Advertisement
E-Paper

কার্ড নেই? শপিং মল ফেরাল ক্রেতাদের

রাতারাতি নোট বাতিলের জেরে শুধু পাড়ার ছোট দোকানেই নয়, শহরের বিভিন্ন শপিং মলেও কেনাকাটা করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হল আমবাঙালিকে। ধর্মতলা-সল্টলেক-তেঘরিয়া ছবিটা সর্বত্র একই। খুচরো নেই, তাই মুশকিল আসান এখন ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৬
ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডেই বিকিকিনি। বুধবার, ধর্মতলায়। — দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডেই বিকিকিনি। বুধবার, ধর্মতলায়। — দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

রাতারাতি নোট বাতিলের জেরে শুধু পাড়ার ছোট দোকানেই নয়, শহরের বিভিন্ন শপিং মলেও কেনাকাটা করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হল আমবাঙালিকে।

ধর্মতলা-সল্টলেক-তেঘরিয়া ছবিটা সর্বত্র একই। খুচরো নেই, তাই মুশকিল আসান এখন ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড। কিন্তু অনেকের কাছে আবার খুচরো টাকা, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড না থাকায় ফিরে যেতে হয়েছে খালি হাতেই।

বাগুইআটির একটি শপিং মলে কেনাকাটা করতে গিয়ে ১০০ টাকার নোট না থাকায় সমস্যায় পড়েন নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি ২০০০ টাকার জিনিস কেনেন। কিন্তু কাউন্টারে যেতেই শপিং মলের কর্মী জানিয়ে দেন ১০০০ টাকার নোট নেবেন না। পকেট হাতড়ে খুচরো ১৭০০ টাকা খুঁজে পেলেও বাকি ৩০০ টাকা জোগাড় হল না। বাধ্য হয়েই বাদ দিতে হল জরুরি কিছু জিনিস। আফশোসের সুরে নির্মলবাবু বললেন, ‘‘কার্ডটা সঙ্গে নিয়ে এলে এত ঝামেলা হত না। কী ভাবে বুঝব রাতারাতি সব বদলে যাবে!’’

কয়েক মাস পরে সদ্য মঙ্গলবার রাতে দুবাই থেকে কলকাতায় পা রেখেছেন রিতা অগ্রবাল। জানতে পারেননি এত বড় বদলের খবরটা। সকালে তেঘরিয়ার একটি শপিং মলে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে তো মাথায় হাত! কেনাকাটার পরে কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারেন ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে। তবে সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড থাকায় অবশ্য কোনও অসুবিধা হয়নি তাঁর।

বিকেলে ধর্মতলার একটি শপিং মলের ছবিও ছিল এক। খুচরোর অভাবে এ দিন বহু ক্রেতাকেই কেনাকাটা না করেই ফিরে যেতে হয়। অন্য দিন ওই মলে যাঁরা কোন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু বা কোন কোম্পানির সর্ষের তেল সবচেয়ে ভাল তা বোঝাতে ব্যস্ত থাকেন, এ দিন সেই কর্মীরা কিছু কেনার আগেই ক্রেতাদের জানিয়ে দিচ্ছিলেন ৫০০ টাকার নোট দিলে জিনিস মিলবে না।

বাড়িতে দু’টি ৫০০ টাকার নোট আর পকেটে দু’টি ৫০ টাকার নোট। আর যে তিনটি ১০০ টাকার নোট ছিল, তা নিয়ে স্ত্রী বেরিয়ে গিয়েছেন অফিসে। এ দিকে বাজার করতে হবে। ৫০০ টাকার নোট বাজারে নেবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান বেলেঘাটার দেবাশিস জানা সটান হাজির হন বাইপাসের শপিং মলে। বললেন, ‘‘ক্রেডিট কার্ড এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিল।’’

সল্টলেকের বাসিন্দা রঞ্জিনী লাহিড়ীর সঙ্গে কয়েকটি ১০০ টাকার নোট রয়েছে বটে, তবে তা এখন মহার্ঘ্য। খরচ করতে চাইছেন না। ক্রেডি়ট কার্ডে যখন আলু-পেঁয়াজ কেনার সুযোগ রয়েছে, তখন আর খুচরো বার করা কেন! এ দিকে সল্টলেকে বাপের বাড়িতে এসে বাজার করতে বেরিয়েছিলেন বিদিশা কার্ফা। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব! পাইকারি বাজারে সব্জি-মাছ কিনতে গেলে এখন খুচরো দেবে না। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে শপিং মল থেকেই স্টক বাড়িয়ে রাখছি।’’

শহরের বহু শপিং মলে এ দিন অনেকেই কানের দুল কিংবা সাজসজ্জার জিনিস কিনে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট খুচরো করতে এসেছিলেন। কিন্তু খুচরো মেলেনি কোথাওই। কাজেই জিনিস পছন্দ করেও ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে সব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীরা জানিয়ে দিচ্ছেন, টাকায় লেনদেন করতে হলে খুচরো দিতে হবে, না হলে ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ডই ভরসা। গিরিশ পার্কের বাসিন্দা তনুকা সেন এ দিন ধর্মতলার একটি শপিং মলে সাবান, শ্যাম্পু, রান্নার তেল ইত্যাদি কিনতে এসেছিলেন। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ছাড়াও সঙ্গে ছিল ক্রেডিট কার্ড। নোট নেওয়া হবে না শুনে বললেন, ‘‘ভাগ্যিস ক্রেডিট কার্ডটা সঙ্গে ছিল। না হলে কেনাকাটা না করেই ফিরে যেতে হত।’’

রাত সাড়ে ন’টার বদলে মঙ্গলবার রাত আড়াইটে পর্যন্ত খোলা ছিল তেঘরিয়ার শপিং মলটি। কর্তৃপক্ষ জানালেন, বিপুল পরিমাণে ৫০০ এবং ১০০০ টাকা নোট তাঁদের কোষাগারে ঢুকেছে। একই সঙ্গে ১০০ টাকার নোটও প্রচুর পরিমাণে বেরিয়েছে। বুধবার দুপুরে তাই তাঁদের কাছেও ১০০ টাকার নোট ছিল বাড়ন্ত। এক কর্মীর কথায়, ‘‘অন্য দিন যেখানে দিনে ৫০০০ টাকার মতো বিকিকিনি হয়, এ দিন সকাল থেকে সেই পরিমাণ প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কমে গিয়েছে। কমেছে ক্রেতার সংখ্যাও।’’

সল্টলেকের আর একটি শপিং মলের ম্যানেজার কিশোর দাস জানালেন, বুধবার এমনিতে অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হয় বলে ভিড়ও বেশি হয়। সেই ক্রেতাদের অধিকাংশই নগদে কেনেন। কিন্তু নোট নিয়ে এই সমস্যার পরে এই বুধবার ক্রেতার সংখ্যা ছিল তুলনায় কম।

Money Currency no Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy