নবান্নে অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বিদেশ সফর থেকে রাজ্যের শিল্পক্ষেত্রের জন্য খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে নিষেধ করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী কে ষণ্মুগমের আমন্ত্রণে রবিবার সে দেশে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিঙ্গাপুরের শিল্প মহলের সামনে পশ্চিমবঙ্গকে লগ্নির গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরাই এই সফরের লক্ষ্য। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার কথা রাজ্যের একাধিক শিল্পপতি এবং বণিকসভার প্রতিনিধির। তবে পাঁচ দিনের এই সফর থেকে রাজ্য সরকারই যে বিশেষ কিছু প্রাপ্তির আশা করছে না, সেটা বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন অমিতবাবু। তাঁর যুক্তি, “এক মুহূর্তে তো কিছু হয়ে যায় না। এই সফর অতি উচ্চ পর্যায়ের। সিঙ্গাপুরের শিল্পপতি এবং শিল্প কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। এর পর থেকে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে।” অর্থমন্ত্রীর দাবি, এ ভাবেই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। মুখ্যমন্ত্রীর সফর দিয়ে তারই ভিত তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাঁর সফরসঙ্গীদের তালিকাও প্রকাশ করেনি সরকার। অমিতবাবু এ দিন জানান, প্রতিদিন তালিকা অদলবদল হচ্ছে। ফলে সিঙ্গাপুরে পৌঁছেই বোঝা যাবে, কারা কারা এলেন। তবে তৃণমূলের অভিনেতা সাংসদ দেব সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। যাচ্ছেন প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাও। সিঙ্গাপুরে কোন কোন শিল্পসংস্থার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হবে, তা-ও এ দিন জানাতে চাননি অমিতবাবু। যদিও সরকারি একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, একমাত্র ২০ তারিখ ছাড়া শিল্পমহলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বলার মতো কোনও বৈঠক এখনও পর্যন্ত নেই। শেষ মুহূর্তে যদি আরও কোনও কর্মসূচি যুক্ত হয়, তা হলে আলাদা কথা।
এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য শোনার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “যে উদ্দেশ্য নিয়ে উনি যাচ্ছেন, তা সফল হোক। অন্তত সফরের খরচের তুলনায় বেশি টাকা বিনিয়োগ আসুক!” অন্য দিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “জ্যোতি বসুও সাড়ে ২৩ বছর ধরে বার বার বিদেশ সফরে গিয়ে ভিত তৈরি করেছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও সিঙ্গাপুর-ইন্দোনেশিয়া গিয়ে সালিমদের ধরে এনেছিলেন। শিল্প কী হয়েছে তা আমরা দেখেছি। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট-রাজ চললে সিঙ্গাপুর কেন, ইন্দ্রলোক থেকেও লগ্নি আনা সম্ভব নয়।”
তবে বিরোধীদের অভিযোগ মোটেই আমল দিতে রাজি নন অর্থমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “এই সফরের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিমধ্যেই শিল্প দফতরের কর্তারা সিঙ্গাপুরে গিয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে এসেছেন। অতীতে এমন বৈঠক কখনও হয়েছে বলে জানি না।” অমিতবাবুর দাবি, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং এবং বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার বৈঠক হবে। (যদিও ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, যে কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটা সাধারণ দস্তুর। এর আলাদা কোনও গুরুত্ব নেই।) পাশাপাশি বিদ্যুৎ, নির্মাণ, হোটেল, বিনোদন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চা, জাহাজ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মতো শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হবে। যেখানে রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলির ছবি যেমন তুলে ধরা হবে, তেমনই রাজ্যের শিল্প প্রতিনিধিরা পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাবেন সিঙ্গাপুরের শিল্প কর্তাদের।
কিন্তু রাজ্যের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে এই সব উদ্যোগে কাজের কাজ কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “শুনছি, বিদ্যুতে নাকি বিনিয়োগ আসবে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি, ডিভিসি-ই এক পা এগোচ্ছে, আবার পিছিয়ে যাচ্ছে! বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে। একের পর একের কারখানা বন্ধ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। শিল্পক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি ৪০ বছরে হয়নি!”
বামফ্রন্টের শেষ বছরেও শিল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হয়েছিল দাবি করে সূর্যবাবু বলেন, “এদের এক বছরে দেড় হাজার কোটিও বিনিয়োগ হয়নি! তোলাবাজদের হাতে যদি লগ্নিকারীরা আক্রান্ত হন, তা হলে কে শিল্প করতে আসবে জানি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy