Advertisement
০১ মে ২০২৪

এভারেস্ট দিবসে তেনজিংকে ভারতরত্নের দাবি

এভারেস্ট জয়ের দিনে তেনজিং নোরগেকে ভারতরত্ন দেওয়ার জোরাল দাবি উঠল। রবিবার দার্জিলিঙে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সস্টিটিউট এবং চৌরাস্তায় এই দিনটি পালনের জন্য যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে ওই দাবি উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

এভারেস্ট জয়ের দিনে তেনজিং নোরগেকে ভারতরত্ন দেওয়ার জোরাল দাবি উঠল। রবিবার দার্জিলিঙে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সস্টিটিউট এবং চৌরাস্তায় এই দিনটি পালনের জন্য যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে ওই দাবি উঠেছে। জন্মদিনের দিনেই এভারেস্টে পা রেখেছিলেন তেনজিং। প্রথম এভারেস্ট জয়ের দিনের সঙ্গে তাই পালিত হয়ে আসছে তাঁর জন্মদিনও। এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে মৃত এক অভিযাত্রীর দেহ এ দিনই উদ্ধার হয়েছে। এ বছর এভারেস্ট-সহ অন্যান্য পর্বতাভিযানে পর্বতারোহীদের মৃত্যু এবং নিখোঁজের একাধিক ঘটনায় বিষাদের ছোঁয়া লেগেছে এভারেস্ট দিবস উদযাপনেও।

দ্য ইউনাইটেড শেরপা অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি পি টি শেরপা বলেন, ‘‘২০১২ সাল থেকে তেনজিংকে ভারতরত্ন দেওয়ার এই দাবি তোলা হচ্ছে। শুধু পাহাড়ের মানুষ বলে নয়, এভারেস্টে ওঠার যে সাফল্য তিনি করে দেখিয়েছেন তার জন্য সারা বিশ্ব তাঁকে চেনে। দেশকে তিনি গর্বিত করেছেন।’’ এইচএমআই কর্তৃপক্ষ এবং ইউনাইটেড শেরপা অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। চৌরাস্তায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জিটিএ-র তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ এবং শেরপা সংগঠন। জিটিএ-র তথ্য এবং সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘তেনজিং শেরপা শুধু দার্জিলিং বা পাহাড়ের গর্ব নয়, দেশের গর্ব। তার জন্য তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি উঠেছে। দার্জিলিঙের সাংসদ অতীতে সংসদেও একই দাবি তুলেছেন। জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও ওই দাবির বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। বিভিন্ন সংগঠনগুলির তরফেই এ বার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবির বিষয়টি লেখা উচিত।’’

এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং দু’জনেই এক সঙ্গে এভারেস্টে উঠেছিলেন। ১৯৫৩ সালে ২৯ মে এভারেস্ট জয়ের পর এইচএমআই প্রতিষ্ঠিত হয়। তেনজিং ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ফিল্ড ডিরেক্টর এবং আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উপদেষ্টা। দেশে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, পদ্মভূষণ, বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জর্জ অ্যাওয়ার্ড, এলিজাবেথের করোনেশন মেডেল-সহ বিভিন্ন সম্মান পেয়েছেন। তেনজিং পুত্র জামলিং-ও এভারেস্টে উঠেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবা প্রথম এভারেস্টে উঠেছিলেন বলে সারা বিশ্ব তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর এই কৃতিত্বে দেশের নাম সারা বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল হয়েছে।’’

শেরপা অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অন্য দাবির মধ্যে বাগডোগরা বিমানবন্দর এবং এইচএমআই তেনজিং নোরগের নামে করতে জানানো হয়েছে। এই দিনটি রাজ্য সরকারের তরফে ছুটি ঘোষণার দাবিও উঠেছে। দাবি জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক এভারেস্ট দিবস হিসাবে দিনটি পালন করার। এইচএমআইয়ের ডিরেক্টর গুলসন চাড্ডা বলেন, ‘‘এই প্রতিষ্ঠানের তরফে আমরাও চাই তেনজিং নোরগেকে ভারতরত্ন দেওয়া হোক। অতীতে বিষয়টি আমাদের তরফেও সরকারের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল।’’ গুলসন চাড্ডা বলেন, ‘‘এভারেস্টে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। তার জন্য অভিযান বন্ধ করতে হবে, এমন নয়। বরং তেনজিং নোরগের জীবন থেকে পর্বতারোহীদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। এভারেস্ট জয়ের আগে তিনি সাত বার ওই অভিযানে গিয়েছিলেন। তার পর জয় করেছেন। টাকা থাকলেই কোনও এজেন্সিকে ধরে অভিযানে নামলেই হবে, এই ধারণা ঠিক নয়। ধৈর্যের এই শিক্ষা তেনজিং নোরগের জীবন থেকে নেওয়া দরকার।’’

এ দিন চৌরাস্তার অনুষ্ঠানে কুশাং শেরপা, লাটু দর্জি, নিমা নরবু শেরপা, জামলিং নোরগের মতো এভারেস্ট জয়ীদের সংবর্ধনা জানানো হয়। দার্জিলিঙের দুই তরুণী ত্রিশলা গুরুঙ্গ এবং সুলক্ষণা তামাঙ্গ সম্প্রতি এভারেস্টে ওঠেন। তাঁদের পরিবারকেও এ দিন সংবর্ধনা জানানো হয়। মলরোডে এভারেস্ট জয়ী নবাং গম্বুর মূর্তি স্থাপনের কথাও জানানো হয়।

অন্য দিকে এ দিন এভারেস্ট দিবসের নানা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সাহু দম্পতি। কিন্তু অসুস্থ স্ত্রী চেতনা সাহু যেতে পারছেন না। তাই প্রদীপবাবুও কোথাও যাননি। শিলিগুড়ির নার্সিংহোমেই স্ত্রীর পাশে বসেই কাটিয়েছেন দিনটি। নার্সিংহোমেই সদ্য এভারেস্ট জয়ী ওই দম্পতি এই দিনটি কাটালেন পাহাড় জয়ের নিজেদের সেই অভিযানের স্মৃতিচারণ করেই। ঘুরে ফিরে মনে পড়ছে যে বিপদে পড়েছিলেন চেতনা সাহু। শেষ পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করতে পেরেছেন প্রদীপবাবু ও দুই শেরপা। চেতনাদেবীর দুই হাতের আঙুলগুলিতে তুষার ক্ষত প্রতি মূহূর্তেই মনে করিয়ে দিচ্ছে অভিযানের নানা কথা। মনে করিয়ে দিচ্ছে পরিচিত পর্বতারোহীদের মুখগুলি। যাঁদের হারাতে হয়েছে। শৃঙ্গ জয়ের আনন্দের মধ্যেও তাই লুকিয়ে রয়েছে বেদনা।

প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এই অবস্থায় কোথাও যেতে মন চাইছে না। চেতনা বারবার করে গৌতমের (গৌতম ঘোষ) কথা বলছে। আমাদের ভীষণ কাছের মানুষ ছিল। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াত রয়েছে। তাই মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে। চেতনা সুস্থ হলেই ফিরে গৌতমের বাড়িতে যেতে হবে। চেতনা আজও সে কথা বলেছে। খবরে দেখলাম এদিন আর এক পর্বতারোহীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’’

হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর উদ্যোগে এই দিনটি পালন করতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সকালে শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ে তেনজিং নোরগের মূর্তির পাদদেশে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুপুরে ন্যাফের অফিসে ছিল রক্ত দান শিবির। বিকেলে শিলিগুড়ির সূর্য সেন পার্কে ক্লাইম্বিং ওয়ালে চড়ার প্রশিক্ষণে তরুণ, তরুণীদের উৎসাহ দিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল চেতনা দেবী, প্রদীপবাবুদের। নার্সিংহোমে ভর্তি চেতনাদেবীর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই চেতনাদেবীকে ছেড়ে ওই আনন্দের শরিক হতে চাননি প্রদীপবাবুও। তিনিও তাই এ দিন কোনও অনুষ্ঠানে যাননি। প্রদীপবাবুর দাদা রমেশ সা্হু বলেন, ‘‘নার্সিংহোমেই এ দিন ভাই বেশি সময় কাটিয়েছেন। অধিকাংশ সময় স্ত্রীর পাশে বসে কথা বলছেন। কোনও অনুষ্ঠানে যাননি। চেতনাকে ছেড়ে যেতেও চাইছেন না।’’

ন্যাফের তরফে প্রদীপ নাগ বলেন, ‘‘আসলে চেতনা দেবী অসুস্থ। নার্সিংহোমে ভর্তি। তিনি কোথাও যেতে পারছেন না। এই পরিস্থিতির জন্য প্রদীপবাবুও অনুষ্ঠানে আসতে চাননি। স্ত্রী চেতনাদেবীকে ছেড়ে একা সংবর্ধনা নিতে তাঁরও মন চাইছে না। আমরা দ্রুত চেতনার আরোগ্য কামনা করছি।’’ এর আগের দিন তাঁদের এভারেস্ট জয়ের অপর সঙ্গী দেবরাজ দত্ত ফেরার পথে শিলিগুড়িতে পৌঁছলে সকলকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল ন্যাফের তরফে। কিন্তু চেতনাদেবীকে ছেড়ে তখনও সংবর্ধনা নিতে আসতে চাইছিলেন না প্রদীপবাবু। তবু বারবার বলায় তিনি শেষে গিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য যাননি।

এ দিন সকালে দার্জিলিং মোড়ে ‘এভারেস্ট ডে’ পালনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিএসপি ইন্দ্র চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি শেরপা ওয়েলফেয়ার সেন্টারের প্রতিনিধিরা, শালুগাড়ার শেরপা সংগঠনের প্রতিনিধি, এসজেডিএ’র আধিকারিক, ন্যাফের সদস্যরা। সম্প্রতি এভারেস্ট অভিযানে অনেকের মৃত্যু হওয়ায় এ বার এই দিনটিতেও বিষাদের ছায়া ফেলে রেখেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান অতিথি ইন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযানে কঠোরতার মধ্যেও আনন্দ রয়েছে। অজানাকে জয় করার জন্য উদ্যোগীরা কতটা চেষ্টা করলেন তাদের সাফল্য সেই বার্তা দিচ্ছে। তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি এভারেস্টে উঠে শিখর জয়ের নেই স্বপ্নের একটা নতুন দিক খুলে দিয়েছেন।’’ শেরপা সংগঠনের প্রতিনিধি শিরিং শেরপা জানান, এভারেস্টের মতো পর্বতাভিযানে অভিজ্ঞ শেরপাদের পরামর্শ নিয়ে চলা উচিত। তাঁদের সঙ্গে রাখা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tenzing bharatratna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE