ওরা নাবালক। পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভিন্-রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আটক হয়েছে খবর পেয়ে উথালপাথাল শুরু হয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে। ভিন-রাজ্যে আটক হওয়া এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ শনিবার ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু যাঁরা ছাড়া পাননি, চিন্তা বাড়ছে তাঁদের নিয়ে। অব্যাহত রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
হরিয়ানার ফরিদাবাদে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার পুলিশের হাতে দিন চারেক আগে দুই নাবালক-সহ আটক হন হরিশ্চন্দ্রপুরের রাঙাইপুরের সাত জন। দুই নাবালকেরই বয়স সতেরোর কাছাকাছি। তাদের এক জনের বাবা অসুস্থ। কাজ করার অবস্থা নেই। বাড়িতে মা এবং ছোট দুই ভাই রয়েছে। রোজগারের আশায় পড়শিদের সঙ্গে শ্রমিক হিসাবে খাটতে হরিয়ানায় গিয়েছিল ছেলেটি। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ছেলে আটক হওয়ার খবর পেয়ে তাঁর মা বার বার অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন।
অন্য নাবালকের পরিবারের ছবিটাও খুব আলাদা নয়। তাঁর দাদু বলেন, ‘‘আমার ছেলেও অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারে না। তাই নাতি কাজে হরিয়ানায় গিয়েছিল। এখন শুনছি, ওকে পুলিশ আটকে রেখেছে। কী করব, বুঝতে পারছি না!’’ আটক হওয়া শ্রমিকদের অন্যতম উসমান আলি ফোনে বলেন, ‘‘পুলিশ বুধবার আমাদের তুলে এনেছে নথি যাচাইয়ের কথা বলে। দিনে দু’বার দুটো রুটি, সামান্য ভাত ও ডাল খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। আমাদের কিছুই বলা হচ্ছে না। কবে ছাড়বে জানি না!”
জানা যাচ্ছে না রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে সে রাজ্যের পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পরে যে যুবককে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই আমির শেখেরই বা কী হল! মালদহের কালিয়াচকের আমিরের কোনও খবর না মেলায় এ দিন দুপুরে তাঁর পরিবার কালিয়াচক-১ ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ হালদারের সঙ্গে দেখা করে। আমিরের কাকা মহম্মদ আজমল শেখ বলেন, “প্রশাসন জানার পরে তিন দিন কেটেছে। এখনও ভাইপোর হদিস পাচ্ছি না। বাংলাদেশে কী অবস্থায় আছে, কবে ও ঘরে ফিরবে বুঝতে পারছি না!” মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার অবশ্য দাবি,“পরিবারগুলিকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।”
হরিয়ানার পানিপথেও উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের ২৩ জন শ্রমিক সেখানকার পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন বলে অভিযোগ। উদ্বিগ্ন আত্মীয়দের তরফে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, আটকদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য হরিয়ানায় দ্রুত পাঠাতে। ব্লক প্রশাসনের সহায়তায় এ দিন তেমন কিছু নথি পাঠানো হয়েছে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা ছাড়া পেয়েছেন। নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার সুপার অমরনাথ কে এ দিন জানান, ওড়িশায় ৪৮ জন, ছত্তীসগঢ়ে ন’জন, হরিয়ানায় ৫১ জন এবং মহারাষ্ট্রে তিন জন— সব মিলিয়ে সে জেলার ১১১ জন পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে আটক হয়েছিলেন। সকলে ছাড়া পেয়েছেন। গুরুগ্রামে কাজ করতে গিয়ে আটক দক্ষিণ দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৫ জন শ্রমিককে ছাড়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সামিরুল ইসলামের দাবি, ‘‘শ্রমমন্ত্রকের কাছে আমরা পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে তথ্য চেয়েছি। তারা কিছু জানাতে পারেনি। আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। চাপে পড়ে বড় অংশের শ্রমিককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেককে এখনও আটকে রাখা হয়েছে।’’ উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এখানে কাজের ব্যবস্থা করুক। ভিন্-রাজ্যে পরিযায়ীদের যাতে হেনস্থা হতে না হয়, সরকার তাতে সহায়তা করুক।’’ তবে দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ইশা খান চৌধুরী বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল রাজনীতি করছে। ভুগছেন মানুষ।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)