কলকাতা পুরভোটে অশান্তি নিয়ে করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়! তাই শনিবার দ্বিতীয় দফায় ১৮ জেলায় ৯১টি পুরসভার ভোটে বুথ জ্যাম, এজেন্ট বসতে না দেওয়া, বুথ দখল, এমনকী গুলি চলার কথা স্বীকার করে নিলেও কোনও মন্তব্যের ঝুঁকি নেননি! শুধু বললেন, ‘‘ভোট অবাধ-শান্তিপূর্ণ হয়েছে বা অশান্তিপূর্ণ হয়েছে, কিছুই বলছি না।’’
এটা যে তাঁর বিতর্ক এড়ানোর কৌশল, তা অবশ্য গোপন করেননি অবসরপ্রাপ্ত এই ডব্লিউবিসিএস অফিসার। তবে জানিয়েছেন, এ দিনের ভোটপর্বে ১০০টি অভিযোগ এসেছে কমিশনে। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘মূলত উত্তর ২৪ পরগনা, কাটোয়া, সোনামুখী, হুগলিতে গণ্ডগোল, গুলি চলা, বুথ জ্যাম, বুথ দখল, এজেন্ট বসতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে কেউ মারা গিয়েছেন কি না জানা নেই। কিছু জায়গায় বুথ জ্যাম হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকেরা রিপোর্ট দিয়েছেন।’’ রাতে নির্বাচন কমিশনার জানান, শেষ পাওয়া হিসেবে প্রায় ৮২% ভোট পড়েছে। তবে হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার রিপোর্ট মেলেনি।
যদিও তাতে বিতর্ক এড়ানো যায়নি। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মঞ্জুকুমার মজুমদার, হাফিজ আলম সৈরানির মতো বাম নেতারা কমিশনে গিয়ে তৃণমূলের তাণ্ডব নিয়ে নালিশ করেন। বুথ দখল ঠেকাতে ভিডিও রেকর্ডিং, ওয়েবক্যাম, মাইক্রো অবজারভারদের তৎপরতা— এই সবের বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ বাম নেতৃত্ব কমিশনারকে বলেন, তাঁর চেয়ারের একটা সম্মান আছে! তিনি যদি কিছুই না করেন, তা হলে আছেন কেন? বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘উনি ডব্লিউবিসিএস-দের কলঙ্ক! সম্মানবোধ থাকলে কলকাতা পুরভোটের পর দিনই পদত্যাগ করতেন।’’
তিনি কি পদত্যাগ করবেন? সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এখনই বলা সম্ভব না। সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন জরুরি কাজ হল, কোথায় কোথায় পুনর্নির্বাচন করতে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’’ যা শুনে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকারের কটাক্ষ, ‘‘জহুরি জহর চেনে! মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য রত্ন খুঁজে বের করেছেন! ইতিহাস এই কমিশনারকে মনে রাখবে!’’
ভোট যে এ দিন নিরুপদ্রব ছিল না, তা সুশান্তবাবুর দেওয়া তথ্য থেকেই পরিষ্কার। অশান্তির দীর্ঘ তালিকা দিয়ে তিনি জানান, এ দিন অন্তত ৫টি বুথে ওয়েবক্যাম ভাঙা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনায় ৫টি বুথে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র ভাঙা হয়েছে। কাটোয়ায় একটি বুথ থেকে ইভিএম ছিনতাই করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাটোয়াতেই ১৪ নম্বর বুথে গুলিতে এক জন আহত হয়েছেন। বহু জায়গায় বুথ জ্যাম করা হয়েছে। অনেক জায়গায় বোমা পড়েছে। বাঁকুড়ার সোনামুখী, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা, সোনারপুর-রাজপুর থেকে বুথ দখলের অভিযোগ এসেছে।
কলকাতার ভোটের সঙ্গে কি এ দিনের মিল পাওয়া যাচ্ছে? কমিশনারের কৌশলী জবাব, ‘‘এই বিশ্লেষণ আমি করতে পারব না। শুধু তথ্য দিচ্ছি। বিচার আপনারা করুন।’’
সুশান্তবাবুর দাবি, জেলাশাসকদের থেকে তিনি জেনেছেন, ভূমিকম্পের জন্য শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে বুথ ছেড়ে বেরিয়ে যান। কিছু ক্ষণ পরে ফিরে গিয়ে তাঁরা ভোট দেন। তাই ভোট প্রক্রিয়া বিশেষ বিঘ্নিত হয়নি।
কলকাতা পুরভোটের সময়ও তো প্রিসাইডিং অফিসার বা কোনও কোনও পর্যবেক্ষক গোলমালের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশনে পাঠানো তাঁদের রিপোর্টে তার প্রতিফলন ঘটেনি! এ বারেও কি তাই হবে? সুশান্তবাবুর দাবি, ‘‘যাতে তা না হয়, সে রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। ভারতের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুয়ায়ী নির্দেশ দিয়েছি জেলাশাসক, এসপিকে। শুক্রবার রাতেও যেখানে গণ্ডগোল হতে পারে বলে খবর এসেছিল, জেলাশাসক ও এসপিকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’
এ দিন সকাল থেকে অবাধ ভোটের দাবিতে বামফ্রন্টের রাজ্য নেতৃত্ব এন্টালি বাজারের সামনে অবস্থান শুরু করেন করেন। বেলা গড়াতেই বিভিন্ন জেলা থেকে সন্ত্রাসের খবর এলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন তাঁরা। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি এবং হাও়ড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ড তৃণমূল দখল করেছে বলে তাঁরা লিখিত অভিযোগ করেন।
বিজেপির অভিযোগ, এই দফার ভোটে এমন একটা ওয়ার্ড পাওয়া যাবে না, যেখানে রিগিং হয়নি! রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘এই ভোট নিরর্থক! আমরা এই নির্বাচনকে স্বীকারই করি না।’’ আগামিকাল, সোমবার বিজেপি ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল থেকে মিছিল করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাবে বলে রাজ্য বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy