Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

খসড়া প্যাকেজ পছন্দ নয় কৃষিজমি কমিটির

বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এ দিন বলেন, ‘‘পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই সেটা দেখেছেন। সেখানে যে পর্যবেক্ষেণগুলি উঠে এসেছে, আগামী দিনে ডিভিসি-কে সেগুলি সংশোধন করে নিতে বলা হয়েছে।’’

— ফাইল চিত্র

— ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২৯
Share: Save:

প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি গড়ার দায়িত্ব পাওয়ার পরে এই প্রথম বার লোবা অঞ্চলের জমিদাতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খসড়া পুনর্বাসন প্যাকেজ পেশ করল ডিভিসি। তবে, সোমবার জেলা প্রশাসনিক ভবনের বৈঠকে ডিভিসি-র পেশ করা ওই খসড়া প্যাকেজ মোটেও পছন্দ হয়নি লোবা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির। প্যাকেজের কিছু ‘খামতি’ নিয়ে আপত্তি তোলার পাশাপশি, চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ডিভিসি-কে আলোচনায় বসার দাবিও তুললেন কমিটির প্রতিনিধিরা। জেলা প্রশাসনের কর্তারাও এলাকার মানুষের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।

বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এ দিন বলেন, ‘‘পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই সেটা দেখেছেন। সেখানে যে পর্যবেক্ষেণগুলি উঠে এসেছে, আগামী দিনে ডিভিসি-কে সেগুলি সংশোধন করে নিতে বলা হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসন এবং এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে আরও একটা বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। তা হল: এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সকলে সন্তুষ্ট করতে না পারলে এই প্যাকেজ গ্রহণযোগ্য করা যাবে না।

সোমবার প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স হলে কয়লাখনি সংক্রান্ত বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপাতি বিকাশ রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি, জেলা ও ব্লক প্রশাসনের অন্য আধিকারিক,পুলিশ, জনপ্রতিনিধি এবং কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যেরা। সকলের সামনেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি খসড়া পুনর্বাসন প্যাকেজ পেশ করেন লোবায় প্রস্তাবিত খাগড়া-জয়দেব খনি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের আধিকারিকেরা।

প্রশাসনিক আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কয়লাখনির জন্য এলাকার কোনও মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন, সেটা দেখাই প্রাধান্য পাচ্ছে তাঁদের কাছে। লোবা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে ঘেঁষে ২৪০ একর জমি পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। লোবায় বসবাসকারী মানুষকে সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে কী কী শর্তে, সেটাই ছিল এ দিনের আলোচনার বিষয়। লোবায় যাঁদের যেমন বাড়ি ছিল, তার ভিত্তিতে ডিভিসি পাঁচ ধরনের বাড়ির মডেল এবং উপলব্ধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যা ভেবেছে, সেটা সামনে রাখে। কিন্তু প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে বাড়ির আকার ছোট। এমন অনেকে আছেন, যাঁদের কৃষিজমি যাচ্ছে না, শুধু বাড়ি যাচ্ছে। তাঁদের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন-পরবর্তী বাড়ি থেকে কৃষিজমি দূরত্ব অনেক বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা-ও স্থির হয়নি। এমন নানা বিষয় বৈঠকে উঠে আসে। তখনই প্রস্তাব আসে, এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করার।

সূত্রের খবর, বৈঠকে জমির দাম, জমির বদলে চাকরি মিলবে কিনা— তা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু একর প্রতি ১৪ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে এবং চাকরি নয়, মিলবে মাসিক ভাতা— ডিভিসি-র তরফে এই প্রস্তাব দেওয়ার পরেই অসন্তোষ ব্যক্ত করেন কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যেরা। কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার, আহ্বায়ক গৌতম ঘোষ, সভাপতি ফেলারাম মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘কোনও ভাবেই একর পিছু ওই দামে ও মাসিক ভাতার শর্তে জমি দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই গ্রামে গিয়ে সকলের সম্মতিতে জমির দাম ঠিক হোক। ঠিক হোক পুনর্বাসন প্যাকেজও। কারণ যাঁদের ভিটে-মাটি সব চলে যাবে, তাঁরা কী পাচ্ছেন সেটা স্পষ্ট ও সর্বসম্মত হওয়া প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loba DVC Coal Pit Pay Package
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE