রেলমন্ত্রী থাকার সময় বাজেটে ভাড়া বাড়ানোয় মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন তিনি। সে সময়ে ভাড়া বাড়ানোর সপক্ষে তিনি বলেছিলেন, রেল আইসিইউয়ে চলে গিয়েছে। তাই ভাড়া না বাড়িয়ে কোনও উপায় ছিল না। সেই দীনেশ ত্রিবেদীই আজ তৃণমূলের তরফে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানালেন ভাড়া বৃদ্ধির প্রশ্নে।
রেলমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা থাকায় দীনেশকে আজ রেল বাজেট নিয়ে বিতর্কে নীতিগত প্রশ্নে সরকারকে আক্রমণ শানানোর দায়িত্ব দিয়েছিল দল। বাংলার রেল প্রকল্পগুলি কী ভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছে, তা তুলে ধরেন শুভেন্দু অধিকারী।
রেল বাজেট নিয়ে বিতর্কে দীনেশ বলেন, “আমার সময়ে প্রতি কিলোমিটারে মাত্র দু’পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। যা পরে প্রত্যাহার করা হয়। আর এখন সেখানে ১৪ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে গরিব মানুষের উপর আরও চাপ বাড়বে।” এই সূত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি দীনেশ। তিনি মনে করিয়ে দেন, গত বছর রেল বাজেটের ঠিক আগে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউপিএ সরকার। সে সময়ে সংসদকে এড়িয়ে ওই ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ করেছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকারও একই কাজ করেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের তাই দাবি, তড়িঘড়ি এ ভাবে ভাড়া বাড়ানোর ব্যাখ্যা দিতে হবে সরকারকে।
কোষাগার প্রায় খালি। মোদী সরকার তাই অলাভজনক বেশ কিছু সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। এরও কড়া সমালোচনা করেন দীনেশ। রেল মন্ত্রক তৃণমূলের হাতে থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলে এসেছেন, শুধুই লাভক্ষতির অঙ্কে রেলকে দেখা চলতে পারে না। দেশে রেলের একটা বড় সামাজিক দায়ও আছে। সেই নীতির নিরিখেই মোদী সরকারকে বিঁধে দীনেশের প্রশ্ন, “তা হলে বস্তার বা জঙ্গলমহলের মতো অনুন্নত এলাকার মানুষের স্বার্থের কথা কে ভাববে? ওই সমস্যা মেটাতে রেলের প্রকল্প রূপায়ণে সরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
লালু প্রসাদ থেকে মমতা, পরে দীনেশের আমলেও রেলে বিনিয়োগ টানতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ তথা পিপিপি মডেলের উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। সদানন্দ গৌড়ার রেল বাজেটেও পিপিপি-র উপরে ভরসা রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গৌড়ার ব্যবসায়িক মডেলটি ঠিক কী তা-ও জানানোর দাবি রাখেন দীনেশ।
নীতিগত প্রশ্নে দীনেশের আক্রমণের পাশাপাশি রেল বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগে সংসদে সরব হন শুভেন্দু। আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়-সহ তাঁর দলের নেতারা দাবি করে আসছেন, রেল বাজেটে বরাদ্দের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। নানা প্রকল্পের উদাহরণ ধরে ধরে শুভেন্দু প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, ওই দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “দক্ষিণেশ্বর-দমদম-ব্যারাকপুর মেট্রোর জন্য প্রয়োজন ১,৯৭৭ কোটি টাকা। বরাদ্দ হয়েছে ২০ কোটি টাকা। কোচবিহারে সিগন্যালিং কেন্দ্র গড়তে দরকার ৭৮ কোটি। বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ টাকা। দক্ষিণ বারাসত থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর ডাবলিং-এর কাজে যেখানে ১৫৫ কোটি প্রয়োজন সেখানে দেওয়া হয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। আদ্রা কোচ কারখানার জন্য দরকার ১৭৬ কোটি ও খড়্গপুর ওয়াগন কারখানার জন্য ১০০ কোটি টাকা। দু’টি প্রকল্পই পেয়েছে এক হাজার টাকা করে। চন্দ্রনগর থেকে বকখালি পর্যন্ত নতুন লাইন পাততে যেখানে ৪০৪ কোটি টাকা প্রয়োজন সেখানে প্রাপ্তি ১ কোটি টাকা। শুভেন্দু উল্লেখ করেন, বাংলার বেশ কিছু রেল প্রকল্পের জন্য একটি টাকাও বরাদ্দ করেনি মোদী সরকার। শালিমার টার্মিনালের উন্নয়ন, খড়্গপুরে অ্যাক্সেল কারখানা নির্মাণ, দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম নতুন লাইন পাতার কাজ তারই কয়েকটি।” মমতার সুরেই শুভেন্দুর দাবি, “আমরা ভিক্ষা চাইছি না। কিন্তু যে প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে তা যাতে সময়ে শেষ হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করুক কেন্দ্র।”
আর্থিক ভাবে দুর্বল রেলের পক্ষে যে তৃণমূলের এই দাবি মেটানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়, তৃণমূল নেতৃত্বও তা ভাল করে জানেন। জবাবি বক্তৃতায় গৌড়া তাদের ওই আক্রমণের মোকাবিলা করেন কী ভাবে, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy