Advertisement
E-Paper

আতঙ্কের ডিম ফুটে ব্যবসা লাটে, প্লাস্টিক ডিমের দেখা কোথাওই মেলেনি

হোয়াট্‌সঅ্যাপ থেকে ফেসবুক পাড়ি দিচ্ছে ‘চাইনিজ প্লাস্টিক ডিম’-এর গল্প। আর পুরুলিয়ার ঝালদার বাজারেও ডিমপ্রেমী গৃহস্থ হাঁকছেন— আগে একটা ডিম ফাটিয়ে ওমলেট ভাজ দেখি, তবে ডিম কিনব বটে!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৮
সংশয়: আসল না নকল? পরীক্ষা করছেন এক ক্রেতা। শনিবার শহরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

সংশয়: আসল না নকল? পরীক্ষা করছেন এক ক্রেতা। শনিবার শহরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হোয়াট্‌সঅ্যাপ থেকে ফেসবুক পাড়ি দিচ্ছে ‘চাইনিজ প্লাস্টিক ডিম’-এর গল্প। আর পুরুলিয়ার ঝালদার বাজারেও ডিমপ্রেমী গৃহস্থ হাঁকছেন— আগে একটা ডিম ফাটিয়ে ওমলেট ভাজ দেখি, তবে ডিম কিনব বটে!

ঝালদা থেকে আলিপুরদুয়ার— সর্বত্র এক ছবি। কাউন্সিলররা নিজে দাঁড়িয়ে স্টকের ডিম ফাটিয়ে দেখছেন কুসুমটা ছেতরে গেল কি না! কোথাও কোথাও ডিম পরীক্ষায় ওমলেট অবধি ভাজা হয়েছে।

শনিবারের বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটেও দেখা গেল, প্রবীণ ডিম-কারবারি অশোক ঘোষ ডিম ভাজতে ভাজতেই বলছেন, ‘‘ঘাবড়াবেন না, প্লাস্টিক ডিম হলে ভাজলেই কালো হয়ে যেত!’’

প্লাস্টিক ডিমের দেখা কোথাওই মেলেনি। কিন্তু ইন্টারনেট-লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করা বিশেষজ্ঞ কিলবিল করছে। কী সব ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে নকল ডিমের খোল বা কুসুম তৈরি হচ্ছে, তা অনেকেরই মুখস্থ। কারও বিশ্বাস, বাজারের সব পণ্যেই যখন চিনে নকলের রমরমা, নকল ডিমই বা হবে না কেন? কেউ কেউ চক্রান্তের তত্ত্বও পেশ করছেন। এ সবই না কি গরিবের সস্তার প্রোটিন ডিমের কারবার ধসিয়ে দিয়ে নামী ব্র্যান্ডের এগ-পাউডার চাপিয়ে দেওয়ার ছক!

রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, ‘‘আতঙ্কের কিছু নেই। নির্ভয়ে ডিম খান!’’ তা-ও দুপুর-বিকেলের টিফিনে কলকাতার ডিম-বিলাস কিছুটা কমে গিয়েছে। কাটোয়া স্টেশন বাজারের ডিম বিক্রেতা মহতাব শেখ বিমর্ষ। বহু ডিম পড়ে-পড়ে নষ্ট হচ্ছে। মালদহের হোটেলে ডিমের পদে ক্রেতাদের অরুচি। উত্তর কলকাতার কোবরেজি কাটলেট-ডেভিলের সাবেক কেবিনের কর্তার স্বরে আতঙ্কের ছোঁয়াচ, ‘‘গুজবের চোটে বার্ড ফ্লু-র সময়কার আতঙ্ক না-ফিরে আসে!’’ ধর্মতলা-বিবাদী বাগের ডিম-পাঁউরুটি বিক্রেতারা বোঝাচ্ছেন, ‘‘আমরা অন্ধ্রের ডিম ব্যবহার করি না, সব বাংলার ডিম— ফ্রেশ!’’

আসলে অভিযোগটাই স্পষ্ট নয়। তবে অন্ধ্র তথা ভিন রাজ্যের ডিমের মধ্যেই ‘প্লাস্টিক ডিম’ মেশানো বলে রটনা জোরদার। ধবধবে পোলট্রির ডিমের তুলনায় লালচে দেশি মুরগির ডিম নিরাপদ ধরা হচ্ছে। ডিম খেয়ে মেয়ের পেট ব্যথা হচ্ছে বলে হলদিয়ার এক মহিলা সন্দেহের বশে পুলিশে নালিশ করেছেন। কাকদ্বীপের শিশু শিক্ষায়তন বা সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দিরের মতো স্কুলেও প্রধান শিক্ষকের কপালে ভাঁজ, বাচ্চাদের মিড ডে-মিলে ডিমের পুষ্টিটুকু দেওয়া ঝুঁকি হবে না তো! রাজ্যে পোলট্রি ফেডারেশনের কর্তা মদনমোহন মাইতির আশঙ্কা, ভয় না-কাটলে ব্যবসায় খারাপ প্রভাব পড়বে।

বৈধ-অবৈধ বিতর্কে উত্তরপ্রদেশে পাতের মাছমাংসে টান পড়েছিল আগেই। এ বার বাংলায় নিজ ভূমে ডিম নিয়ে আতঙ্ক দানা বাঁধার পরে বাঙালি টের পাচ্ছে, আমিশাষিদের সময়টা ঠিক ভাল যাচ্ছে না!

আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই হয়তো কালবৈশাখী

ডিম-কাহিনি

দেশে ডিম উৎপাদন রোজ প্রায় ২২ কোটি ৪০ লক্ষ। প্রায় এক কোটি ডিম নিত্য রফতানিও হয় বিদেশে। তার পরেও প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় কোটি ডিম উদ্বৃত্ত থাকে।

প্রান্তিক চাষি দেশজ পোলট্রিতে ডিম প্রতি দাম পান ২.৮০ টাকা থেকে ৩.৫৪ টাকা। পাইকারের হাত ঘুরে সে ডিম শহরে বিক্রি হয় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টাকায়।

যে ‘চিনা ডিম’ কিংবা ‘প্লাস্টিক ডিম’ নিয়ে বাজার তোলপাড়, তার মূল উপকরণ স্টার্চ, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, বেনজয়িক অ্যাসিড ইত্যাদি। বেঙ্গালুরুর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট কেমিক্যাল বায়োলজি’র বক্তব্য, এই ডিম তৈরিতে খরচ হবে ৬.৮০ থেকে ৭ টাকা।

Egg Chinese Plastic Egg Customers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy