মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে সারা রাজ্যের যাবতীয় সেতু পরিদর্শন, নিরীক্ষণ এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল পূর্ত দফতর। ফেব্রুয়ারিতে সমীক্ষা সেরে নতুন অর্থবর্ষে মেরামতি শুরু করার কথা ভেবেছিল নবান্ন। কিন্তু পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা রাজ্যের চার ভাগের এক ভাগ সেতুও ফ্রেব্রুয়ারিতে পরিদর্শন করে উঠতে পারেননি। তাতে প্রায় শতাধিক ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্তসচিব অর্ণব রায়। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দফতরের অন্দরে।
পূর্চসচিব ৯ এপ্রিল পূর্ত দফতরের দুই চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে লিখেছেন, রাজ্যে এখন ১৭৪৯টি ছোট-বড় সেতু রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সেগুলোর পরিদর্শন শেষে তাদের ‘স্বাস্থ্য’ সম্পর্কে জানানোর কথা ছিল। পূর্ত দফতরের নির্দিষ্ট পোর্টালে সব সেতুর ছবি-সহ সবিস্তার পরিদর্শন রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ৪০৭টি
সেতুর রিপোর্ট এসেছে। বাকি ১৩৪২টি সেতু কী অবস্থায় রয়েছে, পূর্ত দফতর তা জানে না। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনায়ারদের তরফে কেন এমন গাফিলতি হল, ব্যাখ্যা চাওয়া হোক তাঁদের কাছে। দুই চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে পূর্তসচিবের নির্দেশ, এপ্রিলের শেষে রিপোর্ট দিয়ে জানানো হোক, কোন ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন পূর্তকর্তারা। কারণ, সেতু পরীক্ষার দায়িত্ব মূলত এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং তার নীচের স্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের। নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, ১৩৪২টি সেতুর পরিদর্শন না-হওয়ায় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে যদি ব্যবস্থা নিতে হয়, তা হলে এই মুহূর্তে শতাধিক ইঞ্জিনিয়ারের মাথায় শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে। যদি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়, সে-ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন বিষয়টিকে সহজ ভাবে নেবে না বলেও আভাস দেওয়া হয়েছে।
জেলা স্তরের পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের যুক্তি, ফেব্রুয়ারি-মার্চে অর্থবর্ষ শেষের কাজকর্ম শেষ করার তাগিদ থাকে। বকেয়া কাজ সেরে ফেলতে না-পারলে টাকা ফেরত চলে যেতে পারে। তাই ইঞ্জিনিয়ারেরা তাতেই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন। এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভোটের নানা কাজকর্ম। সেই জন্য সেতু পরীক্ষার কাজে ঢিলেমি হয়েছে। দফতরের শীর্ষ কর্তাদের তা বুঝতে হবে বলে জানাচ্ছেন জেলার ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ।
যদিও পূর্ত দফতরের বক্তব্য, মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বছরে চার বার সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। প্রয়োজন হলে দ্রুততার সঙ্গে সেই সেতু সারানোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। কিন্তু যদি পরীক্ষার কাজেই এমন ঢিলেমি হয়, তা হলে শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। পূর্ত দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে দেওয়া হয়েছে। একটি সেতু ভাঙলে বহু প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। ফলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের। গড়িমসি হলে কঠোর পদক্ষেপই একমাত্র পথ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy