Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আলাদা, একটার সঙ্গে আর একটার তুলনা করবেন না, মমতার ইঙ্গিতে সন্দেশখালি-বার্তা

সন্দেশখালি নিয়ে যখন শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তখন বুধবারের সভা থেকে তা-ও প্রশমিত করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘আমি জ্ঞানত কোনও ভুলকে সমর্থন করি না।’’

Mamata Banerjee

খাতড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফেসবুক।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৫
Share: Save:

মহিলাদের মেজাজ, শাসকনেতাদের কোণঠাসা করে রাখা, লাগাতার আন্দোলন— বিবিধ সূচকে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই নন্দীগ্রামের সঙ্গে সন্দেশখালির তুলনা করছেন। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সন্দেশখালিকে যে নন্দীগ্রামের সমপর্যায়ের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে চাইছে, তা তাদের বিভিন্ন নেতার মন্তব্য এবং বক্তব্যে স্পষ্ট। বুধবার বাঁকুড়ার খাতড়ার সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি থেকে সে ব্যাপারে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাঁকুড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘সিঙ্গুর-সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-নন্দীগ্রাম, খাতড়া-খাতড়া। একটার সঙ্গে আর একটার তুলনা করবেন না।’’ মঙ্গলবারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা সন্দেশখালির নামোল্লেখ করেননি। কিন্তু নাম না-করেও সন্দেশখালি নিয়েও বার্তা দিয়েছেন তিনি। সন্দেশখালিকে যখন ‘দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, তখন মমতা সেই তুলনাকে খণ্ডন করতে চেয়েছেন।

নন্দীগ্রামের সঙ্গে সন্দেশখালির লাগাতার আন্দোলনের কী মিল, কী-ই বা অমিল, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা জারি রয়েছে। শাসকদলের অনেকের বক্তব্য, ২০০৭ সালের গোড়া থেকে নন্দীগ্রাম হয়ে গিয়েছিল বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সেখানে পুলিশ-প্রশাসন ঢুকতে পারত না। তার পরে সেই বছর ১৪ মার্চ যখন পুলিশ তেখালি ব্রিজ পেরিয়ে নন্দীগ্রামে প্রবেশ করেছিল, সে দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৪ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। সন্দেশখালিতে এখনও তেমন কিছু হয়নি। সেখানে মানুষের ক্ষোভ আছে ঠিকই। কিন্তু পুলিশ ঢুকতে পারছে। যাচ্ছেন শাসকদলের নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রীরাও। সন্দেশখালিতে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেনি।

তবে এর উল্টো যুক্তিও রয়েছে। অনেকের বক্তব্য, নন্দীগ্রামে যেমন জমি দখল করে শিল্প হয়ে উঠেছিল মূল বিষয়, সন্দেশখালিতেও তেমনই শাসকদলের নেতাদের নামে জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। জনতার ক্ষোভও সেই মাত্রাতেই পৌঁছেছে। তাদের অভিযোগ, শাসদকদলের স্থানীয় নেতারা জমি দখল করে তাতে নোনা জল ঢুকিয়ে ভেড়ি তৈরি করেছেন।

তৃণমূল বিলক্ষণ জানে, জমি নিয়ে মানুষের ক্ষোভ কোন জায়গায় পৌঁছতে পারে। কারণ, জমি আন্দোলনের উপর ভর করেই মমতা বামশাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন। রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এনেছিলেন। দখল করেছিলেন বাংলার শাসনক্ষমতা। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম তার সাক্ষী। ওই দুই এলাকার জমি আন্দোলনই সাড়ে তিন দশকের বাম সরকারের পতন এবং মমতার রাজনৈতিক উত্থানের ভিত তৈরি করে দিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, সেই সময়ে যিনি নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতার সবচেয়ে ‘আস্থাভাজন’ ছিলেন, সেই শুভেন্দু অধিকারী এখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। যিনি মমতার বই থেকে পাতা খুলে নিয়ে তাঁর বর্তমান দলকে সেই ‘পাঠ’ দিচ্ছেন। পাশাপাশি, শুভেন্দু নন্দীগ্রামের বিধায়কও বটে। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে হারিয়েই তিনি সেখানকার বিধায়ক হয়েছেন।

তাই তৃণমূল আরও বেশি ‘সতর্ক’। আগেভাগেই তারা স্থানীয় স্তরে জমির টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছে। দফায় দফায় সেখানে গিয়ে জনমানসে দল এবং প্রশাসনের উপর ‘আস্থা’ ফেরানোর কাজ করছেন পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসুর মতো মন্ত্রীরা। সন্দেশখালির বিভিন্ন গ্রামে তাঁরাও ক্ষোভের কথা শুনছেন। কখনও মেজাজ হারাচ্ছেন। আবার তা সামলেও নিচ্ছেন। গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজির মতো উচ্চতম পর্যায়ের অফিসার। রয়েছেন আরও পদস্থ অফিসারেরা। পুলিশ ‘সংযত’ ভাবেই জনতার ক্ষোভ-বিক্ষোভের মোকাবিলা করছে বলে প্রশাসনের বক্তব্য।

কিন্তু নন্দীগ্রাম পর্বে তৎকালীন শাসক সিপিএমের কোনও নেতাকেই সেখানে দেখা যায়নি। স্থানীয় স্তরের নেতারা ‘পালিয়ে’ ছিলেন। কিন্তু কোনও মন্ত্রী সেই সময়ে নন্দীগ্রামে গিয়ে মানুষের কথা শুনছেন, তেমন ঘটেনি। সেই প্রেক্ষিতেই মমতার বুধবারের মন্তব্য। যেখানে তিনি নাম না করে সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের সঙ্গে সন্দেশখালির স্পষ্ট বিভাজনরেখা টেনে দিয়েছেন।

সন্দেশখালি নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, বুধবারের সভা থেকে তা-ও প্রশমিত করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি জ্ঞানত কোনও ভুলকে সমর্থন করি না। অজান্তে কিছু হয়ে গেলে তা-ও সমর্থন করি না। বরং সাহায্য করি।’’ যে বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী সন্দেশখালির ঘটনার ‘নিখোঁজ’ শেখ শাহজাহানের কথাই বলতে চেয়েছেন। ঘটনার পরে ৫৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাঁর খোঁজ পায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Sandeshkhali Incident bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE