অতীতে কাগজের নথি দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকত না। তাই কোনও অনুসন্ধানে মূল সূত্র খুঁজে পেতে বেগ পেতে হত। এ বার ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে গরমিলের অভিযোগ উঠলে সূত্র খুঁজে পেতে মাউসের একটি ক্লিকই যথেষ্ট। বুধবার তিন দফার বৈঠকে এই বিষয়টিই ঠারেঠোরে জেলা-কর্তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া সব কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক আধিকারিককে। প্রসঙ্গত, এই বৈঠকের আগেই বিধি মেনে কাজের বার্তা জেলা-কর্তাদের দিয়েছিল কমিশন। অন্যথায় কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে—জানানো হয়েছিল তা-ও।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল ও তাঁর দফতরের অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে এ দিন তিন দফায় বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, কমিশনের তথ্যপ্রযুক্তি শাখার ডিজি সীমা খন্না, সচিব এস বি জোশী এবং উপ-সচিব অভিনব আগরওয়াল। বৈঠকে প্রত্যেক জেলার প্রাক্-এসআইআর প্রস্তুতি সবিস্তার খতিয়ে দেখা হয়েছে। জেলাশাসকেরা ছাড়াও বৈঠকে থাকা এডিএম (নির্বাচন), ওসি (নির্বাচন), এনআইসি-র আধিকারিক এবং বুথ স্তরের আধিকারিকদের (বিএলও) উদ্দেশে কমিশনের বার্তা— বকেয়া সব কাজ শেষ করতে হবে আগামী সাত দিনের মধ্যে। প্রস্তুত থাকতে হবে এসআইআর-এর বিজ্ঞপ্তির জন্য। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে নতুন প্রস্তুতির অবকাশ থাকবে না। দ্বিতীয় দফায় রাজারহাট-গোপালপুর এবং রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্রকে নিয়ে, তৃতীয় দফায় উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক এবং অন্য কর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “কোনও যোগ্য ভোটার তালিকার বাইরে থাকবেন না, এক জন অযোগ্যও হবেন না তালিকাভুক্ত—এই সার কথাটি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, গোটা প্রক্রিয়ার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট থাকায়, যে কোনও অসাধু কাজ বা ভুলভ্রান্তির সূত্র চিহ্নিত করা সহজ এখন।”
এসআইআরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিএলও-দের জন্য তৈরি হবে বিশেষ অ্যাপ। যে আবেদনপত্র ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএলও-রা সংগ্রহ করবেন, তা সেই অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল রূপ পাবে এবং কমিশনের তথ্যভান্ডারে চিরস্থায়ী ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। কী পদ্ধতিতে বিএলও-রা কাজ করবেন, তা নিয়ে বিধি-করণীয় স্থির করে দেবে কমিশন। বিএলও-দের সঙ্গে থাকবেন রাজনৈতিক দলগুলির মনোনীত বুথ লেভেল এজেন্টরাও (বিএলও)। ফলে সমন্বয় রেখে গোটা কাজ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, যে কোনও ধরনের প্রভাব এড়িয়ে প্রত্যেককে কাজ করতে বলা হয়েছে। সমস্যা হলে তা জানাতে হবে কমিশন-প্রতিনিধিদের। বস্তুত, এই বিএলও-দের রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করেই ভোটার-আবেদন অনুমোদন বা বাতিল করবেন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারেরা (ইআরও)। গোটা প্রক্রিয়ায় নজর রাখবেন এডিএম (নির্বাচন) এবং জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক।
কমিশন সূত্রের বক্তব্য, প্রাক এসআইআর পর্বে ভোটার তালিকায় ম্যাপিংয়ের কাজ সদ্য শেষ হয়েছে। এখন কমিশনের পোর্টালে তা আপলোড করার কাজ শুরু করেছেন জেলা-কর্তারা। তা দ্রুত শেষ করতে বলেছে কমিশন। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ম্যাপিংয়ের আওতায় চলতি বছরের ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০০২ সালে এসআইআরের তালিকা মিলিয়ে দেখে, সেখানে থাকা ভোটারদের নাম বা তাঁদের পারিবারিক সূত্রের মিল পাওয়া গিয়েছে প্রায় ৬৫%। বাকিদের ক্ষেত্রে যাচাইয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধার অন্যতম একটি পরিচয়পত্র হিসেবে গৃহীত হলেও, তা বৈধ কি না, সেই যাচাইয়ের এক্তিয়ার কমিশনের।
চলতি বছরের ভোটার তালিকা অনুযায়ী, এ রাজ্যে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৭.৬৪ কোটি। কমিশন সূত্রের বক্তব্য, যে আবেদনপত্র ভোটারদের পূরণ করতে হবে, তার একটি থাকবে সংশ্লিষ্টের কাছে। আর একটি সংগ্রহ করবেন বিএলও। ফলে কমবেশি ১৫ কোটি আবেদনপত্র ছাপাতে হবে। কোথায় কী ভাবে তা ছাপানো হবে, তার পরিকল্পনাও চেয়েছে কমিশন। আবেদনপত্রের নমুনা পাঠাবে দিল্লির নির্বাচন সদন। তার পরেই দ্রুত তা ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)