কালীপুজো আর দেওয়ালিতে তবু কিছুটা সংযম ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ভাইফোঁটার রাতে তা-ও উধাও। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেদার ফাটলো শব্দবাজি। আর তার জেরে এই দিন গভীর রাতে কলকাতার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল।
কলকাতার উপকণ্ঠে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যন্ত্রে বাতাসে শ্বাসযোগ্য ধূলিকণা (যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢোকে) যে পরিমাণে ধরা পড়েছে, তা ভাবাচ্ছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। একই সঙ্গে চিন্তিত বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞেরাও। গত মঙ্গলবার ও বুধবার রাতের কলকাতার বাতাস বিশ্লেষণ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যন্ত্র দেখেছে, মঙ্গলবার রাত দুটো এবং তিনটের সময়ে বাতাসে শ্বাসযোগ্য ধূলিকণার পরিমাণ ছিল সহন ক্ষমতার তিনগুণ এবং দ্বিগুণ। বুধবার বাতাসে ভাসমান শ্বাসযোগ্য ধূলিকণার পরিমাণ ছিল অনেক কম।
মঙ্গলবার রাত দুটোয় বাতাসে শ্বাসযোগ্য ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘন মিটারে ৩০৪ মাইক্রোগ্রাম। বুধবার ওই সময়ে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল ১৮১ মাইক্রোগ্রাম। মঙ্গলবার রাত দুটোয় বাতাসে শ্বাসযোগ্য ভাসমান ধূলিকণা ছিল ২৫৮ মাইক্রোগ্রাম। বুধবার ওই সময়ে যা ছিল ১৩৯ মাইক্রোগ্রাম।
শারীরবিজ্ঞানীরা জানান, বাতাসে শ্বাসযোগ্য ধূলিকণার (যা সরাসরি বায়ুথলি এবং শ্বাসনালীর মধ্যে ঢুকে পড়ে) সহন ক্ষমতা প্রতি ঘন মিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। ১০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ধূলিকণা এক বার শ্বাসযন্ত্রে ঢুকলে তা শ্বাসনালী এবং বায়ুথলির পর্দায় জমে আলাদা আস্তরণ বানায়। ফলে শ্বাসনালী এবং বায়ুথলির বায়ুধারণ ক্ষমতা যেমন কমে, তেমনই অনেক সময় শ্বাসযোগ্য ধূলিকণায় যে সব রাসায়নিক পদার্থ থাকে, সেগুলি বায়ুথলি বা শ্বাসনালীর কোষের ক্ষতি করে।
এক শারীরবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘বাজির ধোঁয়ায় যে সব রাসায়নিক থাকে, সেগুলির মধ্যে অনেকগুলি আবার কার্সেনোজেনিক। অর্থাৎ ওই সব রাসায়নিক অতিরিক্ত পরিমাণে ফুসফুস বা শ্বাসনালীতে জমলে ভবিষ্যতে ক্যানসার হতে পারে।’’
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সব বাজি তৈরি করতেই লাগে গন্ধক। আর বাজি ফাটলেই বাতাসে মিশে যায় গন্ধকের অক্সাইড বা সালফার ডাই-অক্সাইডের কণা। বেশি বাজি ফাটলে বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে। অতিরিক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড জমা হলে প্রথমে শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির আশঙ্কা থাকে। বাজির সঙ্গে নির্গত হয় কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডও। কার্বন মনোক্সাইড রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষক্রিয়া তৈরি করে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের অক্সাইডও শ্বাসযন্ত্রের পক্ষে খারাপ বলে জানান শারীরবিজ্ঞানীরা।
বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘প্রতি বছরের মতো এ বারও দেওয়ালির পরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেরই বুকে সংক্রমণ হয়েছে। বয়স্ক এবং বাচ্চারা এই সমস্যায় বেশি ভুগছেন। যাঁরা ফুসফুসের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ। পোড়া বাজি থেকে যে গন্ধ বেরোয়, তা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ওই পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে শ্বাসকষ্ট বাড়ায়।’’