তৃণমূলের মহাসমাবেশ ছিল সোমবার। সেই সমাবেশে দলের সর্ব স্তরের নেতাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই নির্দেশ মেনে কি সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল? সমাবেশ শেষে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলের অন্দরে। গত বছর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এ বার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে তাঁর হাজিরার দিকে নজর ছিল দলের সকলের। কিন্তু মঞ্চ থেকে মঞ্চের নীচে বা মঞ্চের পিছনে দলের কোনও স্তরের নেতাই তৃণমূলের কেষ্টকে দেখতে পাননি।
সভার শেষে সভাস্থল ছাড়ার সময় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয়, অনুব্রত কি এসেছেন? তিনি জানান, অনুব্রতকে তিনি সভাস্থলে দেখেননি। মঞ্চে অতিথি আপ্যায়নের জন্য বিশেষ ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের ছাত্র এবং যুব সংগঠনের নেতাদের। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, তিনিও দেখা পাননি কেষ্টদার। দক্ষিণ কলকাতা জেলা যুব এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি সারাক্ষণ মঞ্চে ছিলাম। এক বারের জন্যও অনুব্রত মণ্ডলকে দেখতে পাইনি।’’ ঘটনাচক্রে, শহিদ দিবসের সমাবেশের মঞ্চে ছিলেন বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রতের প্রবল প্রতিপক্ষ নেতা কাজল শেখ। তিনি জানাচ্ছেন, দেখতে পাননি কেষ্টকে।
আরও পড়ুন:
কেষ্ট নিজে অবশ্য অনুব্রতকে দেখতে পেয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি সভায় গিয়েছিলাম। গগন (সরকার) আর নারায়ণের (হালদার) সঙ্গে মিছিল করে গিয়েছিলাম। প্রথম দিকে মঞ্চেও উঠেছিলাম। তবে খুব গরম লাগছিল বলে তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসে মঞ্চের পিছনের দিকের একটা অস্থায়ী শিবিরে পাখার নীচে বসেছিলাম।’’
মঞ্চের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করে সভার কাজের দায়িত্ব সামলেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ভাই সন্দীপ বক্সী। অনুব্রত প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তবে কোথাও অনুব্রত মণ্ডলকে দেখতে পাইনি।’’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আবার স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে মঞ্চের পিছনের দিকে কর্মরত ছিলেন। অনুব্রতকে দেখতে পাননি তাঁরাও।
বস্তুত, অনুব্রত নিজে সভায় যাওয়ার দাবি করলেও তৃণমূলের অনেকে তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, শহিদ দিবসের সমাবেশে পুলিশি নিরাপত্তার কারণে কোনও মিছিলকেই মঞ্চের আশেপাশে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফলে নেতাদের একাই মঞ্চে আসতে হয়। প্রসঙ্গত, সোমবার কলকাতায় একটি মিছিল করেছেন বীরভূমের শিক্ষা সেলের নেতা প্রলয় নায়েক, যিনি বীরভূমের রাজনীতিতে কেষ্টর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। তিনি কলকাতার মিছিলের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানেও দেখা যায়নি অনুব্রতকে।
অনুব্রতের ‘ঘনিষ্ঠ’ বীরভূমের এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘কেষ্টদা সভায় গিয়েছিলেন কি না জানি না। তবে রবিবার ধর্মতলার সভাস্থলে গিয়ে যে ভাবে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে আসতে হয়েছিল, তা তাঁর পক্ষে অসম্মানজনক বলেই আমাদের মনে হয়েছে। তা ছাড়া কাজলের (শেখ) সঙ্গে কেষ্টদার এক মঞ্চে বসাটাও কঠিন।’’ ওই নেতা আরও বলেন, ‘‘২০২২ সালের অগস্ট মাসে কেষ্টদা যখন গ্রেফতার হন, তখন কাজল জেলার রাজনীতিতে কোণঠাসা। দাদার অনুপস্থিতিতেই কাজল তাঁর রাজনৈতিক জমি ফিরে পান। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জিতে এখন কাজল বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেষ্টদা ফিরে এলেও আগের মতো জায়গা পাননি। বরং তাঁর সভাপতিপদও চলে গিয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি কলকাতার সভায় না গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।’’