Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নামের ফেরে গজের হামলায় বীতশ্রদ্ধ গজানন

নামে কী আসে যায়? রবিবার রাতের অভিজ্ঞতার পরে গজানন বাউরি কিন্তু বলছেন, অনেক কিছুই আসে-যায় ভায়া! এতটাই ভয়ে রয়েছেন তিনি যে, আদালতে হলফনামা দিয়ে পিতৃপ্রদত্ত নামটাই এ বার বদলে ফেলার কথা পর্যন্ত ভাবছেন !

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

নামে কী আসে যায়? রবিবার রাতের অভিজ্ঞতার পরে গজানন বাউরি কিন্তু বলছেন, অনেক কিছুই আসে-যায় ভায়া!

এতটাই ভয়ে রয়েছেন তিনি যে, আদালতে হলফনামা দিয়ে পিতৃপ্রদত্ত নামটাই এ বার বদলে ফেলার কথা পর্যন্ত ভাবছেন ! রবিবার মাঝরাতে গজ-বাহিনীর হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচার পরে তাঁর মনে হচ্ছে, যত দোষ ওই পিতৃপ্রদত্ত নামেরই। না হলে হাতির দল বেছে বেছে তাঁরই বাড়িতে হামলা চালায় কেন! সোমবার সকালে বিষ্ণুপুর থানার পাতলাপুর গ্রামে নিজের বাড়ির ভাঙা দেওয়াল দেখাতে দেখাতে গজাননবাবু বলছিলেন, ‘‘গত বছর আষাঢ় মাসে মেয়ের বিয়ের ঠিক আগের দিন অনুষ্ঠানের জন্য আনা সমস্ত জিনিসপত্র সাবাড় করে আমাকে পথে বসিয়েছিল হাতির দল। বরযাত্রী আপ্যায়নের জন্য রাখা একটা কাঁঠালও আস্ত রাখেনি।’’

বছর ঘুরে ফের শ্রাবণে তাদের হামলা। ‘‘তা হলে আমার নামের সঙ্গে ওদের নামের মিলই কি কাল হল?”—হতাশা গজাননবাবুর গলায়।

একটা-দু’টো নয়, রবিবার রাতে এক সঙ্গে ৯টি হাতি হানা দিয়েছিল পাতলাপুরে। গজাননবাবুর কথায়, “ছেলে কার্তিককে নিয়ে শুয়েছিলাম একটা ঘরে। মাঝরাতে ভেঙে পড়ল দেয়াল। ঘুম ভাঙতে দেখি, দু’টো দাঁতাল দেওয়াল ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছে। বিপদ বুঝে দু’জনেই উল্টো দিকের হুড়কো খুলে ছুট লাগালাম ভাইপোর বাড়ির দিকে। পাশের ঘরে শুয়েছিল স্ত্রী, মেয়ে ও নাতনি। ওদের বেরোতে বারণ করি।’’ এর পরে ভাইপো ও ছেলেকে নিয়ে পাড়ার লোকেদের জাগিয়ে গজাননবাবু শুরু করেন হাতি তাড়ানো। গ্রামবাসীর চিৎকার ও থালা-বাসন পেটানোর আওয়াজে শেষ অবধি খানিক বিরক্ত হয়েই গ্রাম ছাড়ে হাতিরা।

এ দিন বাবার পাশেই মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন কার্তিক। বললেন, “গত বার আত্মীয়-পড়শিরা মিলে বোনের বিয়েটা পার করে দিয়েছিল। এ বার কী হবে? জ্যাঠার ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। কত দিন এ ভাবে চলবে?’’ বাবা-ছেলে দু’জনেই দিনমজুরি করে সংসার চালান। আগের ক্ষতির ধার এখনও মেটেনি। গজাননবাবুর ভাইপো শিবু বাউরির ক্ষোভ, গত বার অত বড় ক্ষতির পরে বন দফতর মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল জ্যাঠাকে। এ বার খবর পাঠানোর পরেও তারা দেখতে আসেনি। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব বাউরি বলেন, “বারবার হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই পরিবার। বন দফতরকে দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে বলেছি।’’

গ্রামবাসীরা জানান, এলাকায় বিদ্যুতের তারের বেড়ার কাজ চলছে। এখনও পাতলাপুরের দিকের কাজ হয়নি। সেই সুযোগে গজাননবাবুর বাড়ি ভেঙে তাঁকে ঘরছাড়া করেছে হাতির পাল। বন দফতরের রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিক অলোক আচার্য বলেন, “জয়পুর থেকে দ্বারকেশ্বর নদ পেরিয়ে হাতিরা ওই গ্রামের উপর দিয়ে রাধানগর বনাঞ্চলে ঢোকে। তা ঠেকাতেই বিদ্যুতের তারের বেড়ার কাজ চলছে। পাতলাপুরের সবটায় এখনও বেড়া বসেনি।’’ তিনি জানান, গজাননবাবুর বাড়িতে বিট অফিসারকে পাঠিয়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নেওয়া হবে। সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে।

গজাননবাবুর কিন্তু ভয়, ফের হাতির দল তাঁর বাড়িকেই ‘টার্গেট’ করবে কি না। তাঁর কথায়, “আমাদের পরিবারের সবাই গণেশ ঠাকুরের ভক্ত। তাই বাবা-ঠাকুরদা আদর করে নাম রেখেছিলেন গজানন। তাই কি বারবার আমার বাড়িতে গজ-বাহিনীর হামলা? অনেকে ভেবেও কূল পাচ্ছি না। গতবার তো ঠাকুর পুজোও দিয়েছি। তার পরেও এই অবস্থা।’’

নামে তাই অনেক কিছুই আসে যায়, বলছেন গজানন বাউরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant village Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE