Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দিপুর দিকে আঙুল তুলে বিতর্কে জড়ালেন রেলকর্তা

তদন্ত ভাল করে শুরুই হল না, তার আগেই প্রায় ফল জানিয়ে দিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত। হিন্দমোটর স্টেশনে মাতৃভূমি লোকাল-কাণ্ড নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘হাওড়ার মাতৃভূমি লোকালে এক যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি নয়। কাউকে ঠেলে ফেলা হয়নি। ওটা গুজব।’’ এমনকী, দিপু শর্মা ট্রেন থেকে নিজেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলেও দাবি ওই রেল-কর্তার।

মাতৃভূমি লোকালে তোলা ফাইল চিত্র।

মাতৃভূমি লোকালে তোলা ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

তদন্ত ভাল করে শুরুই হল না, তার আগেই প্রায় ফল জানিয়ে দিলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত। হিন্দমোটর স্টেশনে মাতৃভূমি লোকাল-কাণ্ড নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘হাওড়ার মাতৃভূমি লোকালে এক যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি নয়। কাউকে ঠেলে ফেলা হয়নি। ওটা গুজব।’’ এমনকী, দিপু শর্মা ট্রেন থেকে নিজেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলেও দাবি ওই রেল-কর্তার।

মঙ্গলবার রাতে হাওড়া থেকে ব্যান্ডেলগামী মাতৃভূমি লোকালের মহিলা কামরায় দিপু শর্মা নামে এক পুরুষযাত্রী উঠে পড়ায় তাঁকে উত্তরপাড়া-হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝে ঠেলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে রেল রক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) এক মহিলা কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মারা যান দিপুবাবু। রজনীগন্ধা নস্কর নামে ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলাও দায়ের করেছে রেল পুলিশ। সেই তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। পূর্ব রেলের তরফে যে বিভাগীয় তদন্তের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, তা এখনও শুরু হয়নি। এমতাবস্থায় কী ভাবে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার ওই মহিলা কনস্টেবলকে নির্দোষ আখ্যা দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে আর কে গুপ্ত ঠিক কী বলেছেন রেল মন্ত্রকও সেই ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছে বলে রেল সূত্রের খবর। তবে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘জেনারেল ম্যানেজার কোন প্রেক্ষিতে কী মন্তব্য করেছেন জানি না। তবে যা বলেছেন, নিশ্চয় দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন।’’

পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের মন্তব্য জেনে স্তম্ভিত দিপুর পরিবার। মৃতের জামাইবাবু ভবানীপ্রসাদ শর্মা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এমন মন্তব্য করার আগে ওই রেল-কর্তার অন্তত ৫০ বার ভাবা উচিত ছিল। দু’-এক দিন সময় দিচ্ছি। যদি রেলের তরফে ক্ষমা চাওয়া না হয়, তা হলে মানবাধিকার কমিশন এবং আদালতের দ্বারস্থ হব।’’

পূর্ব রেল কর্তা ঘটনাটির দায় এড়াতে চাইলেও দিপুর স্ত্রী সুষমা শর্মা এ দিন ফের দাবি করেন, ‘‘ওই মহিলা কনস্টেবলই আমার স্বামীকে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন। ওই কামরায় যে সব মহিলাযাত্রীরা ছিলেন, তাঁরাও একই কথা বলছেন। শুধু রেল অন্য কথা বলছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া দূরে থাক, তারা আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করেনি।’’

মঙ্গলবার রাতে মাতৃভূমি লোকালের ঘটনার পরে বুধবার সকালে অভিযুক্ত আরপিএফ কনস্টেবল রজনীগন্ধা নস্করকে বিআরসিংহ হাসপাতলে দেখতে যান পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। রজনীগন্ধার সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারেননি। কিন্তু মাতৃভূমি-কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেওয়াতেই মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। আর চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে যা রটেছে, সেটা গুজব। সেই গুজবের জেরে বরং আরপিএফ মার খেয়েছে।’’ যদিও কীসের ভিত্তিতে তিনি এমন কথা বলছেন, ভাঙেননি আর কে গুপ্ত।

দিপুর বাবা মদনলাল শর্মার অভিযোগের ভিত্তিতে কনস্টেবল রজনীগন্ধা নস্করের বিরুদ্ধে বুধবারেই খুনের মামলা দায়ের করেছে রেল পুলিশ। সে তদন্তের কী অবস্থা? রেল পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত কনস্টেবলের দুই সহকর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা বলা হয়েছে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গেও। তবে রজনীগন্ধার সঙ্গে এখনও কথা বলা বাকি। শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিআরসিংহ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ওই কনস্টেবল তদন্তকারী পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে এ দিন তাঁর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

পূর্ব রেলের কর্তার মন্তব্য কি তাদের তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে? রেল পুলিশের এক কর্তার জবাব, ‘‘তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে তাই আমরা ওই মাতৃভূমি লোকালের চালক, গার্ড, সংশ্লিষ্ট কামরার যতো বেশি সম্ভব প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।’’ রেল পুলিশের এডিজি মৃত্যুঞ্জয়কুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘খুনের অভিযোগ-সহ চারটি মামলার তদন্ত চলছে। এর বেশি বলা যাচ্ছে না।’’

হাওড়ার মাতৃভূমিতে বহাল পুরুষ-প্রবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা

হাওড়া শাখার মাতৃভূমি লোকালে পুরুষ যাত্রীদের প্রবেশাধিকার বহাল রাখল রেল। তারা জানিয়েছে, মাতৃভূমি লোকালের মহিলা কামরাগুলি সহজে চেনানোর জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

চার মাস আগে শিয়ালদহ মেন ও বনগাঁ শাখার মাতৃভূমি লোকালে পুরুষদের ওঠা নিয়ে গোলমাল হয়। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু জানান, মাতৃভূমি লোকালে শুধু মহিলারাই উঠবেন। শিয়ালদহ ডিভিশনে সেই ব্যবস্থা চালু হলেও হাওড়া ডিভিশনের মাতৃভূমি লোকালের চারটি কামরা পুরুষদের জন্য বরাদ্দ করা হয়।

রেল বোর্ড জানিয়েছে, হাওড়া ডিভিশনে রেকের অভাব রয়েছে। ব্যস্ত সময়ে যাত্রীদের ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য মাতৃভূমির চারটি কামরায় পুরুষদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই মঙ্গলবার মাতৃভূমি লোকালের মহিলা কামরা থেকে কনস্টেবলের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পরেও ওই ট্রেনে পুরুষদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না।

রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে মাতৃভূমি লোকালের মহিলা কামরাগুলি বিশেষ রং করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল পূর্ব রেলকে। তাতে কামরা চিনতে যাত্রীদের সুবিধা হবে বলে মনে করেছিলেন রেলের শীর্ষ-কর্তারা। কিন্তু পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত রেলের শীর্ষকর্তাদের জানিয়েছেন, ওই ভাবে রং করার পরে ট্রেনটিকে অন্য সময়ে সাধারণ ট্রেন হিসাবে চালাতে গেলে সমস্যা হতে পারে।

চাকরির আশ্বাস পেলেন মৃতের স্ত্রী

মাতৃভূমি লোকালের মহিলা-কামরা থেকে পড়ে মৃত হিন্দমোটরের দিপু শর্মার স্ত্রী সুষমাকে চাকরির প্রস্তাব দিলেন উত্তরপাড়া পুরকর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের নেতৃত্বে কাউন্সিলরদের একটি প্রতিনিধি দল দিপুর বাড়িতে যায়। সেখানেই সুষমাকে ওই প্রস্তাব দেন দিলীপবাবুরা। সুষমার যদি ওই প্রস্তাব গ্রহণে কোনও সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্য যে কোনও ধরনের সাহায্যেও পুর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত বলে ওই পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ এ ভাবে পাশে দাঁড়ানোয় তাঁরা কৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছেন ওই পরিবারের আত্মীয় ভবানীশঙ্কর শর্মা। তবে, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় চেয়েছেন। গত মঙ্গলবার হিন্দমোটরে বাড়ি ফেরার পথে দিপুকে ব্যান্ডেলমুখী মাতৃভূমির মহিলা-কামরা থেকে আরপিএফ-এর এক মহিলা কনস্টেবল ধাক্কা মেরে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই মারা যান বছর ছত্রিশের ওই যুবক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE