E-Paper

তৃণমূলের এনআরসি অভিযোগ, জবাব দিল নির্বাচন কমিশন

কমিশন জানিয়েছে, যাঁদের নাম পুরনো তালিকায় রয়েছে তাঁদের শুধু ইএফ ফর্মটি পূরণ করে জমা দিলেই হবে। আলাদা করে অতিরিক্ত নথি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন হবে না। যাঁরা নতুন, কেবলমাত্র তাঁদের ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’-এর সঙ্গে বাড়তি নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অগ্নি রায়, অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ ০৬:৫৩
জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিজেপির আসন পঞ্চাশও ছোঁবে না, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। তাদের দাবি, তাই ‘নিশ্চিত পরাজয়’ এড়াতে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে ঘুরপথে অর্থাৎ ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বাংলায় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) আনতে চাইছে শাসক দল বিজেপি। লক্ষ্য, তৃণমূলমুখী ভোটারদের বাদ দিয়ে বিজেপিকে সুবিধে করে দেওয়া। আজ নয়াদিল্লিতে এই দাবিতে তৃণমূল নেতৃত্ব সাংবাদিক বৈঠক করলেন।

অন্য দিকে, কমিশন বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। পরিচয়পত্র হিসেবে নাগরিকদের কাছে এমন কিছু চাওয়া হচ্ছে না, যা দুষ্প্রাপ্য। একই সঙ্গে বিজেপির বক্তব্য, তাদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার প্রসঙ্গটি কাল্পনিক। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব আজ জানিয়েছেন, বিজেপি যে ভাবে নির্বাচন কমিশনকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ কাজে লাগাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনের ভিতরে ও তার আগে বাইরে প্রতিবাদ করবে। প্রয়োজনে সবাই মিলে নির্বাচন কমিশনের কাছেও যাওয়া হবে।

ঘটনা হল, জাল ভোটার রুখতে বিহারে ভোটার তালিকায় পরিমার্জনের কাজে হাত দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, বিহারে এই মুহূর্তে ৭,৮৯,৬৯,৮৪৪ জন ভোটার রয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে একটি এনুমেরেশন ফর্ম (ইএফ) দিচ্ছে কমিশন। ওই রাজ্যে ২০০৩ সালে ভোট তালিকার যে বিশেষ সংশোধন হয়েছিল, সেই সময় ভোটার সংখ্যা ছিল ৪.৯৬ কোটি।

কমিশন জানিয়েছে, যাঁদের নাম পুরনো তালিকায় রয়েছে তাঁদের শুধু ইএফ ফর্মটি পূরণ করে জমা দিলেই হবে। আলাদা করে অতিরিক্ত নথি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন হবে না। যাঁরা নতুন, কেবলমাত্র তাঁদের ‘ডিক্লারেশন ফর্ম’-এর সঙ্গে বাড়তি নথি জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ১৯৮৭-র আগে যাঁদের জন্ম, তাঁদের জন্মস্থান অথবা জন্মের তারিখ সংক্রান্ত যে কোনও শংসাপত্র দিলেই হবে। এর পরে ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা অথবা মায়ের জন্মস্থান অথবা জন্ম তারিখ সংক্রান্ত যে কোনও শংসাপত্র দিতে হবে। এর পরে যাঁরা ২০০৪-এর পর জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের পাশাপাশি বাবা এবং মায়ের জন্মতারিখ অথবা জন্মস্থান সংক্রান্ত যে কোনও শংসাপত্র দিতে হবে। এ ছাড়া বাবা অথবা মায়ের মধ্যে যদি কেউ ভারতীয় না হন, সে ক্ষেত্রে যিনি ভারতীয় নন, তাঁর পাসপোর্ট এবং ওই ব্যক্তির জন্মের সময়কার ভিসা (বাবা বা মায়ের) দিতে হবে।

তৃণমূলের অভিযোগ, কী ভাবে বাবা মায়ের জন্মতারিখের শংসাপত্রটি সবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব? কারণ আজ থেকে কয়েক দশক আগেও বাড়িতেই প্রসব হত, সে ক্ষেত্রে জন্মের শংসাপত্র পাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে স্থানান্তর করেছেন।

কমিশনের পাল্টা যুক্তি, কোথায় বলা হয়েছে যে শুধুমাত্র জন্মের শংসাপত্রটিই প্রমাণ হিসেবে দিতে হবে? একাধিক নথি, যেখানে জন্ম তারিখের উল্লেখ রয়েছে, তা এ ক্ষেত্রে জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে। যেমন বাবা-মার যে কোনও সরকারি পরিচয়পত্র (ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্ট, এলআইসি-র কাগজ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কাজ করলে তার নথি, পাসপোর্ট), সরকারি পেনশন অর্ডার হলেও চলবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক-সহ যে কোনও স্বীকৃত বোর্ড থেকে পাশ করার শংসাপত্রও চলবে। রাজ্য সরকারের দেওয়া স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র বা ওবিসি, তফসিলি জাতি ও জনজাতির সরকারপ্রদত্ত শংসাপত্র, পিতামাতার নামে বাড়ির দলিল (যার মধ্যে সরকারি আবাস যোজনায় প্রাপ্ত বাড়িও থাকতে পারে)— এ সবই স্বীকৃত নথি হিসেবে গণ্য করবে কমিশন। বিজেপির বক্তব্য, কমিশনের নথিতেই স্পষ্ট, নথি দেওয়ার একাধিক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নিজেদের সংখ্যালঘু অনুপ্রবেশকারী ভোটব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ ভেবে কুমিরের কান্না কাঁদছে।

কমিশনের এই ভোটার তালিকার সংস্কার নিয়ে প্রথম আপত্তি জানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাস্তা ধরেই আজ সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষদের দাবি, “কমিশন বিএলএ অর্থাৎ বুথ লেভেল এজেন্ট-দের তথ্য চেয়েছে। এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে? আসলে বিজেপি যে ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে তাদের দিয়ে আমাদের বুথ কর্মীদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো যায়, সেই চেষ্টা করছে।” পাশাপাশি, এর আগে তৃণমূলের প্রতিবাদের জেরে নির্বাচন কমিশন ভুয়ো ভোটার কার্ড নিয়ে তদন্ত করার কথা জানালেও সেই কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ডেরেকরা।

ডেরেক ও’ব্রায়েন বলছেন, “বিজেপির সাম্প্রতিক অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তারা সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৪৯টি আসন পেতে পারে। এই তথ্য উঠে আসতেই তারা মরিয়া হয়ে এ সব করছে।”

অন্য দিকে বিজেপি মুখপাত্র তথা পুরীর সাংসদ সম্বিৎ পাত্র বলেন, “ওরা তো জানালা দিয়ে ওই রিপোর্ট পড়ে নিয়েছে! এগুলি নিছকই বানানো গল্প। কী প্রমাণ রয়েছে এই দাবির?” পাশাপাশি, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু ভোটার তালিকার এই পরিমার্জন নিয়ে কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিমার্জন বা সংশোধনের আগে কমিশনের উচিত ছিল স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

BJP TMC Voter Lists

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy