Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Crime

Crime: ‘মনে হল, আমার মেয়েটাই চলে গেল’ 

আর কত দিন দগ্ধে মরতে হবে?

আর কত দিন দগ্ধে মরতে হবে? প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪০
Share: Save:

আর কত দিন আমাদের দগ্ধে দগ্ধে মরতে হবে?

আট বছর পেরিয়ে গেল। আমার মেয়ের বিচার পেলাম না। আরও একটি মেয়ে চলে গেল। সেই মেয়েও তো আমাদেরই। যখনই যেখানে এমন কোনও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাই, মনে হয় আমিই যেন সেই মেয়েটির বাবা। মনে হয়, আরও একবার যেন আমার ঘর শূন্য করে চলে গেল মেয়েটি। মনে হয়, এই তো সে দিন স্কুল থেকে ফিরে সাইকেল উঠোনে রেখে, ব্যাগটা ঘরে ছুড়ে দিয়ে মেয়েটি বলেছিল: মা, খেতে দাও তাড়াতাড়ি। খাওয়ার পরেই এক ছুটে মাঠে খেলতে চলে গেল। মনে হয়, এই তো গত কালটাও এমনই ছিল।

আমি মনে মনে সব নির্যাতিতা ফুটফুটে মেয়েকে দেখতে পাই। ওই তো ওরা মাঠে খেলছে। ওদের জামায় চোরকাটা বিঁধে যাচ্ছে। ওই যে দৌড়চ্ছে ওরা। মাঠের পরেই রেললাইন, ও দিকে। না, না রেললাইন না। রেললাইন না। আমার মেয়েটাকে রেললাইনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। পরদিন সকালে টুকরো টুকরো মেয়েটাকে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম।
আর কত দিন এ ভাবে দগ্ধ হতে হবে আমাদের? আমার মেয়েটা যদি দ্রুত বিচার পেত, তা হলে হয়তো আরও অনেক নাবালিকাকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানো যেত। দ্রুত শাস্তি হলে সকলে অন্তত জানতে পারত, এমন অপরাধের ক্ষমা নেই। কিন্তু মাঝে রাজনীতি এসে গেল। আমি কোনও দলকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু দলের লোকেরা মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। দলের লোকেরা দলের লোকেদের বাঁচাতে চেষ্টা করে। তখনই পদে পদে বাধা আসে। ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। প্রমাণ সরিয়ে দেওয়া হয়। লোভ দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয়। তখন নির্যাতিতার অসহায় পরিবার কোথায় যাবে?

একটা সময় তাঁদের মনে হবে, আর কত দিন দগ্ধে দগ্ধে মরতে হবে? যে মেয়েটা আজ চলে গেল, সে তো এই প্রশ্ন রেখেই চলে গেল। এর উত্তর কে দেবে, কারা দেবে?

(২০১৪ সালে শাসকদলের ডাকা সালিশি সভায় ধূপগুড়ির দশম শ্রেণির ছাত্রী বাবার অপমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। পর দিন তার ছিন্নভিন্ন, বিবস্ত্র দেহ মেলে রেললাইনের ধারে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Dhupguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE