Advertisement
E-Paper

পাকা কথা হয়েছিল ইডেনের বক্সে! শুক্র-সন্ধ্যায় ‘বাউন্ডুলে’ দিলীপ আবদ্ধ বিবাহবন্ধনে, চারহাত এক ঘরোয়া আসরে

শুক্রবার গোধূলি লগ্নে দিলীপের বাড়িতে অত্যন্ত ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে দিলীপ-রিঙ্কুর চারহাত এক হবে। সেখানেও দিলীপের নিকটজনেরাই থাকবেন। রিঙ্কু বিবাহবিচ্ছিন্না। গৃহবধূ। এক পুত্রের জননী। তাঁর ছেলে সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩৬
Dilip Ghosh is getting married

দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর ভাবী স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।

কৌমার্য ভঙ্গ করলেন অকৃতদার দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার তাঁর নিউ টাউনের বাড়িতেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপের। পাত্রী রিঙ্কু মজুমদার। বিজেপি করার সূত্রেই আলাপ দু’জনের। দিলীপের ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর দিলীপ যখন খানিক বিষণ্ণ, তখন রিঙ্কুই প্রথম একসঙ্গে সংসার বাঁধার প্রস্তাব দেন। তিনি নাকি বলেছিলেন, এখন তো তাঁর সঙ্গে কেউ নেই। তিনি দিলীপের সঙ্গে থাকতে চান।

দিলীপ প্রথমে রাজি না-হলেও পরে ভেবেচিন্তে দেখে এবং তাঁর মায়ের পীড়াপীড়িতে রাজি হন। কারণ, ছ’মাস আগেও তিনি সংসারধর্ম পালনের কথা ভাবেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনিও বুঝতে পারেন, জীবনের এই বৃত্তটিও পূর্ণ করতে হবে। কার্যত ‘পাকা কথা’ নাকি হয় গত ৩ এপ্রিল ইডেনে আইপিএলে কেকেআরের ম্যাচ দেখতে দেখতে। ওই দিন ক্লাব হাউসের ১১ নম্বর বক্সে বসে খেলা দেখেন দিলীপ, তাঁর হবু স্ত্রী এবং হবু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।

বৃহস্পতিবারেই দিলীপের আসন্ন বিবাহের বিষয়টি জানাজানি হতে শুরু করেছে। সরাসরি তাঁকে প্রশ্ন করেছিল একটি সংবাদমাধ্যম। দিলীপ তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিতে বলেন, ‘‘কেন, আমি কি বিয়ে করতে পারি না নাকি? বিয়ে করা কি অপরাধ নাকি?’’ ওই সংবাদমাধ্যমকে দিলীপ ‘হ্যাঁ-না’ কিছুই বলেননি ঠিকই। তবে ‘হ্যাঁ’ যেমন বলেননি, তেমনই ‘না’-ও বলেননি। সেই কারণেই বিষয়টির সত্যতা নির্ধারণ করতে দিলীপকে বার বার ফোন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি। তবে দিলীপের ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, বরাবরের মতোই তিনি একটি ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে সূত্রের খবর, দিলীপ যাতে বিয়ে না করেন, সেই মর্মে ‘সক্রিয়’ হয়েছেন সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ। সঙ্ঘের দু’জন দিলীপের বাড়িতেও চলে গিয়েছেন! তবে দিলীপ অনড়। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন আর ফেরা সম্ভব নয়। তবে দলের একাংশ তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিলীপকে আগাম শুভেচ্ছা জানাতে দিল্লি থেকে তাঁর বাড়িতে যাচ্ছেন সুনীল বনসল এবং সতীশ ধন্দ।

শুক্রবার দিলীপের বাড়িতে অত্যন্ত ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে দিলীপ-রিঙ্কুর চারহাত এক হবে। কারণ, দিলীপ আড়ম্বরে বিশ্বাস করেন না। তাই আমন্ত্রিতের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। মূলত দিলীপ এবং রিঙ্কুর নিকটজনেরাই আমন্ত্রিত। রিঙ্কু বিবাহবিচ্ছিন্না। গৃহবধূ। এক পুত্রের জননী। তাঁর ছেলে সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত। ঘটনাচক্রে, ইডেনের বক্সে রিঙ্কুর পুত্রও ছিলেন ৩ এপ্রিল।

দিলীপের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তাঁর মা চাইছিলেন, দিলীপ বিবাহ করে সংসারী হোন। তা হলে তিনি পুত্রবধূর সঙ্গে খানিকটা সময় কাটাতে পারেন। দিলীপের মা তাঁর কাছেই থাকেন। এবং তাঁর কাছেই থাকবেন। কিন্তু দিলীপের জীবন রাজনীতিময়। আগামী বিধানসভা ভোটেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে। বিজেপি তাঁকে আবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করতে পারে। প্রচারে তো তাঁকে প্রয়োজন হবে বটেই। ফলে তাঁকে গোটা রাজ্য ঘুরে বেড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁর বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করা এবং তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য পরমাত্মীয় থাকাটা জরুরি। পাশাপাশি, দিলীপ-জননী উদ্বিগ্ন তাঁর অবর্তমানে পুত্র ‘নাড়ু’র দেখভাল কে করবেন, তা নিয়েও। দিলীপ গত বছর ষাট পেরিয়েছেন।

বিবাহের প্রস্তাবে দিলীপ প্রথমে রাজি হননি রাজনীতির কারণেই। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, দিলীপ আশা করছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে আবার রাজ্য বিজেপির সভাপতির পদে ফেরানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্ব আরও বাড়বে। বাড়বে ব্যস্ততাও। কিন্তু দিলীপের হিতৈষীরা তাঁকে বোঝান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে রাজ্য সভাপতি করবেন, তেমন আশা কার্যত নেই। তাঁরা চাইছেন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রেখে দিতে। সেটা আড়াই-তিন মাস আগের ঘটনা। শোনা যাচ্ছে, তার পরে নিমরাজি হয়েছিলেন দিলীপ। শেষে ‘পাকা কথা’ নাকি হয় ওই ইডেনের বক্সে কেকেআর-সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ ম্যাচের ফাঁকে।

‘চিরকুমার’ দিলীপ যে তাঁর কৌমার্য ভঙ্গ করতে চলেছেন, সেই মর্মে বিজেপির অন্দরে কানাঘুষোও চলছিল। কিন্তু কেউই নিশ্চিত ছিলেন না। দেখা হলে কেউ কেউ অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করেছেন। কিন্তু দিলীপ নিজে কাউকে বিষয়টি জানাতে না-চাওয়ায় বিবাহের বিষয়টি গোপনই রাখা হয়েছিল। তবে এর পরে ‘সংসারী’ দিলীপ তাঁর দার পরিগ্রহ করার বিষয়টি সকলের গোচরে না এনে পারবেন না। শুধু দেখার, এর পরে কোনও জমকালো ভোজন এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কি না। যদিও দিলীপ আড়ম্বরে বিশ্বাসী নন।

Dilip Ghosh BJP Leader
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy