এক ধরনের কাজে নিয়োগ করলে বেতনও দিতে হবে সমহারে। সরকারি দফতর ও সংস্থায় নিযুক্ত অসংখ্য অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মচারীদের স্বস্তি দিয়ে এমনই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই কাজের জন্য বেতনে কোনও বৈষম্য থাকলে তাকে ‘শোষণমূলক দাস-ব্যবস্থা’ বলেও বর্ণনা করেছে সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চ। এই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করার দাবিতে সরব হয়েছে বামেরা।
গত কয়েক বছর ধরে বাৎসরিক যে সাধারণ ধর্মঘট বাম-সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি ডেকে আসছে, তার অন্যতম দাবিই ছিল সমহারে সমবেতন। কিন্তু সরকার কোনও কালেই এই দাবিতে সম্মত হয়নি। বরং, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্থায়ী বা ঠিকার ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ বেড়ে গিয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনের লড়াইয়ে এখনও যে দাবি আদায় সম্ভব হয়নি, তা-ই শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছে আইনি লড়াইয়ে। হরিয়ানার এক শ্রমিকের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে বিচারপতি জে এস খেহর এবং বিচারপতি এস এ বব্দের বেঞ্চ রায় দিয়েছে, সমবেতনের নীতি দেশের সংবিধানেই স্বীকৃত। কোনও কর্মী স্থায়ী না অস্থায়ী, তার উপরে তাঁর মজুরি বা বেতন নির্ধারিত হতে পারে না। একই কাজ করিয়েও অন্যদের চেয়ে কম বেতন দেওয়া শুধু সমবেতনের নীতির পরিপন্থীই নয়, মানুষ হিসাবেও তাঁর মর্যাদাহানি। সংবিধানের ১৪১ ধারা এবং নানা সময়ে আদালতের বিভিন্ন রায় বিবেচনায় রেখে সমবেতনের নীতি থেকে সরে আসার কোনও পথ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে বিচারপতি খেহরের বেঞ্চ।
এমন রায় হাতে পাওয়ার পরেই আসরে নেমেছে সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, ‘‘সব ধরনের কর্মীদের জন্য সমকাজে সমবেতন দিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে সরকারকে।’’ তাঁর মতে, ‘‘সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় ঐতিহাসিক। স্থায়ী হোন বা অস্থায়ী, কর্মীদের জন্য সমবেতনের সাংবিধানিক অধিকারকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এই নির্দেশ।’’ আদালতের এই রায় যে সব সরকার মানতে বাধ্য, এ রাজ্যে তা নিয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু। আগামী ১৭ নভেম্বর তাদের পূর্বঘোষিত সমাবেশের আগে রাজ্য জু়ড়ে হোর্ডিং-ফ্লেক্স, প্রচারপত্র দিয়ে কর্মীদের এই অধিকারের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘‘ভূমি কাঁপানো রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই নিয়ে ধর্মঘট হয়েছে, ভারতীয় শ্রম সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সরকার মানেনি। এখন এই নির্দেশ না মানলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হবে সরকারকে।’’ সিটু নেতৃত্বের আশা, সরকারি স্তরে এই নির্দেশ কার্যকর হলে তার প্রভাব বেসরকারি ক্ষেত্রেও এসে পড়বে। বেসরকারি শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে মামলাও হবে।
এ রাজ্যেও এখন অস্থায়ী ও ঠিকা কর্মচারীর সংখ্যা বিপুল। এমনকী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ফের নিয়োগ করা হচ্ছে এককালীন ভাতার বিনিময়ে। যা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে নানা সংগঠন। একই রকম কাজ করে ঠিকা বা অস্থায়ী শ্রমিকেরা যে স্থায়ী শ্রমিকদের সমহারে বেতন কাঠামো পাচ্ছেন না, সুপ্রিম কোর্টের রায় মানলে তা আর চলবে না। খরচের ভারও বাড়বে সরকারের।
রাজ্য সরকার অবশ্য প্রাথমিক ভাবে মনে করছে, শ্রম আইনের আওতায় সকলে পড়ে না। ফলে, এক কথায় এই নির্দেশ কার্যকর করা নিয়ে কোনও আশ্বাস দেওয়া যাবে না। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, ‘‘আদালতের রায় না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy