Advertisement
E-Paper

হাসপাতালে খেপ খেলেন ‘ভূতেরা’, আছে এজেন্সিও

ফেল কড়ি পাও ‘ভূত’! তৈরিই আছে তালিকা। এক-এক জনের এক-এক দর। দরকার মতো দিন-তারিখ জানিয়ে কড়ি ফেললেই সশরীর হাজির হন তাঁরা! ভূতের গল্প নয়, এ হল রাজ্যের ‘ভূত ডাক্তার’‌দের কিস্সা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৮

ফেল কড়ি পাও ‘ভূত’! তৈরিই আছে তালিকা। এক-এক জনের এক-এক দর। দরকার মতো দিন-তারিখ জানিয়ে কড়ি ফেললেই সশরীর হাজির হন তাঁরা!

ভূতের গল্প নয়, এ হল রাজ্যের ‘ভূত ডাক্তার’‌দের কিস্সা। দিল্লি থেকে আসবে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পরিদর্শক দল। কাগজে-কলমে যত চিকিৎসক রয়েছে, বাস্তবে তা নেই। তবু অনেক বেসরকারি হাসপাতালেরই চিন্তা নেই এতে। ওঁরা আছেন যে! এমডি, এমএস, স্পেশালিস্ট— সব রকম তালিকা মজুত ওদের কাছে। টাকা ফেললেই এমসিআইয়ের পরিদর্শনের দিন চলে আসেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। এমনকী, ভিন্‌রাজ্য থেকেও।

সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি নিজেদের মধ্যে বদলাবদলি করেই থাকে। আরজিকর থেকে এনআরএস, মেডিক্যাল থেকে ন্যাশনাল, মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান, এসএসকেএম থেকে বাঁকুড়া— এ সব লেগেই আছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল কী করবে? তাদের চাহিদা মেটাতে গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু এজেন্সি। ওরাই মুশকিল আসান। সরকারি, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসকদের অনেকেই এই সব এজেন্সির সঙ্গে মোটা টাকায় চুক্তিবদ্ধ। ডাক এলেই ‘ভাড়া’ খাটতে যেতে হবে। চিকিৎসা জগতের ঘরোয়া আলোচনায় এই সব শিক্ষক-চিকিৎসকেরা ‘গোস্ট ডক্টরর্স’। সংশ্লিষ্ট বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের খাতায় নামও রয়েছে তাঁদের। তবে এমনিতে যেতে হয় না। চুক্তিমতো দেখা মিলে কেবল এমসিআইয়ের পরিদর্শনের সময়ে।

কী ভাবে কাজ করে এই সব ‘ভূত ডাক্তার’‌দের এজেন্সি? সেই বৃত্তান্ত জানতে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে কথা বলা হয়েছিল কয়েকটি এজেন্সির সঙ্গে (কথোপকথন রেকর্ড করা আছে)।

এমনই এক এজেন্সির প্রধান বি কে সরকার বলেন, ‘‘দুর্গাপুর-হলদিয়ার সব মেডিক্যাল কলেজে ভাড়ায় ডাক্তার দেওয়ার কাজ আমরা দেখি। ২-৩ ফেব্রুয়ারি একটি কলেজে এমসিআই ভিজিট রয়েছে। ওদের জন্য সব ডাক্তার বুক হয়ে গিয়েছে। দিনে ৪০ হাজার করে দিচ্ছে।’’ এ যাত্রায় তাই সুযোগ নেই, জানালেন সরকারবাবু। পরের বারের জন্য নাম লিখিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে বললেন, ‘‘রেজিস্ট্রেশন আপডেট করে রাখবেন। ডাক্তার বন্ধুবান্ধব কেউ আগ্রহী হলে বলবেন।’’ এ-ও জানিয়ে রাখলেন, সরকারি ডাক্তার না হলেই ভাল।

আর এক সংস্থার বৈচিত্র্যবাবু জানালেন, তিনি আপাতত বজবজের এক কলেজে এমসিআই ভিজিটের জন্য ডাক্তার জোগাড় করতে ব্যস্ত। সেখানে এমসিআই-এর নির্দিষ্ট করে দেওয়া ডাক্তারের সংখ্যার থেকে প্রায় ৪৬% ঘাটতি রয়েছে।

ওই এজেন্ট জানাচ্ছেন, এখন মডেলটা একটু বদলেছে। আজকাল শুধু এমসিআই ভিজিটের দু’দিন থাকলে চলে না। আগুপিছু অন্তত দু’সপ্তাহ রোজ সকালে ২ ঘণ্টা করে হাজিরা দিতে হয়। জুনিয়ররা দিনে ২,৫০০, আর সিনিয়ররা দিনে ৫-৭ হাজার করে পান। পরিদর্শনের দু’টো দিন ২৪ ঘণ্টা থাকার জন্য মেলে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

বজবজের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এক কর্তা বলেন, ‘‘মোটা টাকা দিয়ে চিকিৎসক ভাড়া করার বিষয়ে কিছু জানি না। আমরা স্থায়ী চিকিৎসক দিয়েই শূন্যস্থান ভরাট করার চেষ্টা করছি।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের একটি কলেজ সূত্রের খবর, গত বছর এমসিআই পরিদর্শনের সময় বিহার, গুজরাতের মতো রাজ্য থেকেও এজেন্ট মারফত চিকিৎসক আনতে হয়েছিল তাদের। তার খরচের ধাক্কায় গত নভেম্বর মাস থেকে সকলের বেতন বন্ধ হয়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্য ভবনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রকল্পে কর্মরত এক চিকিৎসক ও কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত পূর্ণ সময়ের প্যাথোলজিস্ট জানালেন, এমসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সামনে দু’দিন ‘খেপ খেলে’ তাঁরা দিনে ৫০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটির এক কর্তার যুক্তি, ‘‘জেলায় কোনও শিক্ষক-চিকিৎসক আসতে চান না। বাধ্য হয়ে স্নাতকোত্তরে এমসিআই পরিদর্শনের সময় বিহার, গুজরাত থেকে ডাক্তার ভাড়া করেছি। রাজ্যের কিছু প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকেও ডাক্তার আনা হয়েছে।’’

এমসিআইয়ের কানে কি এ সব অভিযোগ যায়নি?

এমসিআইয়ের গ্রিভ্যান্স সেলের চেয়ারম্যান অজয় কুমার বলেন, ‘‘এই সব এজেন্সিগুলির কথা আমরা জানি। সেই জন্যই আমরা সব মেডিক্যাল কলেজের টিচিং এরিয়ায় বাধ্যতামূলক ভাবে সিসিটিভি রাখার কথা বলেছি। শিক্ষক-চিকিৎসকদের বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ অজয় কুমারের দাবি, ‘‘ওই সব নিয়ম চালু হলে চিকিৎসক ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে।’’

Hospitals Doctors Ghost Doctors MCI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy