Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Egra Blast

ভানু বাগ এখনও উধাও, ফিরল ছয় মৃতের দেহ, আপাতত রাজ্য রাজনীতির ভরকেন্দ্র এগরার সেই গ্রাম

বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে, সেই কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগ এখনও ‘পলাতক’। স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরি করেন ভানু।

মঙ্গলবার ভরদুপুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর এমন হাড়হিম করা দৃশ্য দেখা গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা-১ ব্লকের খাদিকুল গ্রামে।

মঙ্গলবার ভরদুপুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর এমন হাড়হিম করা দৃশ্য দেখা গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা-১ ব্লকের খাদিকুল গ্রামে। ছবি পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
এগরা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ২৩:২৯
Share: Save:

রাস্তায় পড়ে রয়েছে ঝলসানো দেহ। কোনও দেহ আবার ছিটকে গিয়েছে কিছুটা দূরে পুকুর পাড়ে। পুকুরের জলেও ২টি দেহ ভাসতে দেখা গিয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে সাইকেল, স্কুটির কঙ্কাল। তত ক্ষণে গোটা গ্রাম জুড়েই ছড়িয়ে পড়েছিল বারুদের গন্ধ। মঙ্গলবার ভরদুপুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর এমন হাড়হিম করা দৃশ্য দেখা গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা-১ ব্লকের খাদিকুল গ্রামে। সেই ঘটনায় মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে তাঁদের ৬ জনের দেহ গ্রামে ফিরতেই ফিরে এল সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের স্মৃতি। কান্নায় ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম।

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর দেহ উদ্ধার শেষ হলে রাতেই ঘটনাস্থলটিকে ঘিরে ফেলা হয়। ২৪ ঘণ্টা ঘটনাস্থলের নজরদারিতে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। বুধবার সকাল থেকেই থমথমে ছিল গোটা গ্রাম। বেলা প্রায় ১০টা নাগাদ সেখানে হাজির হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোজা চলে যান বিস্ফোরণস্থলে। কিন্তু পুলিশ এলাকা ঘিরে রাখায় কারখানার এলাকার কাছে যেতে পারেননি শুভেন্দু। অদূরে একটি বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে তিনি গোটা জায়গাটি দেখেন। এর পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে রাজ্য সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বলি, শুধু বাজি কারখানাই নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার পার্টিকে বোমা সাপ্লাই (সরবরাহ) করার জন্য এই কারখানা তৈরি হয়েছিল। আর আপনার পুলিশ প্রতি মাসে এখান থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে যেত।’’

এগরাকাণ্ডে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে সিআইডিকে। তবে বিরোধীদের দাবি মেনে মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এনআইএ তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। মৃতদের পরিবার-পিছু আড়াই লক্ষ এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুভেন্দুর দাবি, অন্তত ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মৃতদের পরিবারকে।

যাঁর বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে, সেই কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগ এখনও ‘পলাতক’। স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরি করেন ভানু। তাঁর তৈরি বাজির চাহিদাও ছিল বিপুল। ভানুর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূরদূরান্তে। ক্রমেই ভানু হয়ে ওঠেন এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ীদের অন্যতম। ২০১১ সালে রাজ্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে শাসকদলে ভানুর ওঠাবসা শুরু হয়। তবে সূত্রের খবর, রাজনীতি নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামাতেন না ভানু। শুভেন্দুর দাবি, ভানু ‘তৃণমূলের বড় নেতা’। মৃতের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘ভানু বাগ তৃণমূলের এক জন বড় নেতা। উনি ২০১৩ সালে পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। ’১৮ সালে ওঁর বৌমাকে দাঁড় করিয়েছিলেন ভোটে।’’ উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের লোক হলে বাংলার পুলিশ তাঁকে গত বছর কালীপুজোর সময় বেআইনি বাজি কারখানার জন্য কেন গ্রেফতার করবে?’’

শুভেন্দু এলাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই খাদিকুলে হাজির হয় তৃণমূলের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। যে দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী-সহ বিধায়ক তরুণ মাইতি, দলের নেত্রী দোলা সেন, নেতা সৌমেন মহাপাত্ররা। গ্রামে ঢুকতেই তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভকে ‘বিজেপি ও সিপিএমের আঁতাঁত’ বলে কটাক্ষ করেছেন মানস। তৃণমূলের প্রতিনিধি দল জানায়, তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ঘটনাস্থলে এসেছেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলেও জানান মানস, দোলারা। যদিও প্রবল বিক্ষোভের মুখে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। পরে একে একে ফরেন্সিক দল, বম্ব ডিসপোজ়াল স্কোয়াড এসে নমুনা সংগ্রহ করে। এলাকা পরিদর্শনে আসেন সিআইডির প্রতিনিধিরাও।

মঙ্গলবারের ঘটনার পর কার্যত রাজ্য-রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে এগরার এই খাদিকুল। গ্রাম জুড়ে তো পুলিশ রয়েছেই, আসছেন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরাও। বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারও ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এগরার ঘটনা দিকনির্দেশ করছে পশ্চিমবঙ্গ বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। আইনশৃঙ্খলার অবনতিটাই মানুষের চোখে পড়ে। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। সেই জন্যই এটা নিয়ে এত চর্চা।’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘রাজনীতির ভরকেন্দ্র যেখানে উন্নয়ন, কলকারখানা হওয়া উচিত ছিল, সেখানে এখন রাজনীতি হয় মন্দির-মসজিদ, বগটুই, কালিয়াগঞ্জ, এগরা। কারণ, রাজ্যে এখন দুষ্কৃতীর দল রাজত্ব করছে। আর বিভাজনের শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।’’

এ বিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার সব দিক খতিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Egra Blast West Bengal Politics Egra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE