Advertisement
০২ মে ২০২৪

আলু চাষিদের আত্মহত্যা নিয়ে উত্তাল বিধানসভা

রাজ্যে একের পর এক আলু চাষির মৃত্যু নিয়ে বিরোধী ও শাসক দলের চাপানউতোরে সোমবার সরগরম থাকল বিধানসভা। এ দিন কৃষি ও কৃষি বিপণন বাজেট নিয়ে আলোচনা ছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, ফসলের দাম না পেয়ে ইতিমধ্যেই অনেক চাষি আত্মহত্যা করেছেন। অথচ, সে দিকে সরকারের নজর নেই। মেলা-খেলার আয়োজন নিয়ে তারা ব্যস্ত। অন্য দিকে সরকার পক্ষের দাবি, ফসলের দাম সংক্রান্ত কোনও কারণে রাজ্যে এক জন চাষিও আত্মহত্যা করেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:৫০
Share: Save:

রাজ্যে একের পর এক আলু চাষির মৃত্যু নিয়ে বিরোধী ও শাসক দলের চাপানউতোরে সোমবার সরগরম থাকল বিধানসভা। এ দিন কৃষি ও কৃষি বিপণন বাজেট নিয়ে আলোচনা ছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, ফসলের দাম না পেয়ে ইতিমধ্যেই অনেক চাষি আত্মহত্যা করেছেন। অথচ, সে দিকে সরকারের নজর নেই। মেলা-খেলার আয়োজন নিয়ে তারা ব্যস্ত। অন্য দিকে সরকার পক্ষের দাবি, ফসলের দাম সংক্রান্ত কোনও কারণে রাজ্যে এক জন চাষিও আত্মহত্যা করেননি। বরং গত চার বছরে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতিই করেছে পশ্চিমবঙ্গ।

এই পরিস্থিতিতে কৃষি বাজেটের উপর বামেরা ভোটাভুটি চান। কিন্তু স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা মঞ্জুর না করায় হইচই জুড়ে দেন বাম বিধায়করা। বাজেট বক্তৃতা চলাকালীনই বিধায়করা ওয়েলে বসে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বাম বিধায়কেরা ওয়াক আউট করেন।

এ দিন কৃষি বিভাগের বাজেট বিতর্কে যোগ দিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক পরেশ অধিকারী, সিপিএম বিধায়ক চৌধুরী মহম্মদ হেদায়েতুল্লা, কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের খানেদের বক্তব্য, দাম না পেয়ে রাজ্যে এ পর্যন্ত ২৩ জন আলুচাষি আত্মহত্যা করেছেন। অথচ মৃত চাষিদের পরিবারের জন্য সরকার কিছু করছে না। কিন্তু বিষ মদে মৃত্যু হলে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।

বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য আবার দাবি করেন, এ পর্যন্ত ২৭ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন। স্পিকারের কাছে মৃত চাষিদের নাম-পরিচয়ও জমা দেন তিনি। শমীকবাবুর বক্তব্য, ‘‘সরকার আলু চাষিদের করুণ অবস্থার কথা গোপন করছে। বিষ মদে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ মিলছে, বোমা বাঁধতে গিয়ে মারা গেলে সরকারি টাকা মিলছে। কিন্তু আলু চাষিদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না।’’ আলু রফতানির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু ছাড় দিয়েছে। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য তার সুযোগ নিতে পারলেও এ রাজ্য তা নিতে ব্যর্থ বলেও দাবি করেন তিনি। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পাণ্ডাও আলু চাষিদের বিষয়ে সরকারি নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বিরোধীদের সব দাবি উড়িয়ে দিয়ে এ দিনই বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, দাম না পেয়ে এই রাজ্যে কোনও আলু চাষি আত্মহত্যা করেননি।

কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জবাবি বক্তৃতায় বলেন, ‘‘যে কোনও আত্মহত্যা দুর্ভাগ্যজনক। তবে আরও দুর্ভাগ্যজনক সেটা নিয়ে রাজনীতি করা।’’ এ দিন বিতর্কে যোগ দিয়ে বিরোধীরা কৃষি উন্নয়নের টাকায় নানা ধরনের উৎসব পালনের অভিযোগ তোলেন। উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘‘চলতি বছর ‘আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। তার বহু আগেই আমরা মাটি উৎসব শুরু করেছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গত চার বছরে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে রাজ্যে একর প্রতি ফলন অনেক বেড়েছে।’’

আলু চাষিদের নিয়ে বিরোধীদের আনা নানা অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী অরূপ রায় বলেছেন, ‘‘এ বার আলু উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশি। তাই যাতে আলু চাষিরা অন্য দেশে বা অন্য রাজ্যে আলু পাঠিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারেন, তার জন্য সরকার কিছু সুবিধার ঘোষণা করেছে।’’ তাঁর দাবি, আলু রফতানিতে পরিবহণ খরচের উপর ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাইরে আলু গেলে এখানকার চাষিরা ভাল দাম পাবেন। এ ছাড়া, সাড়ে ৫ টাকা কিলো দরে আলু কিনে তা মিড ডে মিলের জন্য দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী আরও জানান, আমাদের রাজ্যে প্রতি বছর উৎপাদিত ফসলের ৩০-৩৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। সে কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের চাষিদের পণ্য বিপণনের জন্য কৃষক বাজার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৮৮টি বাজার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৮৪টির কাজ চলছে। কৃষক বাজারে হিমঘর তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly Discuss potato farmer BJP Trinamool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE