Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বেপাত্তা শুভার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ভাবনা

সারদা তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে তলব করেছিল সোমবার। কিন্তু বুধবারও সারাদিন কেটে গেল, পাত্তা নেই শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এই শিল্পী মঙ্গলবার থেকে যে ভাবে গা ঢাকা দিয়েছেন, তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ইডি।

সিবিআই অফিসে হিমন্ত বিশ্বশর্মা। শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

সিবিআই অফিসে হিমন্ত বিশ্বশর্মা। শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৯
Share: Save:

সারদা তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে তলব করেছিল সোমবার। কিন্তু বুধবারও সারাদিন কেটে গেল, পাত্তা নেই শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের। তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এই শিল্পী মঙ্গলবার থেকে যে ভাবে গা ঢাকা দিয়েছেন, তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ইডি। শুভাপ্রসন্ন শেষ পর্যন্ত হাজির না হলে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা শুরু হবে বলে ইডি-র তদন্তকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁকে গ্রেফতারও করা হবে। বস্তুত, বুধবার রাত থেকেই শুভাপ্রসন্নর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।

সিবিআই ও ইডি-র বক্তব্য, গ্রেফতার হওয়ার আগে তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসু বারবার তদন্তকারীদের সামনে হাজির হয়েছেন। প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। কিন্তু শুভাপ্রসন্নর মতো ‘বিশিষ্ট’ শিল্পী যে ভাবে গা-ঢাকা দিয়েছেন, তাতে তাঁরা যারপরনাই অবাক। বুধবার রাত পর্যন্ত শুভাপ্রসন্নর হদিস মেলেনি। কিছু বলতে চাননি তাঁর পরিবারের লোকেরাও।

ইডি সূত্রের খবর, ‘দেবকৃপা ব্যাপার’ নামে একটি সংস্থা ছিল শুভাপ্রসন্নর। সেই সংস্থার অধীনেই ‘এখন সময়’ নামে একটি খবরের চ্যানেল তৈরি করেছিলেন তিনি। কোনও দিন শুরু না হওয়া সেই চ্যানেলটিই শুভাপ্রসন্ন বেচে দেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে। ওই লেনদেন নিয়ে শুভাপ্রসন্নকে আগেও একাধিক বার জেরা করেছে ইডি ও সিবিআই। শুভাপ্রসন্ন কিছু তথ্যও জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হননি তদন্তকারীরা। তার জেরেই ফের তলব করা হয়েছিল তাঁকে। ইডি-র তদন্তকারীরা জানান, তাঁরা এ দিন পর্যন্ত শুভাপ্রসন্নর হাজিরার অপেক্ষায় ছিলেন। এ বার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও গ্রেফতার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হবে। তবে কি ইডি শুভাপ্রসন্নর গোপন ডেরার খোঁজ পেয়েছে? উত্তরে শুধুই মুচকি হেসেছেন একাধিক ইডি কর্তা।

সারদা তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকেই বলছেন, রাজ্যের প্রভাবশালীদের ক্রমশই ঘিরে ফেলছে সিবিআই ও ইডি। এঁদের অনেকেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তথ্য দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয়কে এ দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। ক্লান্ত চোখমুখ, গলায় কলার বেল্ট পরা সৃঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে এ দিন আদালতে এসেছিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার ব্যারেটো। সৃঞ্জয় আদালতে জানান, তাঁর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। সুগার ওঠানামা করছে। একটু দাঁড়ালেই মাথা ঘুরছে। অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। সৃঞ্জয় বলেন, “মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপনের দিনেও সিবিআই অফিসে হাজিরা দিয়েছি। আমায় জামিন দেওয়া হোক। প্রয়োজনে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আমি সিবিআই অফিসে থাকতে রাজি।” বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায় অবশ্য সৃঞ্জয়কে ফের তিন দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

এ দিকে, অসমের প্রভাবশালীদেরও জেরা অব্যাহত। সে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী অঞ্জন দত্তকে ইতিমধ্যেই জেরা করেছে সিবিআই। এ দিন জেরা করা হয় অসমের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে। সকাল পৌনে ১০টায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান হিমন্ত। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বেলা ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত।

সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে হিমন্তের বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। তার জেরেই এই তলব। এর আগে হিমন্তের স্ত্রীর একটি খবরের চ্যানেলের অফিসেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। হিমন্ত অবশ্য বেরিয়ে দাবি করেন যে, ওই চিঠি সুদীপ্ত নন, কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির লেখা। সেই ব্যক্তি কংগ্রেসের (হিমন্তের দল) বিরোধী বলেই সন্দেহ তাঁর। “সুদীপ্তর ওই চিঠি নিয়ে আমি ২০১৩ সালেই গুয়াহাটি হাইকোর্টে মামলা করেছি। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত শেষ না হলে নির্বাচনে দাঁড়াব না,” বলেছেন হিমন্ত।

পাশাপাশি, এ দিন হিমন্ত দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে সুদীপ্তর তেমন যোগাযোগ ছিল না। ২০০৯ সালে অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ধুবুরিতে একটি জেলা হাসপাতাল উদ্বোধনে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই তিনি ওই এলাকায় একটি বিস্কুট কারখানার উদ্বোধনের কথা শোনেন। হিমন্তের বক্তব্য, “সেখানে পশ্চিমবঙ্গের এক বিধায়ক এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই সুদীপ্তকে দেখি।”

সারদা কেলেঙ্কারিতে এ দিন রাজ্যের এক প্রবীণ সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তদন্তকারীরা জানান, ওই সাংবাদিক একাধিক খবরের কাগজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে একটির সঙ্গে সারদার চুক্তি হয়েছিল। তার অন্যতম শীর্ষ পদে ছিলেন ওই সাংবাদিকের স্ত্রীও। সেই কারণেই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE