নোট বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার কলকাতায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখা এবং প্রায় ৫০টি এটিএম ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী। টাকা তোলার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললেন। দুর্ভোগের কথা শুনে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। ‘কালো সরকারের কালো নীতি’, কেন্দ্রকে এ দিন এই ভাষাতেই আক্রমণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে যান শরৎ বসু রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায়। তার পর তিনি যান আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রোডে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী একটি বেসরকারি এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা তথা এটিএম কাউন্টার পরিদর্শন করেন। প্রায় সর্বত্রই এ দিন দুর্ভোগের ছবিটা একই রকম ছিল। অধিকাংশ জায়গাতেই এটিএম বন্ধ, অকেজো বা টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। অনেক জায়গাতেই ব্যাঙ্কের কাউন্টার থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোথাও আবার ব্যাঙ্কেও টাকা নেই। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকে খুচরো টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ২০০০ টাকার নোট দেওয়া হচ্ছে।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পরিস্থিতি আঁচ করার চেষ্টা করেন। তাঁরাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ বা ১০০ টাকার নোট দেওয়া হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ২০০০ টাকার নোট দেওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষ কোথা থেকে টাকা ভাঙাবেন, মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রশ্ন তোলেন। গ্রাহকদের তিনি বলেন, ‘‘২০০০ টাকা দিলে নেবেন না। বলুন ১০০ টাকার নোট দিতে।’’
ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
যে ব্যাঙ্কেই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন গিয়েছেন, সেখানেই গ্রাহকদের সঙ্গে অনেক ক্ষণ ধরে কথা বলেছেন তিনি। জানতে চেয়েছেন, কার কী পেশা। তার পর মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কালোটাকার আসল কারবারিদের না ধরে সাধারণ মানুষকে হয়রান করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী যখন এলগিন রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সামনে যান, তখন শাখার ম্যানেজার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বাইরে বেরিয়ে আসেন। অব্যবস্থা নিয়ে তাঁকেও প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর উষ্মার মুখে পড়তে হয়। পর্যাপ্ত নোটের ব্যবস্থা না করে পুরনো নোট বাতিল করা হল কেন? ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেন, ব্যাঙ্ক কর্মীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কেন্দ্রীয় সরকারই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: দেশকে বিপদে ফেলে জাপান থেকে শাসাচ্ছে, গুলি করবে? ক্ষিপ্ত মমতা
এর পর টুইটারেও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর টুইট, ‘‘এটা একটা বৃহৎ কালো কেলেঙ্কারি। সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা আর বেআইনি লেনদেনকারীদের সুবিধা।’’ মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছেন।