Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Sagar Island

Sagar Island: পাড় ভাঙছে গঙ্গাসাগরের, কপিল মুনির প্রাচীন মন্দিরের পর সঙ্কটে নতুন মন্দিরও

প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে ১০০-২০০ ফুট এলাকা সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে গঙ্গাসাগরের ভাঙন ঠেকাতে নড়েচড়ে বসে সরকার।

কপিলমন্দিরের অদূরেই ভাঙছে পাড়। নিজস্ব চিত্র

কপিলমন্দিরের অদূরেই ভাঙছে পাড়। নিজস্ব চিত্র

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৭
Share: Save:

গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির প্রাচীন মন্দিরটিকে অনেক আগেই গ্রাস করেছে সমুদ্র। নতুন মন্দিরটির ভবিতব্যও কি তা-ই? প্রশ্ন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। কারণ, গঙ্গাসাগরে অহর্নিশ পাড় ভাঙার শব্দ। থেকে থেকেই ভাঙনের ভয়ঙ্কর হুঙ্কার আসছে সাগরের কাছ থেকে।

সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমাধান হয়নি। ফলে নতুন করে পাড় ভাঙছে গঙ্গাসাগরে। সঙ্কটে পড়েছে কপিলমুনির এখনকার মন্দির। ভাঙন রুখতে না-পারলে সেখানকার সরকারি সুদৃশ্য কাঠের বাংলোটির অস্তিত্বও সঙ্কটে পড়তে পারে। ভাঙন রোধে পরিকল্পনা চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। এখনও সেই পরিকল্পনা রূপায়ণ করা গেল না কেন, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে প্রশাসনের অন্দরেই। গঙ্গাসাগরের সমস্যাপ্রবণ প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ কূল বরাবর সারিবদ্ধ ভাবে নারকেল গাছ পুঁতেছিল প্রশাসন। তারও একাংশ সম্প্রতি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এই ঘটনা প্রশাসনের শঙ্কা বাড়িয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে ১০০-২০০ ফুট এলাকা সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে গঙ্গাসাগরের ভাঙন ঠেকাতে নড়েচড়ে বসে সরকার। গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্যদ এবং রাজ্যের পুর দফতর যৌথ ভাবে এই নিয়ে কাজ শুরু করে। ম্যাকিন্টোজ় বার্ন সংস্থাকেও ক্ষয় আকটানোর পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে বলা হয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে পরামর্শের পরে চেন্নাই আইআইটি-র দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সমুদ্রের ভাঙন থেকে কী ভাবে সমতলকে রক্ষা করা যায়, চেন্নাই আইআইটি-র সেই অভিজ্ঞতা আছে। অতীতে তারা দক্ষিণ ভারতের কুদামকুলামে সমুদ্রপাড়ে ভাঙন রোধের কাজ করেছিল। গঙ্গাসাগরের ভাঙন-সমস্যার মোকাবিলা কী ভাবে করা যাবে, তার ‘ডিপিআর’ বা সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে চেন্নাই আইআইটি। বন্দর-কর্তৃপক্ষও সংশ্লিষ্ট ভাঙনপ্রবণ এলাকার সমীক্ষায় সহযোগিতা করেছে রাজ্যের সঙ্গে। জলের তলার মাটি কী ভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, সেই রিপোর্টও প্রস্তুত। তবে এখনও কাজ শুরু করা যায়নি।

প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কপিলমুনির আদি মন্দিরটি কয়েক দশক আগেই সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। নতুন করে যে-ভাবে আবার পাড় ভেঙে চলেছে, তাতে বর্তমান মন্দিরটিও সঙ্কটে রয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভাঙন রোধের জন্য রাজ্যের পরিবেশ দফতর এবং কেন্দ্রের ‘কোস্টাল রেগুলেশন জ়োন’ ছাড়পত্র দরকার। বাকি সব রকম প্রস্তুতি থাকলেও ওই ছাড়পত্রের অভাবেই এই কাজ এখনও শুরু করা যাচ্ছে না। ছাড়পত্রের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি রাজ্যের পরিবেশ দফতর। তবে উল্লিখিত সময়ে পরিবেশ দফতরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র (এখন সেচমন্ত্রী) বলেন, “নির্দিষ্ট ছাড়পত্রের কথা এখনই মনে করে বলা সম্ভব নয়। তবে আমার সময়ে কোনও কাজ বকেয়া থাকত না।”

বিধায়ক হিসেবে এই গঙ্গাসাগরের ভাঙন-সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বর্তমানে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসনিক অনুমোদন-সহ সবই প্রস্তুত। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে সিআরজ়েড অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দিন আগে সংসদীয় একটি প্রতিনিধিদলও পরিস্থিতি দেখে গিয়েছে।” বঙ্কিমবাবুর বক্তব্য, রাজ্যের পরিবেশ দফতর প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিয়েছে। কেন্দ্রের ছাড়পত্র পেলেই কাজ শুরু করা সম্ভব।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, পরপর দু’টি ঘূর্ণিঝড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে সিআরজ়েড ছাড়পত্র এসে গেলে তা পরিবেশ দফতরে পাঠানো হবে। তার পরে অর্থ মঞ্জুর হয়ে গেলে কাজ শুরু করতে দেরি হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sagar Island ganga sagar Bank Erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE