আগামী লোকসভা নির্বাচনে দলের জন্য বাংলার জমিকে বিশেষ ঊর্বর বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। এ রাজ্য থেকে অন্তত ২২টা লোকসভা আসন জিতে দেখানো তাঁদের লক্ষ্য বলে বারেবারেই দাবি করছেন দিলীপ ঘোষেরা। কিন্তু দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্যের নানা প্রান্ত ঘুরে সমীক্ষা চালিয়ে বিজেপিরই একটি নিজস্ব দল রিপোর্ট দিয়েছে, বাংলায় একটাও লোকসভা আসন এখন গেরুয়া ঝুলিতে যাওয়া নিশ্চিত নয়!
রাজ্যে তারা বেশির ভাগ লোকসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রধান বিরোধী শক্তির মর্যাদা পেতে পারে। কিন্তু ২০১৯-এ নরেন্দ্র মোদীকে ফের প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে বাংলা থেকে আসন ‘উপহার’ দেওয়া দুরাশা, এমনই মনে করছে সমীক্ষক দল! বিজেপি নেতারা অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও আলোচনাতেই নারাজ। তাঁরা রাজ্যে ২২ থেকে ২৫ আসন পাওয়ার দাবিই বজায় রাখছেন।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সমীক্ষক দলটি ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে রাজ্যের জেলা, ব্লক এবং বুথ স্তরে ঘুরে ঘুরে সংগঠনের হাল বুঝছেন। সূত্রের খবর, আসন্ন লোকসভা ভোটে কোন কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করলে লড়াই ভাল হবে, কেন্দ্র পিছু সমীক্ষা করে সেই তালিকাও তৈরি করতে বলা হয়েছে তাঁদের। ওই সমীক্ষক দলের দায়িত্বে রয়েছেন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-র এক প্রাক্তন নেতা।
এ রাজ্যে সংগঠনের প্রকৃত অবস্থা জানতেই নিজস্ব প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন শাহেরা। ওই দল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে রিপোর্ট দিয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে ভোটবাক্স অবধি টেনে নিয়ে যেতে হলে যে সংগঠন দরকার, তার এখনও অভাব আছে। যদিও দলেরই অন্য অংশের বক্তব্য, মানুষের ক্ষোভ সব সময় সংগঠন দেখে ভোটে রূপান্তরিত হয় না। রাজ্যওয়াড়ি সংগঠনের হাল ধরে বিচার করলে উত্তরপ্রদেশ বা ত্রিপুরায় বিজেপির জয় অভাবিতই ছিল। কিন্তু সেখানে তো জয় এসেছে!
লোকসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শুধু রাজ্য নেতৃত্বের ‘পছন্দে’র উপরে ছেড়ে রাখতে চান না শাহেরা। তাই এ বার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও পেশাদারিত্ব আনতে সমীক্ষক দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে প্রার্থী করার জন্য এক বা দু’জনের নাম পাঠাবেন রাজ্য নেতৃত্ব। পাশাপাশি, ওই সমীক্ষক দল এলাকায় সমীক্ষার ভিত্তিতে জনপ্রিয়তা বিচার করে কেন্দ্র পিছু তিন জনের নাম পাঠাবে। দু’পক্ষের তালিকা মিলিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
কিন্তু এ ভাবে অন্য প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে দলের বিষয়ে সমীক্ষা করানো কি রাজ্য নেতৃত্বের উপরে শাহদের অনাস্থার প্রকাশ নয়? বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের মতে, ‘‘এখানে অনাস্থার ব্যাপার নেই। অমিতজি যেখানে যত আসন পাবেন বলেন, সেখানে তা-ই পেয়ে দেখান। তার জন্য একাধিক সমীক্ষক দল পাঠিয়ে ভোটার এবং সংগঠনের তথ্য সংগ্রহ করেন। বাংলাতেও তিনি সেই পথেই হাঁটছেন।’’