Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
Doctor Rumelika Kumar

ডাক্তারদের আন্দোলনের নেত্রীর গবেষণায় বিড়ি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, প্রান্তিক যোগও রাখছেন রুমেলিকা

রুমেলিকা আপাতত ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্‌থ’-এ পভার্টি মেডিসিনের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। তা পড়তে গিয়েই জোড়া গবেষণা করেছেন বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে।

Doctor Rumelika Kumar wants to work with people from marginalized sections of the society

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩৪
Share: Save:

চলমান চিকিৎসক আন্দোলনের অন্যতম মুখ তিনি। স্পষ্ট কথা বলেন। এক দিকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সমালোচনায় বিঁধতে পারেন রাজ্য সরকারকে। আবার পাশাপাশি বলতে পারেন, ‘‘রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আমাদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন।’’

তিনি রুমেলিকা কুমার। যিনি তাঁর চিকিৎসাশিক্ষার সঙ্গে জুড়তে চেয়েছেন প্রান্তিক অংশের মানুষকে। দু’টি গবেষণায় তাঁর বিষয় ছিল বিড়ি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য।

রুমেলিকা আপাতত ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্‌থ’-এ পভার্টি মেডিসিনের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। তা পড়তে গিয়েই জোড়া গবেষণা করেছেন বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে। একটির বিষয় ছিল বিড়ি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য এবং অন্যটির ঋতুচক্র চলাকালীন মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের অবস্থা। কেন বেছে নিলেন বিড়ি শ্রমিকদের? রুমেলিকার জবাব, ‘‘প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কেউই খুব একটা চর্চা করেন না। সে কারণেই আমি বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা করার কথা ভাবি। আসলে তাঁরাই সমাজের সর্ববৃহৎ অংশ।’’

বর্ধমানের নবগ্রামের ‘ভূমিকন্যা’ হলেও রুমেলিকার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবই কলকাতায়। মাধ্যমিক পর্যন্ত রুমেলিকা পড়তেন বেথুন স্কুলে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা গোখেল মেমোরিয়ালে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে ভর্তি হন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। একটা সময়ে ছাত্র সংগঠন পিডিএসএফ করতেন। তবে এখন তিনি সরাসরি কোনও ছাত্র সংগঠনে যুক্ত নন। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগে জড়িয়ে রাখেন নিজেকে।

গবেষণার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রুমেলিকা জানিয়েছেন, বিড়ি শ্রমিকদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, গ্যাসট্রিক, চর্মরোগ খুবই সাধারণ বিষয়। তবে ঋতুচক্র চলাকালীন মহিলাদের করুণ অবস্থার কথাও জানিয়েছেন রুমেলিকা। তাঁর কথায়, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের পরিবারের মেয়েরা অধিকাংশই স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার জানেন না। স্কুল-কলেজে যাঁরা পড়েন, তাঁরা ঋতুচক্র চলাকালীন বাড়ির বাইরে যান না। এতটাই খারাপ অবস্থা।’’ রুমেলিকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, মথুরাপুর এলাকার বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। জানিয়েছেন, বিড়ি শ্রমিকদের সাধারণ স্বাস্থ্য খারাপ। তবে মহিলাদের অবস্থা আরও শোচনীয়।

রুমেলিকারা যখন সরকারি হাসপাতালে টানা কর্মবিরতি চালিয়ে গিয়েছেন, তখন সরকার তথা শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ভাবে বলা হয়েছে, গরিব মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। অভিযোগ, জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজ না করার ফলেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণও দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে রুমেলিকা মনে করেন, এটাও সরকার ‘পরিকল্পিত’ ভাবে করছে বা করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতাল তো সকলের জন্য। কিন্তু সরকার বারংবার গরিব মানুষের কথা বলে এটাকে বিজ্ঞাপিত করছে। যাঁর হাতে সামান্য পয়সা রয়েছে, তিনি যাচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। যাঁর নেই, তিনি যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে।’’ এখানে যে সরকারের তরফে ‘বৈষম্যমূলক’ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেছেন রুমেলিকা। নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। আমার ছোটবেলায় ছোটখাট শরীর খারাপ হলে বাবা-মা মেডিক্যাল কলেজেই দেখাতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন আর সেটা হয় না।’’ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাবও রয়েছে তাঁর। রুমেলিকার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে যত টাকা খরচ করা হয়, তার যৎসামান্য অংশ খরচ করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বদলে ফেলা সম্ভব।’’

ডাক্তারি পেশার সঙ্গেই রুমেলিকা জুড়ে রাখতে চান তাঁর প্রান্তিক যোগাযোগকে। মনে করেন, তাঁরাই সমাজের ভরকেন্দ্র। জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে আগ্রহী রুমেলিকা চান তা জারি রাখতে। যেমন জারি রেখেছেন আন্দোলনও। তবে বার বার একটাই কথা উচ্চারণ করে গেলেন, ‘‘এই আন্দোলন মানুষের। এখানে কেউ আলাদা করে মুখ নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Junior Doctor R G Kar Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE