Advertisement
E-Paper

ভয় ভুলে রাতভর সেবা হাতির

সম্বৎসর হাতির হানায় যাঁরা জমির ফসল কিংবা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে তটস্থ থাকেন, তাঁরাই মুমূর্ষু হাতির শুশ্রূষায় রাত জাগলেন। বোরো ধানে সবে হলুদ রং ধরেছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের মনে শান্তি নেই। কাছেই বছরভর ঘাঁটি গেড়ে আছে বেশ কয়েকটি হাতি। তাই বাঁকুড়ার জঙ্গল ঘেঁষা বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের মতোই বুধবার রাতে দল বেঁধে জমি পাহারা দিচ্ছিলেন বড়জোড়ার কানাই গ্রামের কিছু বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:৩৭
চলছে অসুস্থ হাতির চিকিৎসা। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

চলছে অসুস্থ হাতির চিকিৎসা। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

সম্বৎসর হাতির হানায় যাঁরা জমির ফসল কিংবা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে তটস্থ থাকেন, তাঁরাই মুমূর্ষু হাতির শুশ্রূষায় রাত জাগলেন।

বোরো ধানে সবে হলুদ রং ধরেছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের মনে শান্তি নেই। কাছেই বছরভর ঘাঁটি গেড়ে আছে বেশ কয়েকটি হাতি। তাই বাঁকুড়ার জঙ্গল ঘেঁষা বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের মতোই বুধবার রাতে দল বেঁধে জমি পাহারা দিচ্ছিলেন বড়জোড়ার কানাই গ্রামের কিছু বাসিন্দা। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ শুকনো পুকুরের পাশ থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে তাঁরা এগিয়ে টর্চের আলো ফেলে দেখেন, বেশ বড় এক দাঁতাল মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।

যে হাতির ভয়ে তাঁরা রাত জাগছেন, তারই এমন দশা দেখে কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেননি রাতপাহারা দলের সদস্য শান্তিময় লোহার, বারু বাউরি, তনু বাউরিরা। হাতিটি সম্ভবত অসুস্থ হয়ে পুকুরে জল খেতে এসেছিল। কিন্তু পুকুরে জল ছিল না। মনে একটু ধুকপুকুনি থাকলেও শান্তিময়রা কর্তব্য স্থির করতে দেরি করেননি। পাশের জমি থেকে সাবমার্সিবল পাম্প চালিয়ে পাইপে করে জল এনে হাতির শরীরে

ঢালতে থাকেন। সুখা পুকুরের কিছুটা অংশও জলে ভরে যায়। কেউ কেউ বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসে ফোন করেন। হাতিকে ওই অবস্থায় ছেড়ে তাঁদের কেউ রাতে ঘরমুখো হতে পারেননি। ভোর-রাতে বনকর্মীরা পৌঁছন। সকালে আসেন এক পশু চিকিৎসক। তিনি স্যালাইন ও ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুকুর থেকে বালতিতে জল তুলে হাতির গায়ে ঢালছেন গ্রামবাসীরা। এক বনকর্মী স্যালাইনের বোতল ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। শান্তিময় বললেন, ‘‘হাতি জমির ফসল খেয়ে, পায়ে দলে নষ্ট করে দেয়। কখন যে কাকে আছড়ে মারে, তার নিশ্চয়তাও নেই। কিন্তু চোখের সামনে হাতিকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে আমরা চুপ করে থাকতে পারিনি। রাতপাহারা ফেলে সবাই হাতিটাকে সুস্থ করে ভোর পর্যন্ত রয়ে গিয়েছিলাম।’’ হাতিটিকে পরীক্ষা করে পশু চিকিৎসক সঞ্জয় শীটের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মনে হচ্ছে অতিরিক্ত গরম ও জলাভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সানস্ট্রোকেও কাবু হয়ে যায় বছর তিরিশের হাতিটি।’’ তিনি জানান, স্যালাইন, স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ আক্ষেপ করেন, রাতে খবর পাঠানো সত্ত্বেও বনকর্মীরা আসতে দেরি করেছেন। তাঁরা কোনও চিকিৎসককেও সঙ্গে আনেননি। বড়জোড়ার রেঞ্জ অফিসার মোহন শীটের অবশ্য দাবি, ‘‘অনেক রাতে খবরটি জেনেই বনকর্মীরা

রওনা দেন। কিন্তু অন্ধকারে জায়গাটা খুঁজে পেতে সময় লাগে। তাঁরা হাতিটির প্রাথমিক অবস্থা জানাতেই সকালে চিকিৎসক পাঠানো হয়।’’

দক্ষিণবঙ্গের হাতি উপদ্রুত এলাকার একেবারে প্রথম দিকে থাকবে বড়জোড়ার নাম। প্রতি বছর দলমার দামাল কিংবা রেসিডেন্সিয়াল হাতির পালের তাণ্ডবে বাঁকুড়ার এই অঞ্চলে ফসলের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। বছর বছর বাড়ছে প্রাণহানিও। যার অনিবার্য ফল হিসাবে বাড়ছে হাতি-মানুষ সংঘাত। এই জেলারই সোনামুখী এলাকায় সম্প্রতি হাতির কবল থেকে ফসল বাঁচাতে জমির চারপাশে বিদ্যুৎবাহী তার দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন চাষিরা। সেই তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে কয়েকটি হাতির মৃত্যু পর্যন্ত হয়। বড়জোড়া, বেলিয়াতোড়েও সম্প্রতি একাধিক হাতির দেহ মিলেছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে রাতভর অসুস্থ হাতির সেবায় কানাই গ্রামের কিছু মানুষ যা করে দেখিয়েছেন, তা দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন বনকর্তারা।

elephant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy