Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘সব ঠিক আছে’ বলেই ঘরে ঢুকলেন সারজিনারা

‘সব ঠিক আছে!’, ‘স্পর্শকাতর’ চরকায় এসে এই কথাই শুনলেন ডিএম, এসপি। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে রবিবার কেশপুরের চরকায় যান পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর। স্থানীয় বাসিন্দাদের তাঁরা প্রশ্ন করেন, কেউ ভয় দেখাচ্ছে? এলাকায় ভয়ভীতি আছে? উত্তর এসেছে গড়পড়তা সেই একই, ‘না, তেমন কিছু নেই!’

পাশে থাকার বার্তা। চরকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। রবিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

পাশে থাকার বার্তা। চরকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। রবিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বরুণ দে
চরকা (কেশপুর) শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

‘সব ঠিক আছে!’, ‘স্পর্শকাতর’ চরকায় এসে এই কথাই শুনলেন ডিএম, এসপি।

ভোটারদের আশ্বস্ত করতে রবিবার কেশপুরের চরকায় যান পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর। স্থানীয় বাসিন্দাদের তাঁরা প্রশ্ন করেন, কেউ ভয় দেখাচ্ছে? এলাকায় ভয়ভীতি আছে? উত্তর এসেছে গড়পড়তা সেই একই, ‘না, তেমন কিছু নেই!’ পুলিশ- প্রশাসনের কর্তাদের অবশ্য পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধে হয়নি। এলাকা ছাড়ার আগে এক পুলিশ কর্তা বলেও ফেললেন, “যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে!” এক গৃহবধূকে ওই কর্তা পরামর্শ দেন, “নির্ভয়ে ভোট দেবেন। এখানে আধাসেনা থাকবে। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। অসুবিধে হলে ওদের (আধাসেনা) বলবেন। আমাদেরও বলবেন।”

রবিবার সকাল সওয়া এগারোটা নাগাদ এসে পৌঁছন ডিএম- এসপি। সকাল সকাল ধুলো উড়িয়ে গ্রামের রাস্তায় পেল্লাই গাড়ি দেখে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে শেখ আজাহার, শেখ সামসুল হক। জেলাশাসক তাঁদের প্রশ্ন করেন, ‘‘ভোটার কার্ড আছে? হারিয়ে যায়নি তো?’ উত্তর আসে, ‘‘না হারিয়ে যায়নি। বাড়িতেই আছে।’’ পুলিশ সুপার জানতে চান, ‘‘ভোট কবে জানা আছে?’’ উত্তরে তাঁরা জানায়, ‘আমাদের ভোট তো ১১ তারিখ’। এরপরেই তাঁরা জানতে চান, ‘কেউ ভয় দেখাচ্ছে? এলাকায় ভয়ভীতি আছে?’ প্রশ্ন শুনে একে অপরের দিকে দেখলেন আজাহার, সামসুলরা। পরে জবাব আসে, ‘না, তেমন কিছু নেই!’

জবাব শুনে এগোতে থাকেন ডিএম- এসপি। মহিলাদের সামনে বসে থাকতে দেখে ঢুঁ মারেন এক বাড়িতে। মুহুর্তে বাড়ির মধ্যে সেঁধিয়ে যান সারজিনা বিবি, রেকসনা বিবি, মসলেম বিবিরা। অভয় দেন জেলাশাসক। বলেন, “সামনে আসুন না। কিছু কথা জিজ্ঞাসা করব’। পরে একের পর এক প্রশ্নের জবাবে সারজিনা, রেকসনারাও জানিয়ে দেন, তাঁদের ভোটার কার্ড আছে। এলাকার প্রাথমিক স্কুলের বুথেই তাঁরা ভোট দিতে যান। এও জানিয়ে দেন, সব ঠিক আছে। এলাকায় কোনও গোলমাল নেই!

এ দিন পথচলতি কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেন জেলাশাসক। অবশ্য বেশির ভাগ মানুষই তেমন ভাবে মুখ খুলতে চাননি। পুলিশ- প্রশাসনের ‘বাঁধাধরা’ প্রশ্নের উত্তরও এসেছে সেই ‘ধরাবাঁধা’! চরকার এক বাসিন্দা বলছিলেন, “জেলার কর্তারা তো আর সবদিন আসবেন না! নেতারা এলাকায় সব দিন থাকবেন! তাই সব কথা ওঁদের কাছে বলাও ঠিক নয়!”

পুলিশের এক সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে কেশপুরের যে ৫২টি এলাকা ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে, তারমধ্যে রয়েছে চরকাও। জেলা পুলিশের এক কর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘স্পর্শকাতর’ এলাকার তালিকায় চরকার নাম থাকবে এটা স্বাভাবিক। কারণ, গত পঞ্চায়েত ভোট, লোকসভা ভোটের সময়ও এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে। বিধানসভা ভোটের আগে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করতেই এ দিন কেশপুরে যান পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা।

পুলিশ- প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পেয়ে কিছু বলতে গিয়েছিলেন শেখ নাসিরউদ্দিনরা। স্বেচ্ছায় নাসিরুদ্দিনদের এগিয়ে যেতে দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ রেজ্জাক আলিরা। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত রেজ্জাক বলছিলেন, “সকলের কথা বলার কী আছে! সেই তো একই উত্তরই দিতে হবে!” সিপিএমের দাবি, অবাধ ভোট হলে না কি তারাই জিতবে? হাসলেন রেজ্জাক। এই তৃণমূল কর্মীর কথায়, “আমরা তো চাইছি অবাধ ভোট হোক। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিন। মানুষ ভোট দিতে পারলেই তৃণমূল জিতবে।”

রেজ্জাক মানলেন, সিপিএমের কয়েকজন নেতা এলাকাছাড়া ছিলেন। এখন এলাকায় আধাসেনার টহল শুরু হয়েছে। এই সুযোগে ঘরছাড়া নেতারা ফের ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তৃণমূলের কাছে এটাই এখন আশঙ্কার! কেন? ঘরছাড়া সিপিএমের লোকেরা এলাকায় ফিরলে অসুবিধার কি আছে? চরকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আবু জাফর খান বলছেন, “ওরা তো এলাকায় এসে সেই খুনের রাজনীতি শুরু করবে!”

সম্ভবত তাই এলাকাছাড়ার আগে আধাসেনার এক কর্তাকে ডেকে জেলাশাসক পরামর্শ দেন, “এলাকার দিকে নজর রাখবেন। ভোটটা যে ১১ তারিখ রুট মার্চের সময় স্থানীয় মানুষদের তাও জানিয়ে দেবেন।” ততক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে সাদা গাড়িগুলোর সামনে। গাড়িতে ওঠার আগে ভিড়ের দিকে তাকিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, “আজ এসে সব দেখে গেলাম। সম্ভব হলে আবার আসব।” যা শুনে ইয়াসিন আলিরা বলছিলেন, “এলাকায় আধাসেনা থাকলে ভরসা কিছুটা বাড়ে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

everything is alright voters keshpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE