।

কারা বানাচ্ছে এই ছড়াগুলি?

সিপিএম ও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, উভয় দলের ক্ষেত্রেই ছড়ার ভাবনাগুলি আসছে দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের থেকে। কখনও কখনও দলের পুরনো কর্মীরাও ছড়া লিখছেন। হাওড়া জেলা এসএফআইয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উষ্ণীষ সিংহ রায় লিখেছেন,
মানুষের পাশে আছে কাস্তে হাতুড়ি
সেই দেখে মুছড়ে পড়েছেন মুকুল
দিল্লির স্বপ্ন দেখো না দিদিমণি
বাংলার মানুষ করবে না আর ভুল
।”
কেন লিখলেন এই ছড়া? জবাবে উষ্ণীষ জানান, “এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান মুখ মুকুল রায়। কিন্তু রামলীলা ময়দানে অণ্ণা হাজারে সভায় না আসার পর থেকেই তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে শুরু করেছে। বামেদের এই সুযোগটাই নিতে হবে।” আমতা রামসদয় কলেজের প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা ও আমতা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ঘোষ (বুবুন) আবার লিখেছেন,
কন্যাশ্রী মমতার দান
মানুষের পাশে আছেন সুলতান
উন্নয়ন কাকে বলে বুঝে নিন
সুলতান আহমেদকে ভোট দিন
।”
তাঁর দাবি, “কন্যাশ্রী প্রকল্প গোটা দেশে একটা মডেল। সাংসদ সুলতান আহমেদের কাজ ও কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্যই আমরা ভোট পেতে পারি।”

ডোমজুড় ব্লক তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের প্রবীন নেতা সুকুমার চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ছড়া ও কার্টুনের ভাবনা এক সময়ে এলাকারই এক যুবক, পেশায় একটি বাস রুটের স্টাটার বারিদবরণ মুখোপাধ্যায় দিতেন। সুকুমারবাবুর কথায়, “এখন কার্টুন ও ছড়া অনেক বেশি পরিমাণে হয়। এ বারের ভোটে দেওয়াল লেখার সময়ে বুথ স্তরের কর্মীরাই মূলত কার্টুন আঁকছেন।”

সাঁকরাইলের ঝোড়হাট গ্রামের তৃণমূল কর্মী ভোলানাথ পল্ল্যে বলেন, “২০০৯ সালের ভোটে দলনেত্রীর দক্ষতায় রেল ছুটছে এই ছবি এঁকেছিলাম। এ বার সিপিএম ও কংগ্রেসের গোপন আঁতাতকে সামনে আনার জন্য কাস্তের ভিতর হাত আঁকার কথা ভেবেছি।” বর্তমানে শিবপুর দীনবন্ধু কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ভোলানাথ মাধ্যমিক দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলে নাম লেখান। তাঁর কথায়, “প্রথম দেওয়াল লিখি ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে। অঞ্চলের বড়রাই হাতে ধরে দেওয়াল লিখতে শিখিয়ে দিয়েছেন। এখন দু’জন থাকলে একটা বড় দেওয়াল লিখে দিতে পারি।”

কথা হচ্ছিল ডোমজুড়ের মাকড়দহ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, সিপিএম কর্মী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (রঞ্জন) সঙ্গে। তিনি জানালেন, দলে কর্মীদের দেওয়াল লেখানোর কর্মশালা হয়। দলীয় মুখপত্র ও পত্রপত্রিকাতে ছড়া ও কার্টুন দিয়ে দেওয়া হয়। সেই দেখেই আমরা কাজ করি। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ভাবনা যে অলীক কল্পনা সেটা বোঝাবার জন্য অণ্ণা হাজারে মমতাদেবীর হাত ধরে দিল্লি দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন, এই কার্টুনটি দলের কর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।” সৌমিত্রবাবুর কথায়, “১৯৯৩ সালে প্রথম দেওয়াল লিখতে শুরু করি। তখন সবে কলেজ শুরু করেছি। এ বারের লোকসভা ভোটেও এলাকায় বেশ কিছু দেওয়াল লেখার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একটি প্রমাণ মাপের দেওয়াল লেখার জন্য চুন ও রং কিনতে খরচ হয় প্রায় ২০০ টাকা। সিপিএমের ক্ষেত্রে সাধারণত দলীয় কর্মীরাই দেওয়াল লেখেন। তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপিতে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে শিল্পীদের দিয়েও দেওয়াল লেখানো হয়। পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে দেওয়াল লেখালে দেওয়ালের মাপ অনুযায়ী ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দিতে হয়। শিল্পীদের সঙ্গে ১০০০ টাকার বিনিময়ে সারা দিন যত খুশি দেওয়াল লেখার হিসেবেও চুক্তি হয়।

পিছিয়ে নেই কংগ্রেস ও বিজেপি। তুলনায় কম হলেও বিভিন্ন ব্লকে নিজেদের কিছু খাস এলাকায় ইতিমধ্যেই দেওয়াল ভরিয়েছে তারা। কংগ্রেস ও বিজেপির দেওয়ালে অবশ্য ছড়ার বদলে উঠে আসছে দাবিসনদ ও সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান। কংগ্রেসের দেওয়ালে মূলত তুলে ধরা হয়েছে ইউপিএ সরকারের সাফল্যর খতিয়ান। বিজেপির দেওয়াল লিখনে উঠে আসছে কেন্দ্র-রাজ্যের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ।

ভোটের এখনও এক মাস বাকি। ছড়া-পাল্টা ছড়া, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে এর মধ্যেই তাপমাত্রা চড়চড়িয়ে বাড়ছে গ্রামীণ হাওড়ায় আনাচে কানাচে।

wall writing abhishek chattopadhyay howrah lok sabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy