Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উঠল সারদা-যোগ, ইডি ফের ডাকল রাজারামকে

যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সারদা-কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী আসিফ খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, সেই রাজারাম শরাফের নামও জড়িয়ে গেল সারদায়। আর তার পরেই এই ব্যবসায়ীকে বুধবার ফের জেরার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। রাজারামের যে অভিযোগের ভিত্তিতে আসিফকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সেই অভিযোগ নিয়েই বিস্তর প্রশ্ন ওঠায় সোমবার ইডি অফিসে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। বুধবার ফের তাঁকে কাগজপত্র নিয়ে ইডি দফতরে আসতে বলা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সারদা-কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী আসিফ খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, সেই রাজারাম শরাফের নামও জড়িয়ে গেল সারদায়। আর তার পরেই এই ব্যবসায়ীকে বুধবার ফের জেরার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

রাজারামের যে অভিযোগের ভিত্তিতে আসিফকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সেই অভিযোগ নিয়েই বিস্তর প্রশ্ন ওঠায় সোমবার ইডি অফিসে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। বুধবার ফের তাঁকে কাগজপত্র নিয়ে ইডি দফতরে আসতে বলা হয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা জানতে চেয়েছেন, যে আট কোটি টাকা আসিফকে দিয়ে তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, সেই টাকা রাজারাম কোথা থেকে পেলেন? তিনি কি ওই টাকার উৎস জানিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন?

কিন্তু রাজারামের সঙ্গে সারদার নাম কী ভাবে জড়িয়েছে?

ইডি সূত্রের খবর, ৬৩, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে রাজারামবাবুর অফিস-বাড়িটি এক সময়ে তিনি এবং এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিলে কিনেছিলেন। ওই বিচারপতির মৃত্যুর পরে তাঁর মেয়ে বাবার অংশের মালিক হন। ওই মহিলার মালিকানাধীন অংশেই সারদার একটি চ্যানেলকে ভাড়া দেওয়া হয়। ওই চ্যানেল থেকে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা করে রাজারামবাবুকে দেওয়া হতো বলে ইডি সূত্রের খবর। কেন ওই টাকা রাজারামবাবু পেতেন, তা তদন্তকারীরা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন। ইডি সূত্রের খবর, রাজারামবাবু জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিল বাবদ তিনি ওই টাকা পেতেন। রাজারামবাবুর দাবি, পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে তাঁরই নামে। তাই, সমস্ত ভাড়াটের বিদ্যুতের বিল তাঁকে দেওয়া হয়।

এর পরেই রাজারামের কাছে এই সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র দেখতে চান তদন্তকারীরা। বাড়ি দু’ভাগ হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ কেন দু’ভাগ হল না, তারও জবাব চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। রাজারামের দাবি, ওই বাড়ির জন্য হাই-টেনশন বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিলেন তিনি। এই দাবির পরে প্রশ্ন উঠেছে, এই ধরনের বিদ্যুৎ সংযোগ শিল্প-কারখানার জন্য দেওয়া হয়। রাজারাম তা কী ভাবে পেলেন?

ইডি-র তদন্তকারীরা রাজারামবাবুর কাছে আরও জানতে চান, তিনি আসিফকে যে আট কোটি টাকা দিয়েছিলেন, তার কোনও লিখিত নথি কি তাঁর কাছে আছে? তদন্তকারীদের কাছে রাজারামবাবু দাবি করেছেন, তিনি মৌখিক কথার উপরেই ভরসা করেই ব্যবসা করতে অভ্যস্ত। এ ক্ষেত্রেও তাই আসিফের কাছ থেকে তিনি কোনও লিখিত নথি নেননি।

ইডি-র তদন্তকারীদের কাছে রাজারামবাবু জানিয়েছেন, ২০১১-১২ সালে তিনি কয়েক কিস্তিতে মোট আট কোটি টাকা আসিফকে দিয়েছিলেন। এই অভিযোগ নিয়ে এর মধ্যেই বিস্তর প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের একাংশ। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “২০১৩ সালের আয়কর রিটার্নে ওই হিসেব যদি রাজারামবাবু দেখিয়ে না থাকেন, তা হলে তাঁর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হওয়ার কথা।” পুলিশের কাছে করা লিখিত অভিযোগে রাজারামবাবু জানিয়েছেন, তিনি ১০০ বিঘা জমি কিনবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই আসিফকে টাকা দিয়েছিলেন। অরুণাভবাবুর দাবি, “সে ক্ষেত্রে জমির উর্দ্ধসীমা আইন লঙ্ঘন করে বেআইনি কাজের জন্য তিনি আসিফকে টাকা দিয়েছিলেন। কোনও বেআইনি কাজের জন্য টাকা দেওয়া হলে তার ভিত্তিতে পুলিশের কাছে কখনই অভিযোগ দায়ের করা যায় না। যদিও এ ক্ষেত্রে তাই করা হয়েছে।” আইনজীবীদের আরও প্রশ্ন, টাকার লেনদেন বিধাননগরে হয়নি। কিন্তু মামলা করা হয়েছে বিধাননগরে! এটা কখনই হতে পারে না। এ ছাড়াও, কেউ কোনও কাজ করার জন্য টাকা নিয়ে ওই কাজ না করলে, তার জন্য কখনই ফৌজদারি আইনে মামলা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে মামলা করতে হবে দেওয়ানি আইনে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই নিয়মও মানা হয়নি। অরুণাভবাবুর দাবি, রীতিমতো ষড়যন্ত্র করেই যে প্রতারণার এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে, এ সব থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

আবার তলবের মুখে শুভা

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে আগেই দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ ওই চিত্রশিল্পীকে ফের ডাকতে চলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। সারদা তদন্তে আরও কয়েক জন ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি’কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নোটিস পাঠানো হচ্ছে বলে ইডি সূত্রের খবর। সেই তালিকায় রাজ্যের শাসক দলের এক ছাত্রনেতা এবং এক জন সাংবাদিকও আছেন।

তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, শুভাপ্রসন্নবাবু সারদার কাছে যে-সংস্থাটি বিক্রি করেছিলেন, সেই ‘দেবকৃপা’ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছিল। তাঁর ‘আর্টস একর’-এর ব্যাপারেও তথ্য চেয়েছিল ইডি। কিন্তু তিনি সব তথ্য জমা দেননি। যে-সব তথ্য পেশ করেছেন, তাতেও ধোঁয়াশা আছে বলে ইডি সূত্রের খবর।

ময়দানে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিনিয়োগ নিয়ে ইডি এর মধ্যে চারটি ক্লাবের কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। দু’টি ক্লাবের কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর আগে মোহনবাগান ক্লাবের তরফে সেই বাজেয়াপ্ত করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে মঙ্গলবার ইডি-র কাছে একই আবেদন জানানো হয়েছে। এক ক্লাবকর্তা সকালে ইডি-র দফতরে যান। তবে ওই ক্লাবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার বিষয়ে ইডি-কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE