Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Crime

জাকির-হামলায় বিস্মিত সব মহল

বিস্ফোরণের পরে রক্তাক্ত প্ল্যাটফর্ম

বিস্ফোরণের পরে রক্তাক্ত প্ল্যাটফর্ম

বিমান হাজরা
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৩
Share: Save:

রাজনীতিতে উত্থান মাত্র পাঁচ বছরের। প্রথমবার জিতেই রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেন। মুর্শিদাবাদের মানুষ জাকিরকে চিনতেন বিড়ি মালিক হিসেবেই। ক্রমান্বয়ে বিড়ি শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত জাকির হোসেন বর্তমানে সর্ষের তেল, চাল কল, ডাল মিল ছাড়াও অন্তত ১০টি বিএড, বেসিক ও পলিটেকনিক সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

অরঙ্গাবাদের বাসিন্দা জেলার প্রথম সারির শিল্পপতি জাকির হোসেনের যথেষ্ট প্রভাবও রয়েছে এলাকায়। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ কাজ করেন তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলিতে। এক সময় কংগ্রেস সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের খুব কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন জাকির। তাঁর একাধিক প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনও করেছেন প্রণববাবু নিজেই। স্বাভাবিক ভাবেই তার হঠাৎ তৃণমূলে যোগদানের ঘোষণায় সে সময় জেলা রাজনীতিতে যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। কংগ্রেস মহলও কিছুটা হতবাক হয়। তবে মূলত প্রয়াত সাংসদ মান্নান হোসেনই জাকিরকে তৃণমূলে আনার প্রধান কারিগর। বিধানসভায় জঙ্গিপুরের তখন প্রার্থীর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন মান্নান হোসেন। ঠিক তখনই তাঁর নজর পড়ে জাকিরের উপর। ২০১৫ সালের অগস্টে তৎকালীন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই জাকির যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৬ সালে বিধানসভায় দলের প্রার্থী হয়ে জয় এবং মন্ত্রিত্ব।

জনসংযোগে জাকির বরাবরই প্রথম সারিতে। তার বহু কল কারখানা থেকে আয়ও যেমন আছে, তেমনই দান ধ্যানও কম নেই। মেয়ের বিয়ে থেকে শ্রাদ্ধ, অকাতরে মানুষের পাশে থেকেছেন জাকির। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সেই ভূমিকা কিছুটা রাজনীতি নির্ভর হয়ে অন্য মাত্রা পেয়েছে। তৃণমূলের রাজনীতিতে বিড়ি মালিক হিসেবে শ্রমমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় বার বার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জাকিরকে। তবু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের মত বিষিয়ে যায়নি কখনও।

বরং নিজের দলের নেতাদের বিষ নজরেই তাঁকে বারবার পড়তে হয়েছে। কখনও প্রকাশ্য সভায় তাঁকে অসম্মানজনক ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে বক্তৃতা দিতে। প্রকাশ্য রাস্তায় জাকিরের বিরুদ্ধে মিছিল বের করেছেন দলেরই একাংশের ইন্ধনে। গরু পাচার নিয়ে সরব হয়ে অনেকেরই শত্রুতা বাড়িয়েছেন। ঠিকাদারি ব্যবসায় ক্ষেত্র বিশেষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অরঙ্গাবাদের বাসিন্দা হলেও সেখানেও নিজের দলের মধ্যে পদে পদে তাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হয়েছে। এ সব দেখে শুনে পরিবার থেকেও চাপ এসেছে রাজনীতি থেকে সরে আসার জন্য। কিন্তু ম্যানেজ করে চলার চেষ্টা করেছেন। বছর দুই আগে জঙ্গিপুরে তৃণমূলের মধ্যেও যথেষ্ট কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। দলের গোষ্ঠী রাজনীতিকে সামাল দিয়ে এখন অনেকটাই আবার দলের মধ্যে কর্তৃত্ব ফিরে পাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বিস্ফোরণে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা হতে পারে তা কল্পনাতেও আনতে পারছেন না অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Violence Crime Jakir hossain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE