Advertisement
E-Paper

‘তোমাকে মেরে মাওবাদীদের কী লাভ হল?’

ছত্তীসগঢ়ের দন্তেওয়াড়ায় মাওবাদী হামলায় নিহত সিআইএসএফ জওয়ান দীনাঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের একমাত্র ছেলে দেবজিৎ। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টে নাগাদ কলকাতার গার্ডেনরিচের সিআইএসএফ দফতর থেকে বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফোন আসার পর থেকে মায়ের পাশেই ছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১১
শ্রদ্ধা: মাওবাদী হামলায় নিহত জওয়ানকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। বর্ধমানের ইছলাবাদে । নিজস্ব চিত্র

শ্রদ্ধা: মাওবাদী হামলায় নিহত জওয়ানকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। বর্ধমানের ইছলাবাদে । নিজস্ব চিত্র

বাবার দেহ তখনও বর্ধমানে এসে পৌঁছয়নি। ঘরে এক কোণে চুপ করে বসেছিল বছর সতেরোর কিশোর। কথা বলতে গেলেই একটাই প্রশ্ন তাঁর, “মানুষ মেরে কী লাভ হয় মাওবাদীদের? খুন করে কী কোনও উন্নতি হয়?’’

ছত্তীসগঢ়ের দন্তেওয়াড়ায় মাওবাদী হামলায় নিহত সিআইএসএফ জওয়ান দীনাঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের একমাত্র ছেলে দেবজিৎ। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টে নাগাদ কলকাতার গার্ডেনরিচের সিআইএসএফ দফতর থেকে বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফোন আসার পর থেকে মায়ের পাশেই ছিল সে। কিন্তু শুক্রবার বর্ধমান শহরের ৩ নম্বর ইছালাবাদ ঘোষ পাড়ায় বাবার কফিনবন্দি দেহ আসার পরে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র। সবার সামনেই সে বলে ওঠে, ‘‘টিভিতে-কাগজে মাওবাদীদের হিংস্র কার্যকলাপ নিয়ে খবর দেখতাম, পড়তাম। বাবা দন্তেওয়াড়ায় যাওয়ার পরেও কোনও ভয় লাগেনি। খালি মনে হত, আমার বাবা সাহসী। বাবা ভাল মানুষ। তাঁর কোনও ক্ষতি মাওবাদীরা করবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার বাবাকেও মাওবাদীরা খুন করল! সারা রাত ধরে এটাই ভাবছি, মাওবাদীদের কী লাভ হল?’’

বাড়ির সামনে রাস্তায় তিল ধারণের জায়গা নেই। কোনও রকম দীনাঙ্করবাবুর কফিনবন্দি দেহ বাড়ির সামনে রাখেন সিআইএসএফের কর্মীরা। কফিন সিল করা ছিল। কিন্তু লাল টি-শার্ট, নীল প্যান্ট পরা দেবজিৎ কফিনের উপর জড়ানো জাতীয় পতাকায় হাত দিয়েই বাবাকে শেষ বারের মতো দেখার ইচ্ছে জানায়। সিআইএসএফ-এর তরফে জানানো হয়, সিল করা কফিন খোলা যাবে না। অঝোরে কাঁদতে থাকা দেবজিৎ চিৎকার করে ওঠে, ‘‘খোল দিজিয়ে। পাপা কা চেহরা দেখনা হ্যায়’’। ছেলের কান্না দেখে, নিহতের স্ত্রী মিতাদেবীও কফিন খোলার জন্য কাতর অনুরোধ করেন। এরপরেই হাতুড়ি-শাবল দিয়ে সিল ভাঙা হয় কফিনের।

বাবার মুখের কাছে হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে দেবজিৎ। বলতে শোনা যায়, ‘‘তোমাকে মেরে মাওবাদীদের কী লাভ হল জানি না। আমাদের তো সব গেল।’’ কিছুক্ষণ পরে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ইছালাবাদের ইউথ ক্লাবের মাঠে। সেখানেই ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দেবজিৎ বলে, ‘‘বাবার কাছে আমাকে কোনও কিছু চাইতে হয়নি। বাবা সময় প্রয়োজন বুঝে জিনিস এনে দিয়েছেন। বাবা ছুটিতে এলেই বাইরে খেতে যেতাম। কত আনন্দ করতাম!’’

তুমি কী ভবিষ্যতে বাবার মতই জওয়ান হতে চাও? কিছুক্ষণ চুপ থেকে দেবজিৎ বলে ওঠে, “না। বাবা আমায় কখনও কিছুতে জোর করেননি। আমি ইঞ্জিনিয়র হব।’’

Death Murder Maoist Head Constable CISF
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy