Advertisement
E-Paper

সারদার বাজেয়াপ্ত বাড়ি-গাড়ি নিয়ে নাস্তানাবুদ ইডি

তদন্ত করা তাঁদের কাজ। জাঁতাকলে পড়ে এখন ছুটছেন বাড়ি-গাড়ি দেখাশোনা করতে। যে সে বাড়ি-গাড়ি নয়। সব জনতার টাকায় কেনা!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
লাটাগুড়িতে সারদার রিসর্টে পাহারা বসিয়েছে ইডি।—নিজস্ব চিত্র

লাটাগুড়িতে সারদার রিসর্টে পাহারা বসিয়েছে ইডি।—নিজস্ব চিত্র

তদন্ত করা তাঁদের কাজ। জাঁতাকলে পড়ে এখন ছুটছেন বাড়ি-গাড়ি দেখাশোনা করতে। যে সে বাড়ি-গাড়ি নয়। সব জনতার টাকায় কেনা!

সারদার প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ইতিমধ্যে বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার মধ্যে ৮৫% হল জমি। বাকি সম্পত্তির মধ্যে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বা অফিসের পাশাপাশি রিসর্ট, ডেয়ারি, এমনকী স্কুলও রয়েছে। ইডি-র ঘাড়ে এখন তার রক্ষণাবেক্ষণের দায় চেপেছে। ফি বছর দিল্লি থেকে গড়ে প্রায় আধ কোটি টাকা আসছে শুধু এরই খাতে।

বাড়ি-ফ্ল্যাটের দেখভাল কোনও মতে চললেও সারদার থেকে খাতায়-কলমে বাজেয়াপ্ত করা প্রায় তিনশো গাড়ির অবস্থা কিন্তু বেশ খারাপ। সেগুলো রাজ্যের বিভিন্ন থানায়, কিংবা সারদার অফিস লাগোয়া মাঠে পড়ে আছে। ওই গাড়ি-বহরের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে আরও টাকা দরকার।

তবে শুধু টাকা দিয়েই তো হবে না!

বাড়ি-ঘর দেখভালের জন্য নিয়ম করে শিলিগুড়ি থেকে কাঁথি ছুটে বেড়াতে হচ্ছে অফিসারদের। উত্তরবঙ্গে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে অন্যতম শিলিগুড়ির লিঙ্কন হাইস্কুল। ইডি বাজেয়াপ্ত করার পরেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি চলছে। শ’আটেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন গত ডিসেম্বরে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল শম্পা দত্তরায়।

কী ভাবে চলছে স্কুল?

অভিযোগ: পড়ুয়াদের জমা দেওয়া ফি’র ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে সরে পড়েছিলেন সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। সেটা ২০১৩। তার পরে গোটা একটা বছর শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা নিয়মিত বেতন পাননি। ‘‘মূলত ফি’র টাকা দিয়েই খরচ চলছে। তবে ইডি’র নজরদারি বহাল। ইডি অফিসারেরাই স্কুলবাড়ি দেখভাল-সহ অন্যান্য কাজ করছেন।’’— মন্তব্য প্রিন্সিপালের।

সারদার সম্পত্তি

•সল্টলেকে এফডি ব্লকে ফ্ল্যাট

• মিডল্যান্ড পার্কের অফিস

• কাঁথিতে অফিস

• মাথাভাঙায় অফিস

• শিলিগুড়িতে ফ্ল্যাট

• লাটাগুড়িতে রিসর্ট

• বানারহাটে ডেয়ারি

• শিলিগুড়িতে লিঙ্কন স্কুল

* ইডি-র বাজেয়াপ্ত করা
সম্পত্তির একাংশ

তালিকা দীর্ঘ। বছরখানেক আগে ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে লাটাগুড়ির সারদা রিসর্ট। তার দরজা খুলে দেখা গিয়েছিল, দেওয়ালের চুন খসে পড়েছে, এসি বিকল। বাজেয়াপ্ত করার অনেক আগে থেকেই রিসর্টটি বন্ধ ছিল। ইডি গোটা বাড়ি রং করিয়ে, এসি সারিয়ে ফের বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। এক অফিসারের কথায়, ‘‘গড়ে দু’মাসে এক বার ইন্সপেকশনে যেতে হয়। দেখতে হয়, সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কি না।’’

রিসর্টের এসি ছাড়াও বানারহাটে সারদা ডেয়ারির ভিতরে দামি যন্ত্রপাতি মজুত। কলকাতার সল্টলেকে সারদার বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও অফিসবাড়ি দামি আসবাবে বোঝাই। খালি ফেলে রাখলে চুরির ভয় বিলক্ষণ। যে কারণে গাঁটের কড়ি খরচ করে বেসরকারি সিকিওরিটি এজেন্সির পাহারা বসাতে হয়েছে ইডি’কেই। বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণে এত চাপ কেন?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা-সহ অন্যান্য অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই ও ইডি। আদালতের নির্দেশ— বেআইনি লগ্নিসংস্থার সম্পত্তি এখন বাজেয়াপ্ত করে রেখে দেওয়া হোক। সর্বোচ্চ আদালত বললে তা বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরানো হবে। চাপ এখানেই।

এক ইডি-কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘কবে মামলার ফয়সালা হবে, কেউ জানে না। পাঁচ বছর লাগতে পারে, দশ বছরও। তার পরে কোর্ট বলবে, বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বাজারদরে বেচে দাও। জমি না হয় বাজারদরে বেচলাম। কিন্তু রিসর্ট, বাড়ি, ফ্ল্যাট, স্কুল, ডেয়ারি? দেখভাল না-হলে তো সব ভেঙেচুরে পড়বে! কে কিনবে? সুপ্রিম কোর্ট তখন কি ছেড়ে দেবে?’’ আরও একটা সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন— ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন যে, মামলায় সারদা বা রোজ ভ্যালি হেরে যাবে?

বস্তুত সঠিক তথ্য-প্রমাণের অভাবে তারা জিতে গেলে উল্টো বিপত্তি হতে পারে বলে ইডি’র আশঙ্কা। ‘‘তখন সুদীপ্ত সেন বা গৌতম কুণ্ডু এসে সম্পত্তি ফেরত চাইতে পারেন। রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি দেখলে পাল্টা মামলাও ঠুকে দিতে পারেন।’’— মন্তব্য এক অফিসারের।

Routed Saradha Group Estates ED Confiscated
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy